মা-বাবাকে রেখে সবাইকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত কলারোয়ার সেই হাস্যোজ্জল নয়ন
কাঁদিয়ে চলেই গেলো কলারোয়ার সেই হাস্যোজ্জল নয়ন।
চিরনিদ্রায় শায়িত হলো মা-বাবা, ভাই-বোন ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীদের রেখে।
সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভাধীন মুরারীকাটি গ্রামে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
ব্লাড ক্যান্সারের কাছে হার মেনে স্বল্পজীবনযুদ্ধে হার না মানা যুবক সবার প্রিয়মুখ নয়ন রবিবার (১০ এপ্রিল) পবিত্র মাহে রমজানের ৮ম রোজার দিন সন্ধ্যার দিকে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
সোমবার সকাল ১০টায় ২২বছর বয়সী নয়ন হোসেন রাজুর জানাযা কলারোয়া সরকারি পাইলট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযাপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, পৌর মেয়র প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বুলবুল, কলারোয়া সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু নসর, সাতক্ষীরা জেলা মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর তাজুল ইসলাম রিপন, কলারোয়া উপজেলা সভাপতি সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামিমুজ্জামান টিপু, মানবিক কলারোয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী আশরাফুল হোসেন রিপন প্রমুখ।
কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান, পাবলিক ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শেখ কামাল রেজা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক এমএ হাকিম সবুজ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বাবু, বাপ্পি, প্রভাষক আরিফ মাহমুদ, মাস্টার শেখ শাহাজাহান আলী শাহীন, মানবিক ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, ছাত্র ও অন্যান্যরাসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ নামাজে জানাযায় অংশ গ্রহন করেন।
জানাজায় ইমামতি করেন কলারোয়া উপজেলা জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা মতিউর রহমান।
উল্লেখ্য, সর্বদা হাসিমুখের নয়ন হোসেন রাজু এসএসসি ২০১৬ সালের ব্যাচের ছাত্র। বয়স খুব জোর ২২ বছর। বাসা সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া পৌরসভাধীন মুরারীকাটি ৮নং ওয়ার্ডে। পিতার নাম রুহুল আমিন।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা মারাত্মক খারাপ। স্বাভাবিকভাবেই কলারোয়া বাজারে একটি মোবাইলের দোকানে সেলস ম্যান হিসেবে কাজ করতো। সেখান থেকে পাওয়া সামান্য বেতন থেকেই চলতো সংসারের খরচ। পড়ালেখা ছিলো মূলত পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দেয়ার মতোই। মাস চারেক আগে ব্লাড ক্যান্সারে ধরা পড়ে নয়নের। তখন ঠিকানা হয় হাসপাতালের বেড। আর ১০ এপ্রিল চলে গেলো স্থায়ী ঠিকানায়।
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত নয়ন গত কয়েক মাস রাজধানী ঢাকার ক্যান্সার হাসপাতাল ও সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো। চিকিৎসকদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে এদিন কলারোয়া আনার কথা ছিলো। তার আগেই সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
অত্যন্ত মিশুক ও সবারপ্রিয় নয়নের মৃত্যুর খবর পরিচিত যারা জানতে পারলেন তাদের অনেকের চোখে পানি এসে গেলো অজান্তেই। রক্তের কোন আত্মীয় নয়, কিন্তু আত্মার বাঁধনের প্রিয় নয়নের মৃত্যুর খবর যেনো মুহূর্তেই মন মুষড়ে দিলো। রক্তের কারণেই অকালে নয়ন পাড়ি জমালো আসল ঠিকানায়। ব্লাড ক্যান্সারের কাছে হার মানতে বাধ্য হলো স্বল্পজীবনের হার না মানা সবার প্রিয়মুখ নয়ন।
কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, ‘নয়ন, আজ আর আমাদের মাঝে নেই। সদ্য হাস্যোজ্জ্বল একটি তরতাজা তরুণ মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছে। আল্লাহ তুমি নয়ন কে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা করো।’
উদীয়মান ও প্রতিভাবান ওই যুবকটির জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে ব্যয়বহুল চিকিৎসা সামলাতে যে যার সাধ্য মতো নয়নের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন অনেকেই। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, হয়তো পরকালে মহান আল্লাহ্ নয়নকে ভালো রাখবেন বলে।
নয়নের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পরিচিতরা মুষড়ে পড়েছেন। অজান্তেই চোখে পানি এসে গেছে অনেকের। সকলে তার জান্নাত কামনা করছে।
নয়ন যে দোকানে কাজ করতো তার পাশের ব্যবসায়ী ইমানুর রহমান জানান, ‘নয়ন ছিলো অনেক নম্রভদ্র ও নরম স্বভাবের একটি ছেলে। সবসময় মুখে হাসি লেগেই থাকতো। জানা মতে কারো সাথে কোনরকম ঝামেলাও হয়নি তার। অথচ ফুটফুটে অল্প বয়সী সেই ছেলেটি আজ ব্লাড ক্যান্সারে না ফেরার দেশে চলে গেলো।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)