আকাশ থেকেও খুঁজলে দেশে কুঁড়েঘর পাওয়া যাবে না: তথ্যমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনা সংকটেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশের গ্রামগুলিতে আর কোনো কুঁড়েঘর নেই। দেশে আজ কুঁড়েঘর খুঁজে পাওয়া যায় না। কবিতায় কুঁড়েঘর আছে, কিন্তু বাস্তবে আকাশ থেকেও কুঁড়েঘর দেখা যায় না এখন। কুঁড়েঘর এখন আধাপাকা ঘর বা টিনের ঘরে রূপান্তরিত হয়েছে এবং সেগুলো আলোকিত হয়েছে।’
রোববার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে চলমান অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ‘সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে, দুর্যোগ-মহামারির মধ্যে পৃথিবীর সামনে নিজেকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
যারা এ মহামারিকালে শঙ্কা-উদ্বেগ প্রকাশ করে টেলিভিশনের পর্দা গরম করেছিল এই বলে যে, বাংলাদেশে হাজার হাজার লাশ রাস্তায় পড়ে থাকবে। অনাহারে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। তাদের সেই শঙ্কা ও আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজকে সংকট কিভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সমস্যা কিভাবে সমাধান করতে হয়, সংকটের মধ্যেও কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হয়। তা দেখিয়ে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন ড. হাছান মাহমুদ।
করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘করোনার ছোবলে পড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এই দেশে মানুষের ঘনত্ব এক হাজার ২৫০ জন। এ দেশে এই করোনা মহামারির মধ্যে দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থান এই উপমহাদেশে তৃতীয় এবং পুরো পৃথিবীতে এই অবস্থান ২০তম, এটি ব্লুমবার্গের মতো প্রতিষ্ঠান বলেছে।’
করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘করোনার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। চীনের উহান থেকে বাংলাদেশিদের বিনা প্লেন ভাড়ায় বাংলাদেশে ফেরৎ এনে বিশেষ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। যাতে দেশে সংক্রমণ না ছড়ায়। চেষ্টা করা হয়েছে দেশের মানুষকে রক্ষা করার। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকে যারা দেশে ফিরেছেন তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পৃথিবীর কোনো দেশ করোনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে নাই। বাংলাদেশে যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, সেটি আজ পৃথিবীর কাছে উদাহরণ।’
আজকে বিএনপি ও তার মিত্ররাসহ রাতে যারা (কেউ কেউ) রাতে টেলিভিশনের পর্দা গরম করে তারা স্বীকার না করলেও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।
করোনার শুরু থেকে প্রণোদনা ঘোষণার ফলেই দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রায় সাত কোটি মানুষকে এ সময়ে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জনগণের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। দলের পক্ষ থেকেও, খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই করোনা মহামারির মধ্যে পৃথিবীর সব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে গেছে। পৃথিবীর মাত্র ২০টি দেশে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে; তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। আশপাশের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার সংসদে তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতে মাইনস ১০ দশমিক ৩, পাকিস্তান মাইনাস শূন্য দশমিক ৩৮, শ্রীলঙ্কা মাইনাস চার দশমিক ৫৫, ভুটান প্লাস শূন্য দশমিক ৫৭, নেপাল শূন্য দশমিক শূন্য দুই এবং আফগানিস্তান মাইনাস পাঁচ। প্রতিবেশী দেশগুলোর যখন এই অবস্থা তখন বাংলাদেশে এই প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪, যেটি পৃথিবীতে তৃতীয়।’
একমাত্র আওয়ামী লীগই করোনাকালে মানুষের পাশে ছিল বলে দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী তিনি বলেন, ‘করোনার এই দুঃসময়ে অনেকে পল্টনের অফিসে ও প্রেসক্লাবে বসে সংবাদ সম্মেলনে বড় বড় কথা বলেছে, তারা কী ভেবে দেখেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো এইভাবে কোনো দল মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। জনগণের পাশে ছিল বলেই আজ মন্ত্রিসভার সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। কয়েকজন সংসদ সদস্য মারা গেছেন। দলের ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদের তিন জন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর আশার আলোয় দেশ আজ আলোকিত হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘আশাহীন জাতির পক্ষে আশার ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়ার তাগাদা থাকে না। প্রধানমন্ত্রী এই ঘোর সংকটের সময়েও দেশ ও জাতিকে আশান্বিত করেছেন। বাংলাদেশ ছিল একটি স্বল্প আয়ের দেশ। প্রকৃতপক্ষে ২০২১ আসার আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। দেশে শুধু বস্তুগত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নেই বিশ্বাস করেন নি শেখ হাসিনা। তিনি মেধাবী, মূল্যবোধ ও মমত্ববোধ সম্পন্ন নতুন একটি প্রজন্ম গড়ে তুলতে চান।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে ধনী হবো তা নয়। আমরা আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করবো, যেই প্রজন্ম শুধু বাংলাদেশকে উন্নত করবে তা নয়। সেই প্রজন্ম পৃথিবীকে পথ দেখাবে। আমরা একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। শেখ হাসিনা জনগণের সংকটে, সংগ্রামে, উন্নয়নে ও অর্জনে একটি মাত্র নাম, তার নেতৃত্বেই সংকট পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)