বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলো টানা ৬ সপ্তাহ
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কের জেরে গত সপ্তাহে একদিনেই জ্বালানি তেলের দাম কমেছে প্রায় ১০ মার্কিন ডলার। তবে এর আগে থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছিল নিম্নমুখী। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের খবর অনুসারে, টানা ছয় সপ্তাহ তেলের দাম কমেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। সপ্তাহের হিসাবে ২০১৮ সালের পর টানা এতদিন তেলের দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকতে আর দেখা যায়নি।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম কমেছে অন্তত ২ দশমিক ৮ শতাংশ। এতে বড় প্রভাব রয়েছে ওমিক্রন আতঙ্কের। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, করোনার নতুন এই ধরন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে জ্বালানি তেলে চাহিদায় আবারও ধস নামতে পারে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ছয়টি অঙ্গরাজ্যে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এর বিষয়ে বিশ্বকে প্রথম সতর্ক করা দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) থেকে সংক্রমণের হার অন্তত চারগুণ বেড়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী জানুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে দৈনিক আরও চার লাখ ব্যারেল তেল ছাড়ার ঘোষণা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওপেক ও এর মিত্ররা। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যে তেলের সরবরাহ বাড়লে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম আরও কমে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ওন্ডা করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক এড ময়া বলেন, এমনিতে স্বল্পমেয়াদী চাহিদা পরিস্থিতি খুবই নড়বড়ে, তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যদি নতুন বিধিনিষেধ দেয়, তাহলে চলতি মাসের শেষের দিকে বাজারে অতিরিক্ত তেল সরবরাহ দেখা যেতে পারে।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে এই প্রতিবেদন লেখার সময় অয়েল প্রাইস ডটকমে দেখা গেছে, এদিন বিশ্ববাজারে ডব্লিউটিআই তেলের দাম ০.৩৬ শতাংশ অর্থাৎ ০.২৪ ডলার কমে প্রতি ব্যারেল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ দশমিক ২৬ ডলারে। অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম ০.৩০ শতাংশ অর্থাৎ ০.২১ ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৯ দশমিক ৮৮ ডলার। এছাড়া হিটিং অয়েলের দাম ০.২৪ শতাংশ কমে হয়েছে ২ দশমিক ০৯৮ ডলার।
করোনার প্রকোপের মধ্যে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল ২০২০ সালের নভেম্বর থেকেই। তবে ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে উঠে আসে গত জুনে। এরপর অক্টোবরে এসে তেলের দাম বৃদ্ধির পালে আবার নতুন করে হাওয়া লাগে। এতে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৪ ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা ছিল গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার প্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় সরকার। ওইদিন রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমাতে নভেম্বরের শেষের দিকে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা দেশগুলো নিজেদের মজুত ব্যবহারের ঘোষণা দেয়। এতে কিছুটা প্রভাবিত হয় তেলবাজার। গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে করোনার নতুন আরেকটি ধরন (ওমিক্রন) শনাক্ত হওয়ার খবর জানায়। এর কয়েকদিনের মধ্যে সেটি পাওয়া যায় আরও ডজনখানেক দেশে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় এবং তার সঙ্গে সঙ্গেই কমতে শুরু করে অপরশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)