তালার পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন
সেলিম হায়দার : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদ অববাহিকার পাখিমারা বিলে সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত জোয়ারাধার (টিআরএম) কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে তালা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে উক্ত সাংবাদিক সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বালিয়া এলাকার পাখিমারা বিল কমিটির সদস্য গোলদার আশরাফুল হক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর যাবত তালা উপজেলার খেশরা, জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে সরকার কর্তৃক টিআরএম বা জোয়ারাধার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। উক্ত বিলের আয়তন ১৫৬২ একর এবং প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বিলের উপর নির্ভরশীল। বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে “কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প” নামে পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। এর ফলে কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ১৫ লক্ষ অধিবাসী প্রত্যক্ষভাবে এবং প্রায় ৪০ লক্ষ অধিবাসী পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। এলাকার প্রধান উৎপাদন সেক্টর কৃষিক্ষেত্রেও ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, যোগাযোগ সহ এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রাণ ফিরে এসেছে। ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত এলাকায় জলাবদ্ধতার প্রশমন ঘটেছে। এলাকার নদী সমূহ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা মোকাবেলা, ভূমি গঠণ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় টিআরএম কর্মসূচী অনন্য অবদান রেখেছে। কিন্তু পাখিমারা বিল অধিবাসীদের ভোগান্তি ও অবর্ননীয় দুঃখ কষ্টের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল টিআরএম চলাকালীন সময় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। বিলে ৬ বছর টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলেও ক্ষতিপূরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ বছর। প্রকল্পে অনুমোদিত ক্ষতিপূরণের হার প্রতি বছর একর প্রতি ৪২,৬৯৬ টাকা। এই হিসাবে ৬ বছরে পাওনা টাকার পরিমাণ ৪০ কোটি ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯১২ টাকা, কিন্তু জনগণ পেয়েছে ১০ কোটি ১২ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৬৪ টাকা, সরকারের কাছে বকেয়া পাওনা ২৯ কোটি ৮৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ১৪৮ টাকা। প্রকল্পের আওতায় অধিকৃত বিলের চারিপাশে ২০১১-১২ অর্থবছরে কাজ শুরু করে ২০১৩-১৪ সালে ১২.৮৭ কি.মি. পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়। সে কারণে পেরিফেরিয়াল বাঁধের জমির মালিকদের ১০ বছরের ক্ষতিপূরণ পাওনা হলেও তাদেরকে মাত্র ২ বছরের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। বেসিনের মধ্যে অনেক জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি। তাছাড়া সংযোগ খাল খননের জন্য ১০.২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই জমির মালিকরা কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি, ৩৫টি পরিবার বাস্তুচ্যুত হলেও তাদের পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থ্ ানেওয়া হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের কপোতাক্ষ অববাহিকার অধিকাংশ এলাকা দীর্ঘদিন যাবত জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত ছিল। পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়িত হওয়ায় এসব এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্ত আমাদের ভোগান্তি সীমাহীন। টিআরএম চলাকালীন সময়ে আমরা কোন ফসল উৎপাদন করতে পারিনি, পেরিফেরিয়াল বাঁধ ভেঙ্গে গ্রাম এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জীবন ধারণের প্রয়োজনে আমাদের অধিকাংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে, অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। তাই অতিদ্রুত বাস্তবায়িত টিআরএম কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)