কলারোয়ায় আমের মুকুলের সুবাসে বসন্তের বার্তা
এস এম ফারুক হোসেন: ঋতুরাজ বসন্তের বার্তা নিয়ে গাছে গাছে ছেয়ে গেছে আমের মুকুল। বর্তমানে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার প্রতিটি বাড়ি ও আম বাগান আমের মুকুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। সহজ চাষ পদ্ধতি ও তুলনামূলক কম পরিচর্যায় লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে উপজেলাতে আমের চাষ।
উপজেলায় বিভন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামগুলোর মধ্যে খালি জায়গা, পুকুর পাড়, রাস্তার ধারে ও বাড়ির আঙ্গিনার গাছগুলোতে শোভা পাচ্ছে কেবলই আমের মুকুল। মুকুলে মুকুলে ছেঁয়ে আছে আম গাছের প্রতিটি ডাল। চারদিক ছড়াচ্ছে মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। তবে আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা।
এদিকে, মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে আমের বাগানসহ বাড়ি বাড়ি লাগানো আম গাছগুলো। তবে বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের আম গাছে বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে স্বপ্ন। হিমসাগর, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, আম্রপালি, ল্যাংড়া কাঁচা মিঠা,স্থানীয় জাতের আম চাষ হয় উপজেলায়।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় হিমসাগর ৩৩০হেক্টর, ল্যাংড়া ১০৪ হেক্টর, আম্রপলি ১৫৬ হেক্টর, গোবিন্দভোগ ৫২ হেক্টর, অন্যান্য (স্থানীয়) ১৩ হেক্টর মোট ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। উপজেলাতে হিমসাগর আমের বাগান ৬২০ টিকে, ল্যাংড়া আমের বাগান ৩৫০টি, আম্রপলি আমের বাগান ৪৪০টি গোবিন্দ ভোগ আমের বাগান ১৬০ টি,অন্যান্য (স্থানীয়)আমের বাগান ৭০টি মোট ১৬৪০ টি বাগানের পরেও কম যায় না বাড়িতে বাড়িতে লাগানো গাছগুলো। সব মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করছেন চাষিরা।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে আমের আবাদ বেশি হয়। কেরালকাতা ইউনিয়ন, চন্দনপুর ইউনিয়ন, সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন, হেলাতলা ইউনিয়ন, কুশোডাংগা ইউনিয়ন, যুগিখালী ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ অন্য সকল ইউনিয়নে আমের আবাদ হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে এসব গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। বসন্তের শুরুতে কিছু গাছের মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। নাবি জাতের আমের ক্ষেত্রে তা আরও কয়েক সপ্তাহ লাগবে।
বাগান মালিকরা জানান, মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুল রোগ বালাইয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শুভ্রাংশু শেখর দাস জানান, ঘন কুয়াশা বেশিদিন স্থায়ী না হওয়ায়ও আবহাওয়া অনুকুল থাকায় যা মুকুল বের হবে প্রায় সবই টিকে যাবে।
তবে আম রপ্তানির বিষয়ে তিনি জানান, গত বছর রপ্তানীযোগ্য আম উৎপাদনে কিছু সমস্যা থাকায় যেমন উৎপাদন খরচ বিবেচনায় আমের বাজার মূল্য কম হওয়ায়, উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি, সময় মতো রপ্তানীকারক বলা ক্রেতা না হওয়ায় রপ্তানি কম হয়েছে।
তিনি বলেন, সংরক্ষণগার না থাকায় সংগ্রহোত্তর অপচয় বেশি হয়, উপজেলা আমচাষীদের দাবি খরচ বিবেচনায় বাজার মূল্য নির্ধাকরা, সঠিক সময়ে রপ্তানীকারক বলা ক্রেতা উপস্থিতি নিশ্চতকরনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ, উপজেলাতে সংরক্ষণগার এবং প্যাকেজিং হাউস স্থাপন করা, রপ্তানির জন্য এখনো আমের বাগান নির্ধারণ করা হয়নি। জেলাতে পরবর্তী সভায় সব ঠিক হবে।
গত ৩০ জানুয়ারী দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগদানের পর ৬ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে সম্পুরক প্রশ্ন উপস্থাপন করে সাতক্ষীরা-১ আসনে এমপি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন বলেন, তালা-কলারোয়া মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কৃষি নির্ভর কলারোয়ার উর্বর মাটিতে বিপুল পরিমানে আমি, ফল ও শাকসবজি উৎপাদনে এই অঞ্চলের কৃষকদের ভূমিকা অপরিসীম এ কথা তুলে ধরে ফল ও সবজি চাষীদের আর্থিকভাবে আরো লাভবান করতে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ বিশেষায়িত হিমাগার নির্মানে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করেন। জবাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী বিশেষায়িত হিমাগার নির্মাণে সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)