বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পাশে থাকবে রাশিয়া: বিএনপির প্রত্যাশা
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্রমনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি রাশিয়ারও ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করে বিএনপি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের দেওয়া বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিএনপির এক বিবৃতিতে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক স্বার্থে বাংলাদেশ ও রাশিয়া দীর্ঘদিনের বন্ধু। আমরা মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদানকে গভীরভাবে স্বীকার করি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মূল্যায়ন করি। আমাদের প্রত্যাশা, রাশিয়া বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার সংকল্প ও মহান আত্মত্যাগের উপযুক্ত সম্মান করবে। গণমানুষের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য চলমান সংগ্রামে রাশিয়ার সমর্থন ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশকে উদ্বুদ্ধ করবে। আর তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রমনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি রাশিয়াও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
একইসঙ্গে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে যে মন্তব্য করেছেন তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, এটি (রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক মুখপাত্রের বিবৃতি) গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশিদের অনুভূতিকে আঘাত করেছে। নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা হারিয়ে আজ নিজ দেশে পরাধীন আওয়ামী বলয়ের বাইরের সকল মানুষ। হাজার-হাজার পরিবার আজও শোকাহত, যাদের স্বজনেরা শহীদ হয়েছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দমন-নিপীড়নে। আজও গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা ও আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জীবনবাজি রেখে, হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে রাজপথে আন্দোলন করছেন লাখ লাখ মানুষ।
আরও বলা হয়, ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের জনগণ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ইতিবাচক সমর্থনকে যার উদ্দেশ্য গণতন্ত্র, সুশাসন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা। দেশের মানুষ এও প্রত্যাশা করে যে, গণআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্র হাসিনা সরকারের জনবিচ্ছিন্ন ও গণবিরোধী অপশাসনকে অযাচিত সমর্থন করবে না।
গত ২২ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক (এফএমএ) মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে যে টুইটে তিনি (মারিয়া জাখারোভা) বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজনে বিরোধী দলের সঙ্গে পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগও করেছেন। ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও মিস জাখারোভার বিবৃতি পোস্ট করা হয়।
এই সম্পর্কে বিএনপি তার বিবৃতিতে বলেছে, মিস জাখারোভার বিবৃতি একটি স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিএনপি এই ভ্রান্ত তথ্য তথা অপব্যাখ্যার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে। বিএনপির সমাবেশ আয়োজনে কোনো বিদেশী কূটনীতিক সহায়তা করেছেন…এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত অভিযোগ ইতিপূর্বে উত্থাপিত হয়নি। এই ধরণের বাস্তবতাবিবর্জিত বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী বলে প্রতীয়মান। কার্যত মিস জাখারোভার দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্রকামী জনগণের স্পৃহাকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনব্যবস্থাকেই সমর্থন করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত কয়েক মাস ধরে রাজধানী ঢাকা, সকল বিভাগীয় শহর তথা বাংলাদেশজুড়ে আমাদের সকল কর্মসূচিতে ধারাবাহিকভাবে বিপুল উপস্থিতি ও জনসমাগম হয়েছে। বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিটি সমাবেশে সরকারের বহুমাত্রিক প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিহত করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের এই বিপুল বিস্তৃত উপস্থিতি ইতিহাসে নজিরবিহীন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)