মৃত্যুর ১২ বছর পরও পেনশন সুবিধা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ অফিসার যতীন্দ্রনাথের পরিবার


একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার যতীন্দ্রনাথ পোদ্দারের মৃত্যুর পর ১২ বছর পার হলেও তার পরিবার এখন পর্যন্ত পেনশনের টাকা সহ কোন সুযোগ সুবিধা লাভ করতে পারেনি। এ সংক্রান্ত মামলায় অনুকূল রায় পেয়ে যতীন্দ্রনাথ পোদ্দারের স্ত্রী মমতা রানী পোদ্দার এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বারবার দেনদরবার করেও তার শেষ নামাতে পারেননি।
বর্তমানে মানবেতর অবস্থায় তারা সাতক্ষীরায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা যতীন্দ্রনাথ পোদ্দার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ শেষে ১৯৭২ সালের ৫ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে এসআই পদে যোগদান করেন। ১৯৯০ এর ২৯ এপ্রিল পদোন্নতি লাভ করে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চুয়াডাঙা জেলায় কর্মরত থাকেন। এর এক পর্যায়ে তিনি ও তার পরিবার সাতক্ষীরা শহরে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।
স্ত্রী মমতা রানী পোদ্দার জানান চাকুরীকালীন তার স্বামীকে বিভিন্ন সময় ‘গোপালগঞ্জের লোক এবং তিনি হিন্দু’ হিসেবে অনেকের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এরই এক পর্যায়ে ২০০৬ সালের ২ মার্চ চাকুরীর বয়সসীমা ২৫ বছর পূর্ণ হবার ৩ বছর আগে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তিনি জানান তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ চাকুরী জীবনে কোন ধরনের লঘুদন্ড বা কারাদন্ডের অভিযোগ ছিল না। তিনি দীর্ঘদিন সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
যতীন্দ্রনাথ তাকে অবসরে পাঠানোর বিষয়টি পূনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে দেন দরবার করে কোনো সুফল না পেয়ে খুলনায় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন (মামলা নম্বর-৬/২০০৬)। ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে ২০০৭ এর ২২ নভেম্বর প্রদত্ত রায়ে অবসরে পাঠানো আইন সম্মত হয়নি উল্লেখ করে তাকে চাকুরীতে পুনর্বহাল এবং বিধি মোতাবেক তার চাকুরির সমস্ত সুযোগ সুবিধা প্রদানের আদেশ প্রদান করেন। আদালত রায়ে উল্লেখ করেন যে প্রতিহিংসামূলকভাবে তাকে চাকুরী থেকে অপসারণ করা হয়েছে। যা যুক্তিযুক্ত ও আইনসঙ্গত ছিল না। এরই মধ্যে ২০০৮ সালের ১৬ আগস্ট যতীন্দ্রনাথ পোদ্দার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
মমতা রানী পোদ্দার তার আবেদনে আরও উল্লেখ করেন যে সরকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিপক্ষে আপিল করেন (নম্বর ০৯/০৮)। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ওই আপিল খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখেন। এদিকে পুনরায় সরকারপক্ষ সুপ্রীম কোর্টে লিভ টু আপিল (নম্বর ১১৬৩/১২) করলে তাও ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খারিজ হয়ে যায়। ফলে আদালতের আগের আদেশসমূহ বহাল থাকে।
মমতা রানী পোদ্দার আরও জানান এ ঘটনার পর আরও সাত বছর পার হলেও তিনি স্বামীর ওয়ারেশ হিসেবে পেনশনের টাকা এবং অন্যান্য কোন আর্থিক সুবিধা পাননি। এসব রায় নিয়ে তিনি সরকারের কাছে বারবার দেনদরবার করেছেন। বর্তমানে তিনি স্বামীহারা হয়ে বেকার সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অবিলম্বে তিনি তার স্বামীর চাকুরীকালীন বেতনভাতা, পেনশন ও সরকারী কর্মচারীর স্ত্রী হিসেবে প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সূত্রে. পত্রদূত।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
