কলারোয়ায় ভেজাল আইসক্রীমে সয়লাব, শিশুরা মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: মৌসুম পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে দিনের তাপমাত্রা। যার দরুন দিনজুড়ে অনেকটাই গরমের অনুভূত হচ্ছে। তাই যেন গরমের অনুভূত হওয়াতে অনেকেই দৌড়ে গিয়ে তৃষ্ণা মিটানোর জন্য হাতে তুলে নিচ্ছে ভেজাল আইসক্রীম, হিম ঠান্ডা বরফ মিশ্রিত লেবুর শরবত, আখের রস বা ডাব। অনেকেই আবার খাচ্ছে কোমল পানীয়।
মৌসুম পরিবর্তনে গরমের ভাব পড়তে না পড়তে কলারোয়া উপজেলায় দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে অনুমোদনহীন বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োগে তৈরীকৃত আইক্রীমের তৈরী ও বাজারজাতের দৌড়-ঝাপ।
জানা যায়, সাধারণত একটি মানসম্পন্ন আইসক্রীম তৈরীতে দুধ, চিনি, ভেজিটেবল ফ্যাট, কোকোনাট অয়েল, স্ট্যাবিলইজার, ফুড কালার, ফুড ফ্লেবার ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এর বিপরীতে উপজেলার বাকসা এলাকার চিপা-চাপাই বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষন অধিদপ্তর, স্যানেটারি বিভাগ ও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ইতিমধ্যেই গড়ে তুলেছে রমরমা ব্যবসা। মৌসুম ভিত্তিক এক শ্রেনীর অসাধু আইসক্রীম বিক্রেতা বা প্রতিষ্ঠান এসব অনুমোদনহীন নিন্মমানের আইসক্রীম তৈরি করছে। তাদের উৎপাদিত আইসক্রীমে উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে ঘনচিনি, স্যাকারিন, নিন্মমানের কালার, সুইটিক্স ও ফ্লেভারসহ নানা রাসায়নিক।
উৎপাদিত আইসক্রীমের তালিকায় রয়েছে কুলফি, রোবো, আইসবার, চকবার, কাপ, বল, লেমন বা অরেজ্ঞললি, মিষ্টি দই, ক্যাটবেরিসহ হরেক নামের আইসক্রীম। উৎপাদিত আইসক্রীম গুলো আকর্ষনীয় করতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন নামি দামী কোম্পানির মোড়ক। যা অতি সহজলভ্য দেশের বিভিন্ন পাইকারী বাজারে হাত বাড়ালেই মিলছে অনাসায়ে এ সকল নকল মোড়ক। একই তো নকল মোড়ক তারপর আবার গায়ে নেই উৎপাদন বা মেয়াদর্ত্তীনের তারিখ, নেই ব্যাচ নং বা নির্ধারিত মূল্য।
যে সব উপাদান এসব আইসক্রিমে ব্যবহার করা হয় তা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের অস্থিমজ্জার ক্ষতি হতে পারে। যা শিশুদের মানসিক বিকাশে এ ধরনের রাসায়নিকের প্রয়োগ অত্যন্ত ক্ষতিকর।
উপজেলার ক্রেড়াগাছি ইউনিয়নের দফাদার বাকসা গ্রামের রহমত উল্লার ছেলে ইচছাক তার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন একটি অবৈধ ভেজাল আইসক্রীম ফ্যক্টরী। তবে এ ফ্যাক্টরির নিজস্ব কোনো নাম নেই। সকলেই চলে বাজার থেকে কিনে আনা মোড়কের ওপর নির্ভর করে।
অভিভাবক সাহিনা বেগম জানান, এই যে গরম পড়া ধরলো এখন বাচ্চাদের বাইনা মেটাতে আমাদের এই অস্বাস্থ্যকর আইসক্রীম কিনে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। সব সময় তো হাতে টাকা থাকেনা যে নামিদামি কোম্পানীর আইসক্রিম কিনে দেব, তাই বাধ্য হয়ে ২/৫ টাকার আইসক্রীম কিনে দিতে হয়ে। বিশেষ করে বাচ্চা ললি আইসক্রীম পছন্দ করে, তাই বাধ্য হয়ে কিনে দিতে হয়।
উপজেলার গয়ড়া এলাকার বাসিন্দা সমাজ সেবক গোলাম রব্বানী বলেন, আইসক্রিম বাচ্চাদের খাওয়ানোই ঠিক না। তবুও বাইনা ধরলে আর কি করা দিতেই হয়। তবে দিলে ভালো মানের আইসক্রীম দেওয়া উচিত। তবে গরম পড়লেই ভেজাল আর নকল আইসক্রীমে সয়লাব হয়ে যায়। যে সকল প্রতিষ্ঠান ভেজাল আইসক্রীম উৎপাদন করে প্রশাসনের উচিত এই সকল প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া। কারণ শিশু খাদ্যের ব্যাপারে কোন আপোষ নেই।
কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শফিকুল ইসলাম জানান, যে কোন আসক্রিমই শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। তারপর যদি আবার রাসায়নিক প্রয়োগে তৈরী করা হয়। এই সকল আইসক্রীম স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সাধন করে। বিশেষ করে শিশুদের অস্থিমজ্জার ক্ষতি হতে পারে। একই সাথে কিডনি ও লিভারের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে করে শিশুদের মানসিক বিকাশে চরম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ভেজাল আইসক্রীম ফ্যক্টরির মালিক ইচছাক দফাদার বলেন, সকলকে কম বেশী ম্যানেজ করে গরমের সময় কিছু মাল বানায়। সেটাতে কোন সমস্যা হয় না। সোমবারে সাপ্তাহিক হাজিরায় থানায় যাব, আপনাদের নাম্বার দেন সেখানে দেখা করে কিছু ব্যবস্থা করব।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার সহকারি পরিচালক মোঃ নাজমুল হাসান হ বলেন, আমাদের নিয়মিত ভেজাল পণ্য তৈরির ব্যাপারে অভিযান অব্যহত আছে। ভেজাল ও অনুমোদনহীন ও নোংরা পরিবেশে আইসক্রিম ফ্যাক্টরী সত্যতা মিললে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)