নড়াইলের কৃষকরা বর্ষা মৌসুম পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না
নড়াইলের কৃষকরা বর্ষা মৌসুম পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। নড়াইলের কৃষকরা পানির অভাবে পাট নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন। এ এলাকার কৃষকরা পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। এখন বর্ষা মৌসুম তবুও ভারী বৃষ্টির দেখা নেই নড়াইলের তিনটি উপজেলায় কৃষকরা বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমিতে গাঁদি সাজিয়ে রেখেছেন।
এবার জেলার সদর লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার খাল, বিল ও জলাশয়ে তেমন পানি নেই। এলাকার কৃষকরা বলছেন খাল, বিল ও জলাশয়ে যে পানি আছে তা পাট পঁচানোর জন্য যথেষ্ট নয়।এদিকে পাট রোদে পুড়ে মরে লালচে হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতেই। তাই উপায় না পেয়ে অপরিস্কার অল্প পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে পানি পঁচে পাটের রঙ কালো হযে যাচ্ছে। এই কালো পাট বাজারে নিয়ে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন না।
এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাটবীজ জমিতে বোনা হয় মার্চ মাসের শেষদিকে। আর জুন মাসের শেষদিকে জমির পাট কাটা শুরু হয়। এই পাট কেটে জমি পরিস্কার করে জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো হয়। উপজেলার যে সব নিচু এলাকা ও খাল-বিল রয়েছে সেখানে বৃষ্টির পানিতে ভোরে গেলে পাট জাগ দেওয়া হয়। এ বছর জুলাই মাস শেষ হতে চললেও তেমন কোন ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। খাল-বিলেও তেমন পানি নেই। তাই পানির অভাবে কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। প্রচন্ড রোদের তাপে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতেই।
সদর উপজেলার শেখহাটি গ্রামের কৃষক রাজু শেখ বলেন, আমি এক একর জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে পাট কেটে এখন বিপাকে পড়েছি। পানির অভাবে পাট পচানোর জায়গা নেই। তাই সড়কের পাশে ফেলে রেখেছি।
কালিয়া উপজেলার চোরখালি গ্রামের জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বছরগুলোতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এ বছর বৃষ্টি নেই। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। প্রচণ্ড রোদে কাটা পাট শুকিয়ে যাচ্ছে।
লোহাগড়া উপজেলার মরিচ পাশা গ্রামের মো. গোলজার মৃধা বলেন, এ বছর আমি ১৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি।আমার পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছি না। মো. গোলজার মৃধার মতো উপজেলার অধিকাংশ পাট চাষিদের একই অবস্থা।
ওই এলাকার কৃষকরা গত বছর পাটের দাম বেশি পাওয়ায় এ বছর পাট চাষে ঝুঁকে পড়েন। পাট চাষ নিরাপদে হলেও এখন কৃষকরা পাট কাটা ও জাগ দেওয়া নিয়ে মহা বিপদে আছেন। কৃষকরা পাট কাটতে না পারায় আমন চাষ পিছেয়ে যাচ্ছে। আমন চাষ পিছিয়ে গেলে রবিশস্য চাষও পিছিয়ে যাবে এমনটাই বলছেন লোহাগড়া উপজেলা কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ জানায়, এ জেলায় ২২ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমিতে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪১০ বেল পাট উৎপাদনের সম্ভাবনা বয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৯০৩ বেল পাট।
লোহাগড়া উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮২ বেল পাট। কালিয়া উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৭২৫ বেল পাট।
কৃষিস্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দীপক কুমার রায় বলেন, এ বছর পাট নিয়ে কৃষকরা মহা বিপদে আছেন। পাট কেটেই জমিতে আমনের চাষ করা হয়।তাই সময় মতো পাট কাটতে না পারলে আমন চাষ ব্যাহত হতে পারে। এজন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি দেরি না করে অল্প পানিতেই পাট জাগ দিযে পাটের ওপরে পলিথিন বিছিয়ে মাটি ও বালির বস্তা এবং ভারি কোন জিনিস দিয়ে পাট পানির নিচে ডুবিয়ে দিতে হবে। এছাড়া কৃষকদের কোনো উপায় নেই।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)