খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিন কমে গেছে : ড্যাব
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিন কমে গেছে বলে জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ড্যাবের শীর্ষ নেতারা এ কথা জানান।
ড্যাব নেতারা জানান, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি লিভারের মারাত্মক জটিলতাসহ কয়েকটি জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় তার রক্তের হিমোগ্লোবিন কমেছে। বাংলাদেশের যত চিকিৎসা প্রযুক্তি আছে, তার জন্য সব প্রয়োগ করা হয়েছে। এখন তাকে পূর্ণ সুস্থ করতে হলে অনতিবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো জরুরি।
বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের এই সংগঠনের নেতারা আরও অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতারা যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছেন, তা সরকারেরই বক্তব্য।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ সেলিম, ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. শহীদ হাসান, ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. মো. মেহেদী হাসান, ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমানউল্লাহ, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. খালেকুজ্জামান দীপু, ডা. নিলুফা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড্যাবের দপ্তর সম্পাদক ডা. ফখরুজ্জামান ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া করোনাপরবর্তী জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রিউমোটয়েড আর্থ্রাইটিস, লিভার, কিডনি ও হার্টের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানিয়েছেন এবং তার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য কিছু সুপারিশ করেছেন।
ডা. সালাম আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্যের পর চিকিৎসক সমাজসহ বাংলাদেশের মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন। মেডিকেল বোর্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা আর বাংলাদেশে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তার বিদেশে সুচিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী বলেছেন, খালেদা জিয়া বহুদিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। তার লিভারের সমস্যার কথা বিবেচনা নিয়েই ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন রাতে খুবই রক্ত বমি হয়। তার খাদ্যনালিতে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে জীবন রক্ষার উদ্দেশে দ্রুত রক্ত ও প্লাজমা ফ্লুইড দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দ্রুত এন্ডোসকোপির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয় এবং ৬টি জায়গায় ব্যান্ড লাইগেশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সে মুহুর্তে তিনি শক এ চলে গিয়েছিলেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে সেই যাত্রায় জীবন রক্ষা পায়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস ও হার্ট ফেইলিউরের রোগী। উনার হার্ট ফেইলিউর এমন পর্যায়ে থাকে যে, কোনো ডিকম্পেসেশন হলে হার্ট ফেইলিউর হয়। তবু দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টার ফলে পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়।
ডা. সিদ্দিকী আরও বলেন, এসব রোগীর পুনরায় রক্তক্ষরণ হওয়ার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক (প্রথম সপ্তাহে শতকরা ৫০ ভাগ এবং ৬ সপ্তাহের মধ্যে যা শতকরা ৭০ ভাগ)। পরে ফের রক্তক্ষরণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য আমাদের দেশে যে প্রযুক্তি আছে তা ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব আধুনিক পদ্ধতি আমাদের দেশে নেই, এমনকি উপমহাদেশের বা এশিয়ার অন্য কোনো দেশেও নেই৷ এই প্রযুক্তিটি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সুনির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাকে উল্লিখিত দেশের উন্নত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা পরে স্থানান্তর করাও মুশকিল হয়ে যাবে।
ডা. সালাম বলেন, খালেদা জিয়া রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পুনঃপ্রবর্তন করেন। তার পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। অথচ আমরা বেদনাহত হৃদয়ে লক্ষ্য করছি— একজন নাগরিকের পছন্দমতো চিকিৎসা নেওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে তিনি ক্রমাগতভাবে বঞ্চিত। মিথ্যা সাজানো মামলার রায়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ায় আজ ভয়াবহ শারীরিক জটিলতায় উপনীত।
‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব’- বিএমএ নেতাদের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সমাজকে বিভক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ। খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)