মণিরামপুরে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষক বহিষ্কার, র্যাবের হাতে আটক
যশোরের মণিরামপুরে একটি কোচিং সেন্টারে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শনিবার (২১ মে-২০২২) ওই শিক্ষককে হেফাজতে নিয়েছে র্যাব। অভিযুক্ত ব্যক্তি মণিরামপুর উপজেলার একটি স্কুলের গণিতের শিক্ষক। বিদ্যালয়ের অদূরে নিজের একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে তাঁর।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে-২০২২) বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষককে এক মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করেছে। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষকের পরিচালিত কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়।
এদিকে শনিবার সকাল থেকে শিক্ষকের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার ও কোচিং সেন্টার চালুর দাবিতে পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। এই দিন তাঁদের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষা না দিয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের জানলার গ্লাস ভাঙচুর করেছে।
এদিকে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কথা শুনে শনিবার দুপুরে র্যাব-৬ যশোরের সদস্যরা ওই বিদ্যালয়ে আসেন। পরে তাঁরা অভিযুক্ত শিক্ষক প্রদীপ বাইনকে হেফাজতে নেন। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষককে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাদা জানান- ওই শিক্ষকের কোচিং সেন্টারে পড়তে যেত ওই শিক্ষার্থী। রোজায় বিদ্যালয় বন্ধের মধ্যে একদিন বিকেলে একা পেয়ে কোচিং সেন্টারের কক্ষের মধ্যে ছাত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন তিনি। কোচিং থেকে বাড়ি ফিরে ওই ছাত্রী তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তাঁরা লিখিত অভিযোগ চান। লিখিত দেওয়ার পর ঘটনার তদন্ত হয়। তদন্তে সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে এক মাসের জন্য বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিভাবকেরা জানান- ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অনেক অভিযোগ উঠেছে। তখন টাকা ছিটিয়ে তিনি পার পেয়ে গেছেন। এবার টাকা ছিটাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন- অভিযোগ পাওয়ার পর শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের তিনজনকে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পর গত বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় অভিযুক্ত শিক্ষককে এক মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। শনিবার (২১ মে- ২০২২) থেকে ওই শিক্ষকের শাস্তি কার্যকর হয়।
এদিকে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার্থী জানায়- তাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যা করা হচ্ছে সেটা অন্যায়। তারা এর প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে বলে দাবি জানায় তারা।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ- ওই শিক্ষক এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে নিজের পক্ষে নিয়েছেন। নিজে বাঁচতে তিনি ছাত্রদের দিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করিয়েছেন।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন- ওই শিক্ষকের বহিষ্কারের খবর পেয়ে শনিবার (২১ মে-২০২২) সকালে পরীক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে বিক্ষোভ করে। তারা পরীক্ষা বর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন- আমি পরীক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। পরে পরীক্ষা শুরুর সময় পার হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা বাতিল করে বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন- আগে থেকে ঘটনার কিছু আমাকে জানানো হয়নি। শনিবার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করায় প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। আগামী পরীক্ষাগুলো যেনো হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন- বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ কোনো শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করতে পারেন। কিন্তু সময় উল্লেখ করে এক মাসের জন্য বহিষ্কার করার কোনো সুযোগ নেই।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বলেন- র্যাব অভিযুক্ত শিক্ষককে ধরে নিয়ে গেছে। তাঁদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষকের দাবি করে বলেন- ওই ছাত্রী ভুল পথে যাচ্ছিল। তাকে শাসন করতে গিয়ে আমি ফেঁসে গেছি।
মণিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন- এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)