মদপানে বগুড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৫
বিষাক্ত স্পিরিট পানে বুধবার সকাল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে। এরমধ্যে ১২ জন বগুড়া শহরে এবং ৩ জন শাজাহানপুর উপজেলায়।
নতুন করে যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন- শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়া এলাকার রামনাথ রবিদাস (৬০) ও পুরান বগুড়া জিলাদারপাড়ার কুলিশ্রমিক রমজান আলী (৬৫)।
এর আগে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকার কারখানা শ্রমিক পলাশ হোসেন (৩৪), শহরের কাটনারপাড়া এলাকার হোটেল শ্রমিক সাজু মিয়া (৫৫), পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়া এলাকার সুমন রবিদাস (৩৮), বগুড়া শহরের চারমাথা ভবেরবাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন (৫৫), শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া এলাকার রাজমিস্ত্রি রমজান আলী (৬০), কাটনারপাড়া হটুমিয়া লেনের বাবুর্চি মোজাহার আলী (৭৫) ও কাহালু পৌর এলাকার উলুট্রু মহল্লার অটোরিকশার চালক কালাম মিয়া (৫০), পুরান বগুড়া এলাকার প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), ফাঁপোড় এলাকার রিকশাচালক জুলফিকার রহমান (৫৬) ও ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার রিকশাচালক আবদুল জলিল (৬৫), এছাড়া শাজাহানপুরের অটোটেম্পু মেকার মেহেদী হাসান (২৮) ও জমির সার্ভেয়ার দক্ষিন কাটাবাড়ি গ্রামের আহাদ আলী (৩৮), রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আব্দুর রাজ্জাকের (৪৮) মৃত্যু হয়।
নিহতদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় পারুল হোমিও হল এবং তিনমাথা রেলগেট এলাকার খান হোমিও হল থেকে বিক্রি করা স্পিরিট পান করার পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এ ঘটনায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রঞ্জু মিয়ার (৩৩) ভাই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সোমবার রাতে থানায় মামলা করেছেন।
মামলায় পারুল হোমিও হল এবং পুনম হোমিও হলের মালিক নুর মোহাম্মদ (৪৮), নূরনবী (৫০) এবং নূরে আলম (৫৫) নামের তিন ভাইকে আসামি করা হয়েছে। একই সাথে আরো আসামি করা হয়েছে শহরের তিনমাথা রেলগেটের খান হোমিও হলের মালিক শাহীনুর রহমান।
ঘটনার পর থেকে খান হোমিও হল বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন মালিক শাহিনুর রহমান। তার মুঠোফোনও বন্ধ। একই ভাবে লাপাত্তা হয়েছেন পারুল ও পুনম হোমিও হলের মালিক তিন ভাইও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হোমিও চিকিৎসার আড়ালে মাদক হিসেবে শ শ লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি হয় বগুড়ায়। বগুড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এই স্পিরিট আবার বগুড়া থেকেই পাঠানো হয় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। শুধু বগুড়াতেই শত কোটি টাকার এই অবৈধ দেশি মাদক বাজার রয়েছে।
এর আগে ১৯৯৮ সালে নববর্ষে স্পিরিট পানে ৭১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিষাক্ত স্পিরিট সরবরাহকারীও হলেন এই বগুড়ার পারুল হোমিও হল। পুলিশ, ডিবি ঘুরে মামলাটি শেষ পর্যন্ত সিআইডির হাতে থাকা অবস্থায় চার্জশীট হলেও আসামিরা রয়েছেন অধরা।
এছাড়া ২০০০ সালে বগুড়ায় বিষাক্ত স্পিরিট পানে ২২ জন মারা যাওয়ার ঘটনার পেছনেও ছিলো এই পারুল হোমিও হল।
বগুড়া হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. এসএম মিল্লাত হোসেন বলেন, শুধু বগুড়া জেলায় ৪শ হোমিও চিকিৎসক রয়েছেন। এরমধ্যে ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে ৫০ জনেরও কম ব্যক্তির। তিনি স্বীকার করেন যে লাইসেন্স ছাড়াই বগুড়ায় সাড়ে ৩শ হোমিও চিকিৎসক নিজস্ব চেম্বারে অবৈধভাবে কিনে নিয়ে স্পিরিট ব্যবহার করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনার কারণে সম্প্রতি দেশি-বিদেশি মদ সঙ্কটের মধ্যে ভেজাল মদ ব্যবসায়ীরা রেকটিফাইড স্পিরিটের সাথে বিষাক্ত মিথানল মিশিয়ে বিক্রি করছেন। মিথানল কাঠের কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত হার্ডওয়ারের দোকানে কেজি হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। মিথানল স্পিরিট খাবার অযোগ্য এবং কড়া ঝাঁজওয়ালা হয়ে থাকে। যার কারণে পানি মেশানো ১ পাউন্ড রেকটিফাইড স্পিরিটের সাথে ২ ফোটা মিথানল মিশিয়ে দিলে সেটি আসলের চাইতেও কড়া মনে হয়। মাদকাসক্তরা এই কড়া ঝাঁজওয়ালা মাদকই বেশি পছন্দ করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে মিথানল মিশ্রিত দ্রবন মানবদেহের জন্য শতভাগ ক্ষতিকর। এটি অতিমাত্রায় পান করলে ২ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। মিথানল মূলত কাঠ বার্নিশে কিংবা বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা কোনোভাবেই পানের উপযোগী নয়।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, অ্যালকোহল বা মদ মানবদেহের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। তার ওপর কিছু লোক যে মদ পান করছে তাতে ভেজাল রয়েছে। যে কারণে আসক্তরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বগুড়ার উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, হোমিওপ্যাথিক ফার্মেসিতে বোতলে রেক্টিফাইড স্পিরিট ভরে ওষুধের স্টিকার লাগায়। যার কারণে সেটি ওষুধ না নেশাজাতীয় দ্রব্য তা নির্ণয় করা কঠিন। তবে প্রকাশ্যে রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি সম্পর্কে তার জানা নেই।
বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ূন কবির বলেন, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অসুস্থ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শহরের পারুল হোমিও হল এবং খান হোমিও হল নামের দুটি দোকান থেকে রেকটিফাইড কিনে পান করে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)