অভিশপ্ত যে দ্বীপে গুপ্তধন খুঁজতে গেলেই মৃত্যু!
রহস্যময় এক দ্বীপ। প্রচলিত আছে, এ দ্বীপের মাঝেই না-কি লুকানো আছে রাশি রাশি গুপ্তধন। সে আশায় বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপে গিয়ে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। দ্বীপটির মাঝে আছে বিশাল এক গর্ত। লোকমুখে শোনা যায়, গহ্বরের নাম ‘মানি পিট’ অর্থাৎ সম্পদে ভরা গর্ত।
এ দ্বীপের নাম ‘ওক’। এখানেই না-কি লুকায়িত আছে বিপুল সম্পদ। ১৯ শতক থেকে অনেক অভিযাত্রী ও গবেষকরা গুপ্তধন উদ্ধারের কাজ করেছেন। অথচ আজও উদ্ধার সম্ভব হয়নি গুপ্তধনের। বরং চলে গেছে অনেকের প্রাণ।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওক দ্বীপের রহস্যময় গুপ্তধনের সঙ্গে আসলে জড়িয়ে আছে অভিশাপ। ৭ জনের মৃত্যু হলেই না-কি উদ্ধার করা যাবে গুপ্তধন। এ পর্যন্ত গুপ্তধনের লোভে পড়ে ওক দ্বীপে যাওয়া অভিযাত্রীদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কানাডার ওক দ্বীপের মানি পিট নামক গর্তটির খোঁজ প্রথম পেয়েছিলেন ড্যানিয়েল ম্যাকগিনিস নামক স্থানীয় এক কিশোর। তার প্রথম চোখে পড়ে দ্বীপের একটি ওক গাছের নিচে রহস্যজনক গর্তমুখ। ড্যানিয়েল কৌতূহলবশত গর্তটি বরাবর মাটি খুঁড়তে শুরু করেন।
সুড়ঙ্গ থেকে এরপর একেক করে বেরিয়ে আসে কাঠের তক্তা, পাথরের স্ল্যাবসহ বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন। এ কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেরই ধারণা, এ গহ্বরের সঙ্গে ইচ্ছে করেই কাটা হয়েছিল খাঁড়ি (নদী ও সমুদ্রের মিলনস্থলে নদীর মোহনা যথেষ্ট গভীর, উন্মুক্ত ও প্রশস্ত আকৃতিবিশিষ্ট হলে তাকে খাঁড়ি বলে); যাতে সমুদ্রের সঙ্গে সুড়ঙ্গে সংযোগ ঘটানো যায়।
এর ফলে খাঁড়ি দিয়ে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে গহ্বরে লুকিয়ে রাখা সম্পদ সবার আড়াল হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ গহ্বরে আরও পাওয়া যায় সিমেন্টের তৈরি ভল্ট, কাঠের বাক্স এবং পার্চমেন্ট কাগজের পুঁথি। রেডিওকার্বন করে জানা যায়, এসব নিদর্শন ১৬ শতকের।
কয়েক যুগ ধরেই ওক দ্বীপের গহ্বরে চলেছে গুপ্তধন সন্ধান। ১৮ শতকের শুরুর দিকে স্কটিশ জলদস্যু ক্যাপ্টেন কিড মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায় জানিয়েছিলেন, এ দ্বীপে ২০ লাখ ডলারের সম্পদ লুকানো আছে। এরপর থেকে বিগত কয়েক শতকে প্রকাণ্ড গর্তটি নিয়ে চলেছে অনুসন্ধান।
কখনো কোনো অভিযাত্রী, আবার কখনো সংস্থা গুপ্তধন খুঁজে চলেছে। তবে যতবারই আশার আলো দেখা দিয়েছে; ততবারই সমুদ্রের নোনা জলে ভরে গেছে গর্তটি। অভিযাত্রীদের মতে, গর্তটি খনন করলেই সমুদ্রের জল এসে ভরে যায়। এ রকমও হয়েছে, ৩৩ ফুট পর্যন্ত জল এসে ভরিয়ে দিচ্ছে।
গর্তটি কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? এ বিষয় নিয়ে একাধিক তথ্য রয়েছে। অধিকাংশ ভূ-বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি একটি প্রাকৃতিক সিঙ্ক হোল। তাই সেখানে গুপ্তধন থাকারও কোনো সম্ভাবনা নেই। সবটাই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা।
তবে তা মানতে নারাজ গুপ্তধনে বিশ্বাসী মানুষ। আরও জানা যায়, ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের জলদস্যু এডওয়ার্ড টিচ বা ব্ল্যাকবেয়ার্ডও না-কি তার লুণ্ঠিত সব সম্পদই ওই গহ্বরে লুকিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেছিলেন, শয়তান ছাড়া আর কেউ খুঁজে পাবে না ওই গুপ্তধন।
এ ছাড়াও জানা যায়, সপ্তবর্ষের যুদ্ধে কিউবায় লুণ্ঠন চালিয়ে পাওয়া সব সম্পদই না-কি ব্রিটিশরা লুকিয়ে রেখেছে ওক দ্বীপে। আবার অনেকের ধারণা, এ গহ্বরেই লুকিয়ে আছে শেষ ফরাসি সম্রাজ্ঞী মারি আঁতোয়ানেতের অলঙ্কার এবং প্রাসাদের অন্যান্য শিল্পকর্ম।
আগে রহস্যময় এ দ্বীপের মালিক ছিলেন ড্যান ব্ল্যাঙ্কেনশিপ এবং ডেবিড টোবিয়াস। তারা গুপ্তধনের সন্ধানে কয়েক লাখ টাকা বিসর্জন দিয়েছেন। তবুও সন্ধান পাওয়া যায়নি গুপ্তধনের।
২০০৫ সালে টোবিয়াসের কাছ থেকে দ্বীপের অর্ধেক কিনে নেন ‘মিশিগান’ সংস্থার মালিক দুই ভাই, রিক এবং মার্টিন ল্যাগিনা। এখনো না-কি গুপ্তধনের সন্ধান চলছেই!
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)