১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় পাশ শহীদ আবু সাঈদ
জুলাইয়ের ১২ ও ১৩ তারিখে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তখন কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। সারাদেশের মতো রংপুরেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় তথা রংপুর অঞ্চলে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন আবু সাঈদ। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই তিনি অংশ নেন লিখিত পরীক্ষায়।
সোমবার বিকেলে সেই লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ। এতে পাশ করেছেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। তাদের মধ্যে একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া শহীদ আবু সাঈদ।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, রংপুর বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আবু সাঈদ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি ইবতেদায়ী জেনারেল শিক্ষক (ইংরেজি ও বাংলা বিষয়) পদে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। পরীক্ষায় আবু সাঈদের রোল নম্বর ছিল ২০১২৫৬২৯৭। বাবার নাম মো. মকবুল হোসেন। মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম।
জানা যায়, আবু সাঈদ ২০০১ সালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। স্থানীয় জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপরে স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন।
২০১৮ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ২০২০ সালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন তিনি। আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
চলতি বছরের জুনের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন আবু সাঈদ। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
গত ১৬ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। আবু সাঈদ এ আন্দোলনে সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সেসময় তাকে একটি লাঠি হাতে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে দেখা যায়। তার সঙ্গের আন্দোলনকারীরা যখন কিছুটা পেছনে ছিলেন, তখন তিনি পুলিশের একেবারে কাছাকাছি গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
সেসময় পুলিশের একজন সদস্য তাকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। যা আবু সাঈদের বুকে-পেটে আঘাত হানে। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন আরও বেগবান হয়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে টানা ১৬ বছর দেশ শাসন করা শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)