ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা!
হেলাল উদ্দিন, মনিরামপুর : ভবদহ অঞ্চলের চারটি উপজেলাতে বছরে ধান চাষ হয় একবার। তাই জীবন ও জীবিকার তাগিদে এ অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ছোট বড় হাজার হাজার মৎস্য ঘের।
যেখানে কোটি কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হয়। মাত্র দু দিনের ভারীরবর্ষণে এ সকল মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে । ইতিমধ্যে চাষীরা ঘেরের পাড়ে নেটপাটা দিয়ে ঘের রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থাতে চরম হতাশায় দিন পার করছেন মৎস্য চাষীরা।
জানা গেছে, ২৭ টি বিলের পানি নিষ্কাশিত হয় ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইচগেট হয়ে শ্রী ও হরি নদী দিয়ে। কিন্তু গত ১১টি বছর টিআরএম চালু না থাকায় নদী দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। সেচের মাধ্যমে সারা বছর যে পানি নিষ্কাশন করা হয় তা খুবই সামান্য।
ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের জন্য যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের ভবদহ নামকস্থানে শ্রী নদীর উপর ২১ ভেন্ট, ৯ ভেন্ট ও ৬ ভেন্টের নির্মিত স্লুইসগেট জায়ান্ট পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল। তবে সমায়ের ব্যবধানে নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভবদহকে যশোরের দুঃখ বলা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ২১ গেটের উপর ১৩ টি এবং ৯ গেটের উপর ৫টি মোটরপাম্প বসানো আছে, সাথে আরো ৪ টি পাওয়ার পাম্প। তবে সচল আছে মাত্র ৩ টি পাওয়ার পাম্প ও ৪ টি মোটর। যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর, সদর উপজেলা, খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া মুক্তেশ্বরী-টেকা-শ্রী-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী দিয়ে বেষ্টিত। যশোর টাউনসহ এ অঞ্চলে বৃষ্টির পানি ও উজানের পানি উল্লেখিত নদী সিস্টেম ও এর সাথে সংযুক্ত খালের মাধ্যমে ভাটিতে নিষ্কাশিত হয়।
মুক্তেশ্বরী-টেকা- শ্রী-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী সিস্টেম দুটি কেশবপুর উপজেলার কাশিমপুরে মিলিত হয়েছে এবং মিলিত প্রবাহ ভদ্রা-তেলিগাতী-গ্যাংরাইল নামে শিপসা নদীতে পতিত হয়েছে। মুক্তেশ্বী-টেকা-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা এবং এর সাথে সংযুক্ত খাল গুলোর মাধ্যমে অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও যশোর সদরের (অংশিক) প্রায় ৫৩টি ছোট বড় বিলের পানি নিষ্কাশিত হয়। সমুদ্রের নোনা পানি প্রতিরোধে এবং কৃষিযোগ্য মিঠাপানি ধরে রাখার জন্য ষাটের দশকে হরি-টেকা–শ্রী নদীর অভয়নগর উপজেলার ভবদহ নামক স্থানে ২১ ভেন্ট স্লুইস নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে আশির দশক পর্যন্ত ভবদহ স্লুইসগেটের সুফল ভালভাবে পাওয়া যায়।
সত্তরের দশকের পর হতে এই অঞ্চলে নদীগুলোর মূল উৎস্য প্রবাহ পদ্মা হতে বিছিন্ন হওয়ায় সাগর বাহিত পলি উজানের দিকের নদী ও খালের তলদেশে নিক্ষেপিত হতে থাকে। একারণে শুষ্ক মৌসুমে ভদ্রা তেলিগাতি নদীর মাধ্যমে সাগর হতে প্রচুর পলি বাহিত হয়ে হরি-টেকা-মুক্তেশ্বরী নদী ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী ও এর সংযুক্ত খাল গুলোর তলদেশে নিক্ষেপিত হয়ে ভরাট হয়ে যায়। বছর চারেক আগেও ভবদহ স্লুইচগেট হতে শিপসা নদী হয়ে বড় বড় মাছ ধরা ট্রলার চলাচল করতে পারতো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূল সিন্ধান্তে ভবদহের স্লুইচগেট বন্ধ করে সেখানে মোটর ব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে জোয়ারের সাথে আসা পলি নদীতেই থেকে যায় বলে দাবী ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের। আর দীর্ঘদিন নদী খনন করে সে মাটি নদীর ভেতরেই রাখা হয়েছে। ফলে নদী পরিণত হয়েছে নালাতে, বর্তমানে সমুদ্রের জোয়ারের পানির চাপ থাকায় নদী পানিতে টুইটম্বর করছে।
মাত্র ১ ফুট পানির উচ্চতা বাড়লেই সে পানি উপচে চলে আসবে ভবদহ অঞ্চলের ভিতর। এমতাবস্থাতে ঘের চাষীদের পাশাপাশি উদ্বেগ প্রকাশ করছে সাধারণ জনগণ। তাদের আশঙ্কা ভবদহের সমাধান না করতে পারলে ২০১৭ সালের মত এবারও জলাবদ্ধতায় পরিণত হবে প্রায় শত শত গ্রাম। ভবদহ অঞ্চলের মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টু জানান, এখনই খাল, বিলের পানি কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এরপর যতটুকু পানি বাড়বে তা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করবে, পানি উঠতে শুরু করবে বসত বাড়িতে। ভববদহ পানি নিষ্কাষণ সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, সেচ জলাবদ্ধতার কোন সমাধান না বা সেচে নদী বাচঁবে না। প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে তার সমাধান করতে হবে। প্রয়োজন টি আর এম প্রকল্প।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)