উড়ন্ত বিমানে জীবনরক্ষা : তারেক রহমানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. দোলনের বিরল সেবা


দুবাইগামী একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট দুবাইয়ের উদ্দেশে উড়াল দেয়। ঘণ্টাখানেক পর উড়ন্ত বিমানে হঠাৎ করেই এক মধ্যবয়স্ক নারী যাত্রী জ্বর ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাইটের কেবিন ক্রু মাইকে জরুরি ঘোষণা দেন, ‘ইজ দেয়ার এ্যানি ডক্টর অন বোর্ড’। মানে- বিমানে কোনো ডাক্তার আছেন কি না বলুন। এরই মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে বিমানের বিজনেস ক্লাসের সিটে নিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়। মুহূর্তেই বিমানের ভেতরের দৃশ্য বদলে যায়। এমন দৃশ্য দেখে উড়ন্ত বিমানের যাত্রীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।
ঠিক তখনই এগিয়ে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন। ফ্লাইটে সঙ্গে তার ছাত্র ডা. শামসুর রশিদ দীপু ছিলেন। দুজনেই আসন ছেড়ে বিমানের করিডোরে দাঁড়িয়ে নিজেদের চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতেই কেবিন ক্রুরা এগিয়ে যান। একপর্যায়ে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হলে রোগীকে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়। দ্রুততার সঙ্গে চলন্ত বিমানেই বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে রোগীর জীবন রক্ষা করেন তারা। ওই নারীও অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং এমন বিরল ঘটনার জন্য নিজেকে ধন্য মনে করেন ডা. দোলন।
পরে উড়ন্ত বিমানে মাঝ আকাশে রোগীকে সেবা দেওয়ার এ ঘটনাটি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেন ডা. দোলন। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক্স বিভাগের অধ্যাপক এবং ড্যাবের সাবেক প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। উড়ন্ত বিমানেই রোগীকে সেবা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আরও বিস্তারিত জানান ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন।
সোমবার (১৪ জুলাই) তিনি কালবেলাকে জানান, ১১ জুলাই রাত পৌনে আটটার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করে। তিনিসহ কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্রের ওরল্যান্ডো যাচ্ছিলেন। সেখানে লায়ন্স ক্লাবের ১০৭তম আন্তর্জাতিক কনভেনশন শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে ১৭ জুলাই।
ডা. দোলন বলেন, ফ্লাইটটি উড্ডয়নের দেড় ঘণ্টা পর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাঝবয়সী এক নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভদ্রমহিলার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। গায়ে ভীষণ জ্বর, অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছিল। এ সময় এনাউন্সমেন্ট করা হয় যে, প্লেনে কোনো ডাক্তার থাকলে প্লিজ কেবিন ক্রুর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সঙ্গে সঙ্গে আমি এবং সঙ্গে থাকা আমার ছাত্র ডা. দীপু এগিয়ে গেলাম। প্লেনেই ইসিজি করা হলো, রক্ত পরীক্ষা করা হলো, ব্লাড প্রেশার চেক করা হলো। ক্লিনিক্যালি ইভালুয়েট করে দুজন পরামর্শ করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা ওই নারীর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা শেষে কিছু ওষুধ ও তরল খাবার খাওয়ানো হয়। এভাবেই মুমূর্ষু রোগীকে সেবা দিয়ে বিমানেই যাত্রীর অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল করেন।
তিনি আরও জানান, ফলে বিমানটির জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হয়নি, যা একদিকে যাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, অন্যদিকে শতাধিক যাত্রীর সময় ও নিরাপত্তা রক্ষা করেছে। রোগীর অবস্থা উন্নতির দিকে গেলে অন্য যাত্রীরাও শান্ত হন এবং ঘুমিয়ে যান। যেহেতু আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওরল্যান্ডো যাব সেজন্য ফ্লাইটটি দুবাই এয়ারপোর্টে অবতরণ করলে ভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা নামার সময় সবাই ধন্যবাদ দিচ্ছিল। কারণ ভদ্রমহিলা তখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছিলেন।
