‘অজুহাত’ সবারই আছে
পুলিশ প্রাইভেটকারটি থামাতেই দেখা গেল ভেতরে গাদাগাদি করে ছয়জন বসে আছেন। লকডাউনে কেন বের হয়েছেন- পুলিশ কর্মকর্তা জানতে চাইলে, ভেতরে বসা বয়স্ক ব্যক্তিটি একটি চিকিৎসাপত্রের ফাইল এগিয়ে দিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা দেখলেন, রোগীকে গত ২৫ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেখা হয়েছে।
‘রিলিজ তো ২৫ জুন হয়েছে। আজ কোথায় গিয়েছেন’- পুলিশ কর্মকর্তা জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি সামনের সিটে বসা এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিতে দেখিয়ে বলেন, ওর চিকিৎসা হচ্ছে। সমস্যা হওয়ায় আজ আবার ডাক্তারের কাছে যেতে হয়েছে।
আজ চিকিৎসার কাগজ কোথায়- পুলিশ জানতে চাইলে ওই মুরব্বি বলেন, আজ কোনো কাগজ দেয়নি।
অনুনয়-বিনয়ের একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা গাড়িটি ছেড়ে দেন। এই ঘটনা কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন সকালে পৌনে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড চেকপোস্টে। এই মহাসড়ক ধরে পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়াও প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।
পুলিশ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল দেখলেই থামাচ্ছেন- কিন্তু সবাই কোনো না কোনো অজুহাত দেখাচ্ছেন। বাইরে বের হওয়ার কারণ একেবারে অযৌক্তিক হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় দেয়া হচ্ছে ছাড়।
মো. রুবেল হোসেন মোটরসাইকেলে স্ত্রী ও বাচ্চা নিয়ে রওনা হয়েছেন। চেকপোস্টে আটকে দেয় পুলিশ। রুবেল বলেন, আমরা শাশুড়ি খুব অসুস্থ, তাই স্ত্রীকে নিয়ে চাঁদপুর যাচ্ছি। পুলিশ জানতে চান- আপনার শাশুড়ি যে অসুস্থ এর প্রমাণ কী? আপনার মোটরসাইকেলে তো হাঁড়ি-পাতিল।
এবার রুবেল বলেন, ‘আমি শ্যামলি গাড়ির ড্রাইভার। বাসাও ছেড়ে দিছি স্যার, তাই সামান্য কিছু মালসামানা ছিল সেগুলোও নিয়ে নিছি।’
এবার রুবেলের স্ত্রী বলেন, ‘স্যার আমরা মিথ্যা কইতাছি না। আমরা মায়ের অসুখ। লকডাউন জানি তারপরও বাইর হইছি। কী করমু স্যার।’
একপর্যায়ে পুলিশ ছেড়ে দেয় মোটরসাইকেলটি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই কর্মী এক মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন, আরোহীর মাথায় হেলমেটও ছিল না। তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়ায় হেলমেট নিতে পারেননি। তারাও জরুরি কাজ করছেন বলে দাবি করেন। পুলিশকে তাদের ছেড়ে দিতে হয়।
ব্যাটারিচালিত রিকশাকেও সুযোগবুঝে মহাসড়কে আসার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এমন একটি রিকশা আসতে দেখে পুলিশ দূর থেকে ইশারা করতেই চালক ঘুরিয়ে উল্টো ছুট।
একটি পিকআপভ্যানে আট থেকে ১০ জনের মতো লোক দাঁড়িয়ে আছেন। পুলিশ থামাতেই তারা বললেন, যাত্রাবাড়ী আড়ত থেকে সবজি নিয়ে এসেছেন তারা সবজিবিক্রেতা। কিন্তু পিকআপে নামমাত্র সবজি ছিল।
রায়েরবাগ চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডেমরা ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের মূল চেকপোস্ট এই মহাসড়কের কুবা মসজিদ এলাকায়। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যারা চলাচল করতে পারবেন, আমরা শুধু তাদেরই অ্যালাও করছি। বাকিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘বিদেশফেরত যাত্রীদের গাড়ি আসছে, আমরা তাদের ছেড়ে দিচ্ছি। শিল্প-কারখানার কর্মী বহনকারী গাড়িগুলোকেও আমাদের চলতে দিচ্ছে হচ্ছে। নিয়ম মেনে চলাচল করায় দুটি মাইক্রোবাসের বিরুদ্ধে আমরা মামলা দিয়েছি।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ থাকবে আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত।
এ সময়ে জরুরি সেবা দেয়া দফতর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসররকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা। জনসমাবেশ হয় এমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না।
কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বুধবার (৩০ জুন) মন্ত্রিপরিষদি বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে ২১টি শর্ত দেয়া হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)