স্বাবলম্বী হলো অর্ধশত পরিবার
মেয়েটির নাম ইতু। নবম শ্রেণিতে পড়ে। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ইতুর বাবা। মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে বিপাকে পড়েন ইতুর মা শান্ত খাতুন।
ফুটফুটে দুটি সন্তানকে কিভাবে লেখাপড়া করাবেন, কিভাবে চলবে তাঁর সংসার—এই ভেবে যখন দিশাহারা তিনি, তখনই তাঁর পাশে দাঁড়ায় দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবেন। বাবার ইচ্ছা পূরণে মেয়েও বদ্ধপরিকর। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দরিদ্রতা।
তাদের এই দরিদ্রতা দূর করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে বসুন্ধরা গ্রুপ। সম্প্রতি কুষ্টিয়া সদরের হাটেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ইতুদের বাড়িতে গিয়েছিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয়তম কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে মেয়েটির পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তাদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে যা যা করা প্রয়োজন, তা করবেন বলে কথা দিয়েছেন।
ছেলেমেয়েকে নিয়ে ইতুর মা এখন বাবার বাড়িতে থাকেন। এখানে তাঁদের থাকার জায়গা নেই। ভাইয়ের একটি ঘরে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। ইতুর নানি তাঁর মেয়েকে ২ শতাংশ জায়গা লিখে দিয়েছেন। এখন একটি ঘর হলে দুই সন্তানকে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পাবেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে এই পরিবারকে একটি নতুন পাকা ঘর করে দেওয়া হবে, কথা দিয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন। এখন সেই ঘরের কাজ চলছে। ইতুর মাকে কিনে দেওয়া হয়েছে একটি নতুন সেলাই মেশিন।
গত মাসে কুষ্টিয়া, পাবনা, গাজীপুর, কুমিল্লা ও পিরোজপুর মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত পরিবারকে স্বাবলম্বী করার কাজ সম্পন্ন করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। সারা দেশে ঘুরে ঘুরে তাদের এই কাজ বাস্তবায়ন করছে দেশসেরা সামাজিক সংগঠন শুভসংঘ। অনেক জায়গায় শুভসংঘ টিমের সঙ্গে চলে যাচ্ছেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন। গত ২০ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত তিনি কুষ্টিয়া ও পাবনায় থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তা তুলে দিয়েছেন অনেক মানুষের হাতে। কাউকে নতুন ঘর করে দিয়েছেন, কাউকে অটোভ্যান, কাউকে নতুন দোকান ও মালপত্র কিংবা সেলাই মেশিন দিয়েছেন। দেশের একজন বিখ্যাত মানুষের হাত থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের তাৎক্ষণিক সহায়তা পেয়ে হাসি ফিরে এসেছে অসহায় মানুষগুলোর মুখে।
কুষ্টিয়া সদরের ঝাউদিয়া ইউনিয়নের অতিদরিদ্র ইলিয়াস হোসেন। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে এমন একটি মাটির ঘরে থাকতেন। অন্যের জমিতে কাজ করে চারজনের পরিবার খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করছিল। সামনে বৃষ্টির দিন আসছে। যেকোনো সময় হয়তো ধসে পড়বে তাদের মাটির দেয়াল। আশপাশের মানুষগুলোও এই পরিবারটি নিয়ে খুব চিন্তায় ছিল। কিন্তু ইলিয়াসের যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে নতুন ঘরের কথা তো তাঁর কল্পনায়ও আসার কথা নয়। এই পরিবারের খোঁজ পায় শুভসংঘ টিম। কয়েকজন মিলে চলে যায় ইলিয়াসের বাড়ি। তাদের অসহায়ত্ব দেখে আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি নতুন ঘর তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরের দিন থেকেই কাজ শুরু হয় ইলিয়াসের ঘরের। চার দিনেই ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে নতুন ঘর ইলিয়াস-সালমা দম্পতির হাতে বুঝিয়ে দেন ইমদাদুল হক মিলন। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে কিনে দেন দুই সেট করে নতুন জামা। নতুন জামা ও ঘরের চাবি হাতে পেয়ে আনন্দের অশ্রু ঝরে ইলিয়াস ও সালমা বেগমের।
কুষ্টিয়ায় শরিফুল নামের আরেকজনকে একটি অটোভ্যান কিনে দেওয়া হয়েছে। শরিফুলের পরিবারে মাসহ সাতজন সদস্য। চার ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছিল শরিফুলকে। একসময় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছিল তাঁর। এ অবস্থায় শরিফুলকে স্বাবলম্বী করতে তাঁকে একটি অটোভ্যান এবং তাঁর বড় মেয়ে পপিকে সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া হয়েছে। পপির পড়াশোনার দায়িত্বও নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। পপির মতোই কুষ্টিয়ার আরো ১০ জনকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। একইভাবে পাবনার ১৫ জন অতিদরিদ্র নারীকে স্বাবলম্বী করতে প্রত্যেককে একটি করে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। চার প্রতিবন্ধীর সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ঝন্টু শেখ। তিনি নিজেও প্রতিবন্ধী। কোনো রকমে একটি ভাঙাচোরা দোকান চালিয়ে সংসারের ব্যয় মেটাতেন। দোকানের আয়ে পরিবারের সবার তিন বেলার খাবার জুটত না কখনো। পরিবারটির খোঁজ পেয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি দোকান করে দেওয়া হয়। দোকানে কিনে দেওয়া হয় নতুন মালপত্র। ঝন্টুর হাতে নতুন দোকান বুঝিয়ে দেন ইমদাদুল হক মিলন। ঝন্টুর ছোট্ট মেয়েটির পড়াশোনার দায়িত্বও নেন তিনি।
গাজীপুরের কলেজপড়ুয়া ১৭ জন দরিদ্র শিক্ষার্থীর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে নতুন সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি সেলাই মেশিন চালিয়ে নিজেরা কিছুটা হলেও স্বচ্ছন্দে চলতে পারবে বলে জানায় এসব শিক্ষার্থী। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থী সায়মা বেগমের বাবা অন্যের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। মা সংসারের টুকিটাকি কাজ ছাড়াও ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করেন। মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান তাঁরা। এখানেও বাধা দরিদ্রতা। সায়মার মা-বাবার স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। তার পড়াশোনার সব খরচ চালানোর আশ্বাস এবং প্রাথমিকভাবে বই-খাতাসহ স্কুল ড্রেস ও অন্যান্য খরচ দেওয়া হয়েছে। একই দিনে গাজীপুরের দুজন প্রতিবন্ধী বয়স্ক নারীকে হুইলচেয়ার দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে একজন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিন। পিরোজপুরে একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে হুইলচেয়ার দেওয়া হয়েছে।
রমজানের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও অসহায় অতিদরিদ্র পরিবারের খোঁজ করে তাদের পুরো মাসের বাজার করে দেওয়া হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান মহোদয় একজন মানবদরদি মানুষ। যখনই কোনো অসহায় মানুষের কথা জানতে পারেন আমাকে তিনি জানান। শুভসংঘের মাধ্যমে অসংখ্য দরিদ্র মানুষকে খুঁজে বের করে তাদের স্বাবলম্বী করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। প্রতিটি পরিবারকে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। এই মহান মানুষটির একটাই ইচ্ছা, ভালো থাকুক সকল মানুষ। জয় হোক মানবতার। জয়তু বসুন্ধরা গ্রুপ, জয়তু শুভসংঘ। ’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)