নাটোরের যে গ্রামে ২শ’ বছরেও পুলিশ যায়নি, হয়নি মামলা, শতভাগ শিক্ষিত
নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের হুলহুলিয়া গ্রামটি বাংলাদেশের একটি আদর্শ গ্রাম। সংঘাতহীন এই গ্রামে রয়েছে ১৩টি পাড়া। আর নিজস্ব গঠনতন্ত্র দিয়ে পরিচালিত হয় গ্রামটি। ১৫ পৃষ্ঠার গঠনতন্ত্র দ্বারা একটি পরিবারে আবদ্ধ হয়েছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
ফলে সেখানে ২শ’ বছর ধরে প্রবেশ করেনি কোনো পুলিশ। এমনি সেখানে হয়নি একটি মামলাও।
নাটোর শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের এই হুলহুলিয়া গ্রামের প্রবেশ পথের ৫ গজ পার হলেই হাতের বাম পার্শে দেখা যাবে হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ। নাম উন্নয়ন পরিষদ হলেও গ্রামবাসীর কাছে এটি বিচারের সর্বোচ্চ স্থান।
এলাকাবাসীরা জানান, তারা ১৩ টি পাড়া থেকে দুই বছরের জন্য এই পরিষদ ২০ জন সদস্য ও ৫ জন উপদেষ্টা মনোনীত করেন। আর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সহ চেয়ারম্যান।
গ্রামটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনো পাড়ায় কারো কোনো সমস্যা হলে সেই পাড়ার মনোনীত সদস্যরা ওই সমস্যার সমাধান করবেন। সেখানে সমাধান না হলে হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদে আবেদন করতে হবে। উন্নয়ন পরিষদে সমস্যার সমাধান না হলে ৩০ দিনের মধ্যে দেশের প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে হবে। তবে এই গ্রামটির কোনো সদস্যকে এখন পর্যন্ত দেশের প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে হয়নি।
হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল তৌফিক পরশ বলেন, দুইশ’ বছর আগ থেকে সামাজিকভাবে এই গ্রামের সকল সমস্যার সমাধান চলে আসছে। তবে ১৯৪০ সালে মরহুম জালাল উদ্দিন মৃধাকে প্রথম চেয়ারম্যান করে হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়। আর এই সময় থেকে তাদের গঠনতন্ত্র দিয়ে চলছে এই গ্রাম।
তিনি বলেন, শতভাগ শিক্ষিত গ্রামটির অধিকাংশ মানুষ উচ্চ শিক্ষিত। গ্রামটির ১শ’ জনের অধিক ডাক্তার, ২শ’ জনের অধিক ইঞ্জিনিয়ার, ১১ জন বিচারকসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন। গ্রামটিতে ২৫ বছর ধরে সর্বনিম্ন লেখাপড়া জানা মানুষটিকেও কমপক্ষে এসএসসি পাস করতে হবে।
আল তৌফিক পরশ জানান, গ্রামটির কারো লেখাপড়ার খরচ বহন করার সামর্থ্য না থাকলে তাদের পরিষদ থেকে তা বহন করা হয়।
চৌগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল আলম ভোলা জানান, এছাড়া গ্রামটির কর্মক্ষম কোনো ব্যক্তি বেকার থাকেন না। ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার পাশাপাশি ২০১৬ সালে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থাপন করা আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার। আইসিটি ট্রেনিং সেন্টারে ৫ বছর ৬৫০ জন শিক্ষার্থীকে অনলাইনে আয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষম করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের দ্বিতীয় তলায় রয়েছেন কমিউনিটি সেন্টার ও রেস্ট হাউজ। অন্য গ্রামের বাসিন্দারা এগুলো ব্যবহার করলে ভাড়া নেওয়া হলেও এই গ্রামের বাসিন্দারা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, গ্রামটির বাসিন্দারা একটি বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। আর উচ্চ শিক্ষার কারণে এখানে সবাই সচেতন। এতে এখানে বড় ধরনের অপরাধ ঘটেনা। ছোট-ছোট অপরাধ ঘটলেও গ্রামবাসী একই বন্ধনে থাকায় তারা তা সমাধান করে নেন দ্রুত।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, গ্রামটি ৬ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ৪ হাজার জনই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থায় উচ্চ পদে কর্মরত রয়েছেন। ২শ’ বছর ধরে গ্রামবাসী তারা সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছেন। গ্রামের সদস্যদের অপরাধ না করার প্রবণতা সারা দেশের মডেল এটি।
আর গ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে সারা বাংলাদেশের গ্রামগুলোও এমন হওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি।
তথ্যসূত্র: সময় সংবাদ টিভি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)