‘স্বামীর শরীরে ইনজেকশন পুশ করা খুব কঠিন’
রাজধানীতে ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা গুলশানা আক্তার (টগর)। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালেই গত ২৩ জুলাই থেকে গুলশানা আক্তারের চিকিৎসক পরিচয়ের পাশাপাশি পরিচয় ছিল রোগীর স্ত্রী ও পরিচর্যাকারী হিসেবে। এ হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন ব্যাংকার স্বামী সাদমান খান (নাবিল)। গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতাল থেকে স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।
গুলশানা আক্তার রমজানের ঈদে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এবার রোস্টার অনুযায়ী বাড়িতেই ঈদ করেছেন। তবে গুলশানা আক্তার বললেন, ‘ঈদের আগ দিয়ে বাড়ি ফিরেছি। এর আগে হাসপাতালে ধকল গেছে। করোনা থেকে সুস্থ হতে সময় লাগে, স্বামীর দুর্বলতা কাটেনি। ফলে সেই অর্থে ঈদ হয়নি। ঈদের পরের দিন একটু রান্না করেছি। আবার ৯ আগস্ট থেকে হাসপাতালের ডিউটি শুরু হবে। তখন আবার সেই আগের রুটিন।’
হাসপাতালের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে গুলশানা বললেন, ‘নিজের স্বামীর শরীরে ইনজেকশন পুশ করা খুব কঠিন। আমি নিজে চিকিৎসক, তাই স্বামীর অবস্থা বেশি খারাপ হচ্ছিল কি না, তা বুঝতে পারছিলাম। অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, রাতে হুট করে স্বামীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে কি না, সুস্থ হবে তো—এসব দুশ্চিন্তায় অন্য রোগীর স্বজনের মতো আমিও হাসপাতালে যত দিন ছিলাম, রাতে ঘুমাতে পারিনি। নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বামীর সঙ্গে কেবিনেই ছিলাম।’
গুলশানা আক্তার গত ১২ মে থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ঢাকা শিশু হাসপাতালে করোনা সন্দেহ বা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া শিশুদের ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তারের পর থেকে তিনি করোনা সন্দেহ ও করোনা রোগীদের চিকিৎসা করছেন।
গুলশানা জানান, শুধু স্বামী নন, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর, নিজের বড় বোন ও দুলাভাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি। যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাসায় গিয়ে তিনি নিজেই সবার চিকিৎসা করেছেন।
গুলশানা বললেন, ‘গত ১১ জুলাই হোটেলে বসেই খবর পাই শ্বশুরের করোনা পজিটিভ। হোটেল থেকে বাসায় গিয়ে শ্বশুরের নাভিতে ইনজেকশন পুশ করে আবার হোটেলে ফিরতাম। তারপর পরিবারের অন্যদের পাশাপাশি ১৮ জুলাই থেকে স্বামীর করোনা পজিটিভ, শ্বাসকষ্ট এবং হার্টে জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তারপর নিজের হাসপাতালেই আমার শুরু হয় অন্য রকমের যুদ্ধ। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যদের সঙ্গে নিজেও স্বামীর চিকিৎসা করি। চিকিৎসক, রোগীর স্ত্রী ও পরিচর্যাকারী—তিনটি দায়িত্বই পালন করি।’
সাদমান খান মুঠোফোনে বলেন, ‘বাইরে থেকে করোনা রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না বলে অনেক অভিযোগ শুনেছি। তবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সে ধারণা পাল্টে গেছে। আমার স্ত্রী চিকিৎসক বলে শুধু এ সেবা পেয়েছি তা মনে হয় না। করিডরে হাঁটার সময় অন্য কেবিনেও চিকিৎসক, নার্সদের আনাগোনা দেখেছি। হাসপাতালটিতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কোনো কমতি নেই।’
স্ত্রী চিকিৎসক হিসেবে কেমন, এ প্রশ্নে সাদমান বললেন, ‘আমি বলব, চিকিৎসক হিসেবে আমার স্ত্রী অসাধারণ। স্ত্রীর পাশাপাশি পরিবার, স্বজনের যে সহায়তা পেয়েছি, তাতে সুস্থ না হয়ে কোনো উপায় ছিল না।’
৩৯তম বিসিএসের গুলশানা আক্তার যখন ঢাকা শিশু হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন ১২ ঘণ্টার ডিউটি শেষে মুখের মাস্ক খুলে ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত অবস্থায় নিজের ছবি তুলে পারিবারিক মেসেঞ্জার গ্রুপে পাঠিয়েছিলেন। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার দেন স্বামী, তারপর তা আলোচনায় আসে। বিবিসি নিউজে (বাংলা) গুলশানাকে নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তবে গুলশানা আক্তারের মতে, শুধু তিনি নন, করোনা হাসপাতাল বা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন শেষে শরীর থেকে সুরক্ষা পোশাক খোলা হলে সব স্বাস্থ্যকর্মীর চেহারাই এমন বিধ্বস্ত থাকে।
সুত্র প্রথম আলো
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)