তবে অসুস্থ ওই নারীর চিকিৎসা করার পেছনে বড় ঘটনা রয়েছে বলে জানান ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন। তিনি বলেন, আমরা ডা. পরিচয় দিলেও কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ রোগীকে সেবা দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। বরং তারা আমাদের চিকিৎসক হিসেবে প্রমাণপত্র দেখাতে বলে। যেহেতু সব জিনিস লাগেজে দেওয়া ছিল সেজন্য সঙ্গে খুব বেশি কোনো জিনিস নেওয়া হয়নি। ফলে ডাক্তার হিসেবে প্রমাণপত্র দেখাতে কিছুটা সময় লেগে যায়। একপর্যায়ে আমার ছাত্র ডা. দীপু তার মোবাইলে থাকা বিএমডিসির সনদের স্ক্রিনশট দেখায়। তবে আমার কাছে কোনো প্রমাণপত্রই তখন ছিল না। কিন্তু মানিব্যাগে থাকা ভিজিটিং কার্ড দেখাই। তবুও ফ্লাইট কর্তৃপক্ষ মানতে চায়নি। অবশ্য কিছুদিন আগে থাইল্যান্ডের ভিসা করার সময় বিএমডিসির সনদ জমা দেওয়া হয়েছিল। সেই ভিসার একটি স্ক্রিনশট মোবাইলে ছিল। সেটি দেখানোর পর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
বিমানের ভেতর আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দেখে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে জানিয়ে ডা. দোলন আরও বলেন, অসুস্থ নারী আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি জ্বর ও হৃদরোগে আক্রান্ত। শরীরের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ও বিপি কমে যাচ্ছিল। মূলত ওই নারী খালি পেটে আগেই কিছু ওষুধ খেয়েছিলেন। যে কারণে তার সমস্যা বেশি হচ্ছিল। সেজন্য আমরা কিছুটা চিন্তিত হয়ে যাই। তবে বিমানের ভেতরেই প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম যেমন- ইসিজি মেশিন, স্টেথেস্কোপ, ডিজিটাল অক্সিমিটারসহ বিভিন্ন জিনিস থাকায় তারা কিছু আশাবাদী হয়ে ওঠেন। তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা, মেডিকেল কিট ব্যবহার করে অক্সিজেন ও ওষুধ প্রয়োগের দ্বারা রোগীকে সারিয়ে তোলেন।
তিনি বলেন, অসুস্থ নারীর জরুরি প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা করা হয়। প্রথমে রোগীর গ্যাসের সমস্যার জন্য সেকলো ওষুধ খাওয়াতে গেলে বিমান কর্তৃপক্ষ বলে, বিমা পলিসি অনুযায়ী অন্য ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। পরে তাদের নীতি অনুযায়ী অ্যান্টাসিড গ্রুপের অন্য ওষুধ এবং তরল জিনিস খাওয়ানো হয়। ততক্ষণে অসুস্থ নারীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ফ্লাইটটি যখন দুবাই বিমানবন্দরে পৌঁছায় তখন যাত্রীরা নামার সময় হাততালি দিয়ে তাদের অভিবাদন ও ধন্যবাদ জানান।
এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ডা. দোলন বলেন, মহান আল্লাহ ভবিষ্যতেও যেন এমন গুরুত্বপূর্ণ সংকটে মানুষের কাজে লাগার তৌফিক আমাকে নসিব করেন। তিনি জানান, বিমানের ক্রু এবং সহযাত্রীরা তার এই মানবিক ও পেশাদার ভূমিকার প্রশংসা করেন। বিমান কর্তৃপক্ষও তাকে আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানায়।
উল্লেখ্য, ডা. দোলন বিগত ১/১১-এর সরকারের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিকিৎসা করার কারণে বিএসএমএমইউ থেকে চাকরিচ্যুত হন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৬ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বিএসএমএমইউ) যোগদান করেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

ভারতে হা*মলার ভয়ে হেলমেটে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে ঘুরছেন যুবক!
মাথায় হেলমেট লাগিয়ে তাতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে রাস্তায় ঘুরছেন এক যুবক। সামাজিকবিস্তারিত পড়ুন

মুখ দিয়ে লিখেই এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেন মনিরামপুরের লিতুনজিরা
হেলাল উদ্দিন, মনিরামপুর : হাত-পা ছাড়া জন্ম নেয়া মেধাবী লিতুনজিরা মুখ দিয়েবিস্তারিত পড়ুন

বৈশ্বিক গড় আয়ুর চেয়ে বেশি দিন বাঁচছেন বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৈশ্বিক গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। দেশের নারী ও পুরুষবিস্তারিত পড়ুন