২১ দফা দাবীতে দশ সহস্রাধিক গণস্বাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির


সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার দাবীতে ১০ হাজার ৮৮৭ জনের গণস্বাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দুই ঘন্টাব্যাপি অবস্থান সমাবেশ শেষে বেলা ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।
এর পূর্বে বেলা ১০টা ৪৫টায় শুরু হওয়া অবস্থান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম।
সমাবেশের বক্তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এখনো অনেক স্থানে মানুষের বাড়ি ঘর রাস্তা-ঘাটে জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হচ্ছে। হাটু পানি-কোমর পানিতে বসবাস করছে সাতক্ষীরা শহরের বদ্দিপুর, ইটাগাছা, কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কিন্তু সমস্যা সমাধানে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তেমন কোন কাজে আসছে না।
বক্তারা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, উজানের নদ-নদীগুলোর সাথে এখানকার নদ-নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যত্রতত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অপরিকল্পিত মাছের ঘের নির্মাণের কারণে এবং পোল্ডারের ভিতরের পানি নিস্কাশনের খালগুলো লীজ প্রদান ও বেদখল হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকা এখন দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের ভাটিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ও আশাশুনির দক্ষিণাংশ এবং খুলনার কয়রা উপজেলা ও পাইকগাছার দক্ষিণাংশের বেড়িবাঁধ প্রতিবছর ভাঙছে। আবার ঐ কপোতাক্ষের উজানে পাইকগাছা ও আশাশুনির উত্তরাংশ তালা, কলারোয়া, কেশবপুর, মণিরামপুরসহ উজানের অংশে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। একই অবস্থা খোলপেটুয়াসহ অন্যান্য নদীগুলোর। প্রতিবছরই নদী ভরাট প্রক্রিয়া ভাটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর সেই নদী ভরাটের কেন্দ্রস্থলের আশে-পাশেই সবচেয়ে বেশি ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে কপোতাক্ষ নদ খননে ৫৩১ কোটি টাকার দ্বিতীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রা এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বক্তারা বলেন, একটি পোল্ডার বা একটি এলাকাকে কেন্দ্র করে প্রকল্প তৈরী করে ভাঙন বা জলাবদ্ধতা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এজন্য উপকুলীয় এলাকা তথা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলা নিয়ে সমীক্ষার পর একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের দাবী জানান তারা।
প্রধানমন্ত্রীর বরাবর প্রেরণকৃত স্মরকলিপিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবন্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা, এই এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন, দুর্যোগের কারণে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ, জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ, সামগ্রীক উন্নয়ন অংশিদার সুনির্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবী জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে জলাবদ্ধতার হাত থেকে সাতক্ষীরা শহর বাঁচাতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা, জেলার সকল নদী-খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ যতদূর সম্ভব পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সকল বাঁধা অপসারণ, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, উদ্ধারকৃত জমি ইজারা প্রদান বন্ধ, নতুন করে অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও ক্লোজার নির্মাণ বন্ধ, গ্রাম-শহরের পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন স্থানে চিংড়ি চাষ বন্ধ, ইছামতি নদীর সাথে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া নদীর সংযোগস্থাপনকারী কুলিয়ার লাবন্যবতি ও পারুলিয়ার সাপমারা খালের দু’পাশের স্লুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার-ভাটা চালু, ইছামতি থেকে মাদার নদীর (আদি যমুনা) প্রবাহ স্বাভাবিক করা, নিচু বিলগুলো উঁচু করতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ, সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খালের স্বাভাবিক প্রবাহ চালু ও বেতনা ও মরিচ্চাপের সাথে সংযুক্ত করা এবং নদী খালের নেট-পাটা অপসারণ করার দাবীসহ সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে ২১ দফা দাবী জানানো হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, এড. আবুল কালাম আজাদ, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সুধাংশু শেখর সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিকী, আনোয়ার জাহিদ তপন, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, এড. আল মাহামুদ পলাশ, কমরেড আবুল হোসেন, নিত্যানন্দ সরকার, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, মাধব চন্দ্র দত্ত, অপারেশ পাল, শফিকুল ইসলাম, এড. কাজী আব্দুল্লাহ আল হাবিব, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, মুনসুর রহমান, ইয়ার আলী, আব্দুস সাত্তার, কায়সারুজ্জামান হিমেল, করসার আলী, আব্দুস সামাদ, মমিন হাওলাদার, পরিতোষ বৈদ্দ, আবিদুর রহমান, পিন্টু বাওলীয়া, আলী নুর খান বাবলু প্রমুখ।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
