নড়াইলে এক বিদ্যালয়ে ৩২ বছর এক প্রধান শিক্ষক!


নড়াইলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজোকিও চেয়ারে ৩২ বছর! আনোয়ারুল ইসলাম হাবিব নামে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নড়াইলের কাশিপুর ইউনিয়নের ১৩৫ নম্বর শালবরাত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম হাবিবের অপসারণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার দাবি করে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম টুকু ও আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি আইয়ুব হোসেন ফকির, বর্তমান সদস্য আব্দুল অহেদ শেখ, আম্বিয়া বেগম, আলিম শেখ, ইয়ার শেখ ও অভিভাবক মফিজ শেখসহ অনেকের স্বাক্ষরে এ অভিযোগটি করা হয়।
এতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, দায়িত্বে অবহেলা, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ গঠনে অনিয়ম, কোচিং বাণিজ্য, ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়ম, অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, উপবৃত্তি ও সরকারি অনুদান আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, শালবরাত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম হাবিব নিজের ইচ্ছামতো সব কিছু পরিচালনা করে দিন দিন লেখাপড়ার মান নামিয়ে ফেলছেন।
তাদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। ঠিকমতো ক্লাসও নেন না। বিদ্যালয়ের পাশেই প্রধান শিক্ষকের বাড়ি হওয়ার সুবাদে তিনি বেশিরভাগ সময় বাড়ির কাজ ও নিজের গড়া ‘স্বাদ প্রিক্যাডেট স্কুল ও কোচিং সেন্টার’ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আইনি চোখ এড়াতে মেয়ে টিকলির নামে চলে ওই কোচিং সেন্টার।
প্রশ্ন ফাঁসের কারণে কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীরা বরাবরই অন্যদের থেকে ভালো ফল অর্জন করে থাকে। ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে ওই কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাতে অধিক আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন।
এছাড়া বিদ্যালয় চলাকালীন তাকে লোহাগড়া উপজেলা ও জেলা সদরসহ স্কুল থেকে ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি ও দোকানে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা পাঁচ। প্রধান শিক্ষক প্রায়ই অনুপস্থিত থাকায় অন্য শিক্ষকরা অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে ক্লাস পরিচালনা করেন।।
এলাকাবাসী আগেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। জনপ্রতিনিধিরা একাধিক শালিস বৈঠক করে জরিমানাও আদায় করেন। অভিযুক্ত শিক্ষককে উপজেলার বিচ্ছিন্ন এলাকায় বদলি করা হবে বলে অভিযোগকারীদের আশ্বস্ত করেছিলেন লোহাগড়া উপজেলার তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তার বদলি না হওয়ায় তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
তিনি তার সকল অপকর্ম ঢাকতে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করে সাজানো একটি ‘পকেট কমিটি’ গঠন করেছেন। সেখানেও অনিয়ম। আত্মীয়-স্বজন ও নিজস্ব লোকজন দিয়ে গঠন করেছেন ’স্কুল পরিচালনা পর্ষদ’।
কাগজে-কলমে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকলেও মূলত তিনি নিজেসহ তার মেয়ে টিকলি খাতুন, আপন ভাই আকছির শেখসহ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন দিয়ে চলছে স্কুলটি। সভাপতি করা হয়েছে দূরের গ্রামের এক হাইস্কুলের শিক্ষিকাকে। আর সহ-সভাপতি করা হয়েছে নিজের মেয়ে টিকলি খাতুনকে। সভাপতির অবর্তমানে টিকলির স্বাক্ষরে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত লুটপাট করার জন্যই তিনি তৈরি করেছেন একটি পকেট কমিটি।
বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করে সরকার। কর্তাদের তিনি ‘ম্যানেজ’ করে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৩২ বছর রয়েছেন এক চেয়ারে।
এ বিষয়ে কাশিপুর ইউপি সদস্য আব্দুল অহেদ শেখ বলেন, ‘সরকারি বিধি অনুযায়ী আমাকে স্কুল কমিটিতে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোনো বিষয়ে আমাকে জানান না। আর সরকার যে কেন তাকে এক স্কুলে ৩২ বছর রেখেছে, বদলি হয় না, এটা আমার বোধগম্য নয়। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।’
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম হাবিব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সবই ষড়যন্ত্র।’
এই বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুজ্জামান খান প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান। এই বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলছেন তিনি।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
