নড়াইলে ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে কোটি টাকার গাছ লোপাট
নড়াইলে-যশোর সড়কের দুপাশে লাগানো সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে লাগানো গাছ
কেটেছেন তুলারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ বুলবুল আহম্মেদ।
কখনো দিনে কখনো রাতে, কখনো ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে। সবক্ষেত্রেই বঞ্চিত হচ্ছেন গাছের প্রকৃত মালিক উপকারভোগীরা।
স্থানীয় প্রশাসন আর বনবিভাগের যোগসাজসে সড়কের পাশের কোটি টাকা গাছের নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে অর্থ লোপাট হয়ে যাচ্ছে।
নড়াইল-যশোর সড়কের পাশে তুলারামপুর মাইজপাড়া ১০ কিলোমিটার জেলা সড়ক। সড়কটি
বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় হলেও এর পূর্ববর্তী মালিকানা ছিলো এলজিইডি। নড়াইল-যশোর সড়কের তুলারামপুর ইউপি অংশের সাড়ে ৫ কি.মি সরকারী খাস জমির উপর লাগানো ১ হাজার গাছের অধিকাংশই নিজেদের ইচ্ছামতো কেটে নিয়ে গেছেন প্রভাবশালীরা। সর্বশেষ ৩৭১ টি বড় গাছের ভুয়া টেন্ডার তৈরী করে তা কাটা শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় কোটি টাকা দামের এসব গাছ
মাত্র ১৩ লক্ষ টাকায় টেন্ডার ধরে অর্থ লোপাটের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৭ দিনে প্রায় ২’শ গাছ কাটার পরে জেলা প্রশাসনের নজরে আসলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়। নিয়ম বহির্ভূত এসকল টেন্ডারের অভিযোগ তুলারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.বুলবুল আহমেদ এর বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানায়, সড়কের পাশে থাকা প্রায় ৫’শ টি বড় মেহগিনি, কড়াই, শিশু গাছ এর প্রতিটির মূল্য ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে ২৫ হাজার টাকা গড় মূল্য ধরলে গাছের দাম পড়ে প্রায় কোটি টাকা। অথচ বনবিভাগের সাথে যোগসাজসে ৩৭১টি গাছের মোট দাম ধরা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৬৩ হাজার গড়ে প্রতিটি
সাড়ে ৩ হাজার টাকা। মাস খানেক আগে ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ বাক্সে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
তুলারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.বুলবুল আহমেদ এর দাবী, গত দুই বছর ধরে এই সকল গাছ বনবিভাগ এর মাধ্যমে মার্কিং করা হয়। এরপর গাছের মূল্য নির্ধারন করে দেয় বনবিভাগ। এরপর যশোর সামাজিক বনবিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঘুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে টেন্ডারের অনুমোদন দেয়। আমাদের অভিযোগ বাক্স তে স্থানীয় গনমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
তুলারামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে তুলারামপুর মাইজপাড়া সড়কের সাড়ে ৫ কিলোমিটার অংশে ১ হাজার গাছ রোপন করা হয়। এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদ, কেয়ার বাংলাদেশের পক্ষে গন সাহায্য সংস্থা এবং উপকারভোগীদের নিয়ে একটি চুক্তিনামা করা হয়।
সেই চুক্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ ৪০ ভাগ, উপকারভোগী ও জায়গার মালিক ৫০ ভাগ এবং এনজিও পাবে ১০ ভাগ। এই চুক্তি সামাজিক বনায়নের নিয়ম বহির্ভূত হলেও চুক্তিতে থাকা এনজিও ও উপকারভোগীদের কোন তথ্য না
দিয়েই চেয়ারম্যান নিজের খেয়ালখুশী মতো অর্থ লোপাটের আশায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই গাছ কাটা শুরু করেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিমের বলেন, এলজিইডির সাথে একটি চুক্তির ভিত্তিতে আমরা বনবিভাগের সাথে উপজেলা পর্যায়ে সভা করি। সড়ক বিভাগের একটি পত্রের ভিত্তিতে উপজেলা পর্যায়ে সভা হলেও জেলা পর্যায়ে সভা
হয়নি। তবে, চেয়ারম্যান আমাকে না জানিয়েই টেন্ডার করেছেন। এখন ডিসি স্যার যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই হবে। ১৯৯৮ সালে তুলারামপুর-মাইজপাড়া সড়কের সাড়ে ৫ কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে সামাজিক বনায়নের আওতায় এক হাজার গাছ লাগানো হয়। ২২ বছরে প্রতিটি গাছের
মূল্য ২০ থেকে ৫০ হাজার হলেও বনবিভাগ গড়ে দাম ধরেছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
এই মূল্যে হতবাক গাছ সংরক্ষনকারী,যাদের গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পাবার কথা।
মালিডাঙ্গা গ্রামের সড়কের জমির মালিক মিজানুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান গাছ কেটে বিক্রি করেছে অথচ আমরা বছরের পর বছর ধরে গাছ দেখাশুনা করলাম কোন খবর দিলোনা, সাংবাদিক আসার পর গাছ কাটা বন্ধ হয়ে গেছে।
নিজের জমিতে প্রায় ২০ টি গাছ দেখাশোনা করেছেন মন্নু বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আমার জমিতে ২০টির মতো গাছ ছিলো একেকটি ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার
পর্যন্ত। একটি টাকাতো পেলামই না এখন শুনছি গাছ বিক্রি করেছে পানির দামে।
অভিযোগ আছে নানা প্রক্রিয়ায় গাছের কম মূল্য নির্ধারন করে ইউপি চেয়ারম্যানকে অর্থ লোপাটের সুযোগ করে দিয়েছে স্থানীয় বন বিভাগ। এই হিসেব ঐ বিভাগের কর্মকর্তারা ও অর্থিক লাভবান হয়েছেন। কম মূল্য ধরে চেয়ারম্যানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তারা।
নড়াইল বন বিভাগের ফরেস্টার এস কে আব্দুর রশীদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মানুষ বন বিভাগের নাম শুনলেই কেমন করে ওঠে,কিন্তু আমরা যে ধরনের গাছ পেয়েছি সেই মূল্য ধরেছি। বাজারের দামের চেয়ে সরকারী মূল্য অনেক কম তাই কম ধরা হয়েছে।
এদিকে, রাস্তার জমির মালিকানা রাজস্ব বিভাগের বলে দাবী করে জেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়। চুক্তি এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ন বেআইনী দাবী জেলা প্রশাসনের।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা জানান, সরকারী খাস জমিতে গাছ কাটা হচ্ছে
এই অভিযোগ পাবার পরে গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কের এই জায়গা জেলা প্রশাসনের, সুতরাং আমাকে বাদ দিয়ে কোন চুক্তি থাকতে পারে না, এটা নিয়ে আমরা মামলা করবো।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)