খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, দেওয়া লাগছে রক্ত
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তার রক্তপাত অনুসন্ধান করার জন্য বুধবার (২৪ নভেম্বর) সিসিইউ থেকে নিয়ে এসে কোলনোস্কোপি করা হয়েছে।
বুধাবার (২৪ নভেম্বর) রাতে শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা জন্য সিসিইউ থেকে বের করা হয় খালেদা জিয়াকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি তার পাশে ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে ৬ ব্যাগের উপরে খালেদা জিয়ার রক্ত দেওয়া লেগেছে। তার হিমোগ্লোবিন লেভেল নেমে গিয়েছিল, বুধবার রাতে সর্বশেষ ৮.৫ ছিল।
তার আগে মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) খালেদা জিয়ার রক্ত বমি হয়েছিল। তাই জরুরি চিকিৎসার জন্য বুধবার মেডিকেল বোর্ড মিটিংয়ে বসে। আর ডায়াবেটিস এখনো অনিয়ন্ত্রিত আছে। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ থাকায় পেশার এখনো ওঠানামা করছে।
খালেদা জিয়ার ইউরিন ইনফেশনটা এখনো রয়েছে। পাশাপাশি লিভারের যে সমস্যা রয়েছে তাও ক্রমেই বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এ বিষয়ে কথা না বললেও বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয় জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঢাকাসহ সারা দেশে যুবদলের বিক্ষোভ ও আগামীকাল শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বাদ জুমা রোগমুক্তির জন্য দোয়া অনুষ্ঠান। এরপর ২৮ নভেম্বর সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ (ঢাকায় হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে), ৩০ নভেম্বর বিভাগীয় সদরে বিএনপির সমাবেশ।
আগামী ১ ডিসেম্বর সারা দেশে ছাত্রদলের সমাবেশ, ২ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা দলের মানববন্ধন, ৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে কৃষক দলের সমাবেশ এবং ৪ ডিসেম্বর মহিলা দলের মৌন মিছিল।
এসময় মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এসব কর্মসূচি পুরোপুরি নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর। প্রয়োজনে কর্মসূচি পরিবর্তন হতে পারে।
বিএনপির মহাসচিব জানান, দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ কর্মসূচি গৃহীত হয়। এর পর তা দলের যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক, ঢাকা মহানগরীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত হয়।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবিরসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে আবার ঢাকায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাত থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে সিসিইউতে রাখা হয় তাকে। কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেন।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বহু বছর ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। অসুস্থতার জন্য এর আগে টানা ২৬ দিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া।
এর আগে এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। পরে করোনা পরবর্তী জটিলতায় ২৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। সে সময় এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন।
পরে করোনার টিকা নিতে তিনি দু’দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান।
গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার শরীরে জ্বর দেখা দেয়। এরপর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গত ২৫ অক্টোবর শরীরের টিউমার ধরা পড়ায় খালেদা জিয়ার বায়োপসি করা হয়।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলে খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়। করোনার কারণে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্ত সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এখন পর্যন্ত চার বার খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় বাড়ানো হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)