লাফিয়ে বাড়ছে ডলারের দাম, মান হারাচ্ছে টাকা
দেশে পণ্য আমদানির চাপ বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ডলারের চাহিদাও। বাড়তি চাহিদার কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। ডলারের দাম বাড়তে থাকায় এর বিপরীতে মান হারাচ্ছে টাকা।
সর্বশেষ আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) প্রতি ডলারের মূল্য আরও ১০ পয়সা বেড়ে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
তবে খোলাবাজারে ও নগদ মূল্যে ডলার আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত দু-তিনদিন একটু দাম কমলেও আবারও তা দুই টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে খোলাবাজারে।
চলতি বছরের আগস্টের শুরু থেকে বাড়তে থাকে ডলারের দাম, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। অন্যদিকে ডলারের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়েছে খোলাবাজারে। যদিও ব্যাংকগুলোতে এসব মুদ্রা দু-তিনদিন ধরে ধরে স্থিতিশীল রয়েছে।
টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির জন্য একাধিক কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত দুই থেকে আড়াই বছর ধরে ডলারের দাম স্থিতিশীল ছিল, যা গত আগস্ট মাসের শুরুতেও প্রতি এক ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। তবে ৫ আগস্টের পর থেকেই হঠাৎ ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে ৮৫ পয়সা দর হারিয়েছে টাকা।
তাদের মতে ‘বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেশি থাকাকালীন বেশি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজারে ৭৯ কোটি ডলার বিক্রি করেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় দেড় বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে সব কিছু স্থবির হয়ে পড়েছিল। করোনার পরে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে, সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ায় দেশে আমদানি চাপ বেড়েছে। এর পাশাপাশি করোনার টিকা আমদানির বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
তারা আরও বলছেন, টিকা আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে। তাছাড়া গত তিন মাস ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। রফতানি আয়ও কমেছে। এসব কারণে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে ডলারের দাম বেড়েছে, কমেছে টাকারা মান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং পণ্য আমদানি বেড়েছে। এর বিপরীতে দায় পরিশোধ করতে বাড়তি ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে। এতে ডলারের দাম বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার সরবরাহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে করোনার টিকা কিনছে সরকার। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর টিকা কেনার জন্য দুই হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ছাড় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনে এ অর্থ ছাড় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবমতে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে মোট ৭১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। টাকার অঙ্কে (এক ডলার সমান ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা) যার পরিমাণ ৬১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।
জুলাই এবং আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ দুই মাসে পণ্য আমদানির জন্য এক হাজার ২১৩ কোটি (১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ৮১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ডলার কেনায় রেকর্ড গড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় আট বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)