ফলোআপ...
সেজো ভাইকে ছু*রিকাঘাতের পর কাদায় চুবি*য়ে মৃ*ত্যু নিশ্চিত করেন তারা!


মাসুদ রায়হান পলাশ: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়ার নৌ-খালে ডাল-পালা দেন আবুল হোসেন। যেন মাছ এসে সেখানে জড়ো হয় এবং তা ধরা যায়। সেই অনুযায়ী আবুল জেলে ডেকে আনেন শনিবার (৫ এপ্রিল, ২০২৫) সকালে। খালে নামেন আবুল, তার সেজো ভাই মোশাররফ হোসেন। মাছ ধরা শুরু হয়। কিন্তু, সরকারি খাল হলেও মাছ ধরতে বাঁধা দেন তাদের ছোট (চার নম্বর) ভাই সোহরাব হোসেন।
বাঁধা দিয়ে সেসময় সোহরাব বলছিলেন, ‘আমার সীমানা সোজা মাছ ধরতে দিবো না। মাছ ধরলে মেরে ফেলবো।’
খালের পাশেই তাদের বাড়ি।
তখন মোশাররফ বলছিলেন, ‘মাছ ধরব। তোর কিছু করার থাকলে করিস।’
উত্তেজক পরিস্থিতি বিরাজ করতে করতে সোহরাবের সঙ্গে যোগ দেন আরেক ভাই আশরাফ হোসেন। সঙ্গে যোগ দেন তার বউ এবং মেয়ে।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেসময় গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে প্রথমে সোহরাব তার বড় ভাই আবুল হোসেনের পেটে আঘাত করেন। এতে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সোহারব এবং আশারফ হোসেন মিলে ছুরিকাঘাত করেন সেজো ভাই মোশাররফ হোসেনকে। দুজনেই একের পর এক ছুরি আর শাবলের আঘাত করতে থাকেন।
এতে মোশাররফ হোসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেসময় নৌ-খালের কাদার নিচে মোশাররফের মাথা চুবিয়ে ধরেন সোহরাব ও আশারফ। এতে ঘটনাস্থলেই মোশারফ মারা যান।
এই পুরো ঘটনাটি ঘটে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া নৌ-খালে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোকের মাতম চলছে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে।
এ ঘটনায় বোয়ালিয়াসহ আশপাশের এলাকার মানুষ হতবিহবল হয়ে পড়েছে। শনিবার সকালে যখন এসব ঘটে তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসাধীন আবুল হোসেনের স্ত্রী শিরিনা খাতুন। তিনি তাঁর নিজ চোখে দেখা পুরো ঘটনা এ প্রতিবেদককে বর্ণনা করে শোনান।
বোয়ালিয়া গ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, আবুল হোসেনদের ৬ ভাইয়ের বাড়ি পাশাপাশি। সেখানে কেবল কয়েকজন নারীকে দেখা যায়। কোনো পুরুষ সদস্যকে বাসায় দেখা যায়নি।
শিরিনা যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন সেখানে আরও ১৫ জনের মতো নারী উপস্থিত ছিলেন।
তারাও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, নিহত মোশাররফ হোসেন শেখপাড়ার মৃত ফজর আলীর ছেলে। ফজর আলীর ছয় ছেলে। মেজো ছেলে আলমগীর হোসেন মারা গেছেন ২০০৯ সালে। বেঁচে আছেন ৫ ছেলে।
শিরিনা খাতুন বলেন, ‘দুই ভাইকে যখন ছুরি মারছে একের পর এক, তখন আমি চিৎকার করে সবাইকে ডেকে বলি, ওদের মেরে ফেলল; তোমরা সবাই এদিকে আসো। সেসময় খালের দুই ধারে কয়েকজন ছিলেন। কিন্তু তারা কেউ এগিয়ে আসেননি। যখন সব শেষ হয়ে যায়, তখন কেউ কেউ এগিয়ে আসেন।’
শিরিন বলছিলেন, ‘মোশারফ এবং ওর বড় ভাই, দুজনই কাদায় পড়ে ছিল। মোশারফের মাথা কাদার নিচে পোতা। মোশারফকে ছুরি মেরে তারপর কাদায় পুতে মেরে ফেলে ওরা। আর ওর বড় ভাই তখনও বেঁচে ছিলেন। পরে দুজনকেই হাসপাতালে নেয়া হয়। মোশারফকে মৃত্যু ঘোষণা করে বড় ভাইকে চিকিৎসা দেন ডাক্তার। এখন তিনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।’
শিরিনের কথা বলা শেষ হলে পাশে থাকা নারীদের ইশারা করে নিহত মোশররফের স্ত্রী তফুরা খাতুন বিলাপ করছিলেন। বিলাপে তিনি বলছিলেন, ‘আমার পাখিকে (স্বামীকে) তোমরা কেউ বাঁচালে না। আমি আজ ১৭টা বছর সংসার করছি তার সঙ্গে। সব সময় আমি আগলে রেখেছি। একটা দিনের জন্য বাপের (বাবা) বাড়ি গেলাম আর তোমরা আমার পাখি মেরে ফেললে? কেউ আগলে রাখলে না?’
সেসময় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তফুরা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি বাপের বাড়ি গেছিলাম। বাড়ি ফিরে আমি আর আমার স্বামীকে পেলাম না। আমি ওদের ফাঁসি চাই। আমার পাখির মতো ওদেরও কবরে দেখতে চাই। না হলে আমাকে এবং আমার ছেলেও মেরে আমার পাখির কবরের পাশে রেখে আসেন আপনারা।’
শুধু মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে, নাকি পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে; এমন প্রশ্নের জবাবে তফুরা খাতুন বলেন, ‘২০২৩ সালের আমার শ্বশুরের বাঁশ ঝাড় থেকে আমার স্বামী বাঁশ কাটে। সেসময় বাঁশ কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় দুই ভাইয়ের মধ্যে। একপর্যায়ে সোহরাবের বউও এতে জড়িত হয়। পরে আমাদের বড়ভাই আবুল হোসেন এসে ঘটনা থামানোর চেষ্টা করেন। সেসময় বড় ভাইয়ের সঙ্গেও ঝামেলা করে ওরা। পরে আমার স্বামী বড়ভাইয়ের বিরুদ্ধে তারা শ্লীলতাহানির মামলা করে। এছাড়া তারপর থেকে নানা সময় কথা কাটাকাটি হয় তাদের।’
পরিবার সূত্র জানিয়েছে, রোববার সকালে ওই বাড়িতে পুলিশ যায়। যে ছুরি এবং শাবল দিয়ে তাদের কোপানো হয়, তা খোঁজ করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ সারা ঘর তন্নতন্ন করেও এসব খুঁজে পায়নি। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
যে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ, এ ঘটনার পর তাদের গ্রেপ্তার করেছে কলারোয়া থানা পুলিশ। এ ছাড়া আশারফের স্ত্রী ও তার কন্যাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুল আরেফিন বলেন, ‘আমরা বিস্তারিত তদন্ত করছি। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার প্রমাণ পেয়েছি। আরও তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’
উল্লেখ্য, শনিবার (৫ এপ্রিল, ২০২৫) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের শেখ পাড়ায় নৌ-খালে মাছ ধরা নিয়ে ভাইয়ের হাতে এক ভাই খুন হন। আরেক ভাই গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন।

নিহতের স্ত্রী কাঁদছেন। ছেলে ধরে রেখেছেন

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
