নি*উইয়র্কের প্রথম মু*সলিম মেয়র হচ্ছেন জোহরান মমদানি


জোহরান মমদানি হবেন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। টানা কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে বড় জয় পেয়েছেন ৩৩ বছর বয়সি প্রগতিশীল ডেমোক্রেট নেতা জোহরান মমদানি।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আজ রাত আমরা ইতিহাস গড়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি এখন নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী।’
প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো পরাজয় স্বীকার করে তাকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন— ‘আজ রাত তার, সে জিতেছে।’
বুধবার (২৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনী ফলাফল শুধু মেয়রের প্রার্থী নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ পথচলার দিকও নির্দেশ করছে। চার বছর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগে গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করা কুওমো রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মমদানির প্রবল উত্থানে সেই প্রত্যাবর্তনের পথে কার্যত প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন।
যদিও ‘র্যাঙ্কড চয়েস’ গণনার ফলে চূড়ান্ত ফল আসতে আরও সময় লাগবে, তবুও প্রথম পছন্দের ভোটে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে আছেন মমদানি। আর নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনী বোর্ড জানিয়েছে, দুই লাখের বেশি ভোটার কেবল একজন প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন, যার অর্থ হলো, মমদানির হাতেই বিজয়ের চাবিকাঠি।
‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করার গল্প
মাত্র এক বছর আগেও যিনি মূলত রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরেই ছিলেন, সেই মমদানি আজ নিউইয়র্কের আলোচিত নাম। হাইভোল্টেজ এই প্রচারণায় তার পোস্টার ছেয়ে গেছে দোকানপাটে, বিলবোর্ডে, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভিডিও যেন সর্বত্র।
‘ফ্রি বাস, ফ্রি চাইল্ড কেয়ার, সাশ্রয়ী আবাসন, উচ্চতর ন্যূনতম মজুরি—সবকিছুই ধনীদের ওপর নতুন কর বসিয়ে সম্ভব,’ বলেছিলেন তিনি। তরুণ ভোটারদের এক বিশাল ঢেউ ছিল তার পক্ষে।
‘আজ রাত ইতিহাসের রাত,’ সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন মমদানি। ‘নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষায়, এটি সবসময় অসম্ভবই মনে হয়—যতক্ষণ না তা বাস্তবে ঘটে। আমরা করে দেখিয়েছি।’
ব্রুকলিনের কেন্দ্রে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ক্যাম্পেইনের স্বেচ্ছাসেবকরা রাস্তায় রাস্তায় নাচছিলেন, হাতে ছিল মমদানির পোস্টার। স্থানীয় এক তরুণী বলছিলেন, ‘শহরটা আবার বেঁচে উঠেছে। এটা একটা বিদ্যুৎ ছড়ানো অনুভূতি।’
দলভেদে বিভক্ত কুওমো, আত্মসমর্পণ ও প্রতিশ্রুতি
৬৭ বছর বয়সি কুওমো দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, পরিচিতি ও তহবিল নিয়েও এই তরুণকে টপকাতে পারলেন না। তীব্র বিতর্কে মমদানির বিরুদ্ধে তার অভিযোগের জবাবে মমদানি কেবল বলেছিলেন, ‘মিস্টার কুওমো, আমাকে কখনও লজ্জাজনকভাবে পদত্যাগ করতে হয়নি’।
২০১৮ সালে গভর্নর হিসেবে তার জনপ্রিয়তার চূড়ায় ছিলেন কুওমো। কিন্তু যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর থেকেই তার ফিরে আসার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ।
ডেমোক্রেটদের ভবিষ্যৎ কোথায়?
এই নির্বাচন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ চেহারাও স্পষ্ট করেছে। একদিকে কুওমোর অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠানপন্থী রাজনীতি, অন্যদিকে মমদানির প্রগতিশীল, তরুণ-নির্ভর এক নতুন ঢেউ। জোহরান মমদানি হবেন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। তাকে সামনে রেখে প্রগতিশীল ডেমোক্রেটদের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি নতুন যুগের প্রত্যাশা দেখা দিয়েছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
