ছেলেরা উচ্চশিক্ষিত, ৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন কালাম
ইচ্ছে থাকলে বয়স কোনো বাধা নয় প্রমাণ করলেন শেরপুরের ৬৭ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদ। তিনি এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ২.৯৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছেলেরা সব উচ্চশিক্ষিত। আর তাদের বাবা ৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এ বছর পাস করলেন। এবার এসএসসি পরীক্ষায় ২.৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় হয়েছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আলোচনা আবুল কালাম আজাদ ওরফে ‘কবি কালাম’।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুল থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। আবুল কালাম এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার বিষয়টি জানান।
এলাকায় তিনি ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই বছর তাদের বাড়িতে আগুন লাগে। আগুনে তার বই-খাতাসহ পরিবারের সবকিছু পুড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে তার পরিবার। কাজ শুরু করতে হয় তাকে। ফলে পড়াশোনা আর শেষ করা হয়নি তার। তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকরি নেন একটি ডকইয়ার্ডে। ঢাকায় থাকেন ২২ বছর। এ সময় বিয়ে করেন। ১৯৯৫ সালে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে ১৮ বছর প্রবাসজীবন কাটান। ২০১৩ সালে শ্রীবরদীর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
এসএসসি পরীক্ষা দিতে না পারার দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। পড়াশোনার প্রতি দুর্বলতা থেকেই তিনি ২০২০ সালে বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হন। এরপর গত সেপ্টেম্বরে রাহিলা কাদির উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
পরীক্ষায় পাসের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছোট ছেলে আরিফুলের কাছ থেকে পরীক্ষায় পাসের খবরটি প্রথম জানতে পারেন তিনি। এসএসসি পাস করতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে। এই বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করাটা ছিল তার কাছে একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। সেই চ্যালেঞ্জে তিনি প্রাথমিকভাবে জয়ী হয়েছেন। এখন আরও অনেক দূর যেতে হবে। তিনি উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান।
তিনি আরও বলেন, পড়ালেখার প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা। সব সময় সংবাদপত্র ও বই পড়ি। গান লিখি। কবিতা লিখি। কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছি। এসবের পাণ্ডুলিপি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করছি। শিক্ষা আর জ্ঞানার্জনের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি। সুশিক্ষা মানুষের জীবন ও মনকে উন্নত করে। কুসংস্কার থেকে মুক্ত রাখে। নারীদের শিক্ষা গ্রহণের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, স্বশিক্ষিত আবুল কালাম আজাদের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের খবর শুনে তিনি ও এলাকার লোকজন খুব খুশি হয়েছেন। তিনি বৃদ্ধ বয়সে ধৈর্য ধরে পড়ালেখা করে এসএসসি পাস করেছেন। তার এই কৃতিত্বের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)