কলারোয়ায় দুই সন্তান ও মায়ের মৃতদেহ উদ্ধার, আত্মহত্যা নাকি হত্যা?
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বসতবাড়ির ঘর থেকে মা ও দুই শিশুসন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের লাঙ্গলঝাড়া বাজারের পাশে পূর্বপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
উদ্ধার হওয়া তিন মৃতদেহ হলো- মা মাহমুদা খাতুন (৩২), ছেলে মাহফুজ (১০) ও মেয়ে মোহনা খাতুন (৬)।
তবে মাকে ঘরের মধ্যে আড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
আর ছেলে ও মেয়ের মরদেহ ঘরের মেঝে থেকে উদ্ধার করা হয়।
মাহফুজা ওই গ্রামের ট্রাক্টর চালক শিমুল হোসেনের স্ত্রী।
শিমুল বাড়িতে ছিলেন না, কর্মসূত্রে তিনি ছিলেন বাগেরহাট।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবীর জানান, ‘কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বা এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেই ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে লাশ তিনটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত করা হবে।’
খবর পেয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শামসুল আলম শামস, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ নাজনীন খুকু, লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনের নৌকার প্রার্থী অধ্যাপক এমএ কালাম, বর্তমান চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামসহ, র্যাব, পিবিআই, সিআইডি, ডিবি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পিপিএম (বার) বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে পারিবারিক বিষয়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আত্মহত্যা নাকি হত্যা কিংবা অন্য কোন কারণও আছে সেটা পোস্টমার্টেম ও তদন্ত শেষে বলা যাবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘প্রতিবেশিরা তাদের ডাকতে গিয়ে জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে আড়ায় মৃতদেহ ঝুলে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। আত্মহত্যা নাকি হত্যা সেটা বিশ্লেষনের চেষ্টা চলছে।’
তারা জানান, ‘বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে লাঙ্গলঝাড়া বাজার থেকে নাশতা কিনে বাড়িতে আনেন মাহমুদা। এরপর খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘরের মধ্যে তাদের তিনজনের মরদেহ দেখে স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দেন।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মৃত মাহফুজার বড় ভাই শার্শার বসতপুর গ্রামের মশিয়ার বলেন, ‘শবে বরাতের দিন তার ভাগ্নে মোহনাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে পার্শ্ববর্তী এক ছেলে। বিষয়টি মেম্বর-চেয়ারম্যানকে জানালে তারা কোন সুরহা না করে বলেন যে সামনে ভোট, ভোটের পর দেখবো। সম্ভবত মানসম্মান আর অন্যের কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে ছেলে মেয়ে কে ঝুঁলিয়ে দিয়ে মা আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
এদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিশু কন্যাকে যৌন নির্যাতনের বিচার না পেয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন মা মাহফুজা খাতুন (৩২)।
শিমুল হোসেনের পিতা আব্দার আলী জানান, তিন দিন আগে খেলা করার সময় স্থানীয় লাল্টুর ছেলে হৃদয় (১৪) শিশু মোহনাকে যৌন নির্যাতন করে। মোহনা বিষয়টি বাড়ি এসে মা’কে জানালে মাহফুজা স্থানীয় ইউপি সদস্য সাফিজুলের কাছে বিচার চান। তখন সাফিজুুল সামনে নির্বাচন উল্লেখ করে কয়েকদিন পরে বিচারের আশ্বাস দেন। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনিও মামলা ও একই পরামর্শ দেন। পরে মাহফুজা তার কাছে (আব্দার আলী) মামলা করার কথা বললে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ, মামলার খরচ চালাবো কিভাবে। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি (আব্দার আলী) কাজে গেলে মাহফুজা দুই সন্তানকে মেরে নিজেও আত্মহত্যা করেছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা আরো জানান, ‘কয়েক দিন আগে প্রতিবেশী লাল্টুর ছেলে হৃদয় শিশু মোহনা খাতুনকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। পরে শিশুটি তার মাকে এ ব্যপারে জানায়। এতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে বিচারের জন্য বলেন মোহনার মা মাহমুদা। পরে ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর বিচার করার আশ্বাস দেন।’
ভিডিওতে দেখুন….
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)