কলারোয়ায় স্বামীর পর এবার মারা গেলেন অগ্নিদগ্ধ স্ত্রীও
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামীর পর এবার মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হেরে গেলেন অগ্নিদগ্ধ স্ত্রী শারমিন খাতুনও (২৫)।
বুধবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শারমিন খাতুনের স্বামী ভ্যানচালক আব্দুল কাদের গত ১জুন (বৃহষ্পতিবার) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
তাদের বাড়ি কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর গ্রামে।
পারিবারিক বিরোধের জের ধরে গত ২৮ মে (রবিবার) ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার চন্দনপুর গ্রামে ছোটবোনের স্বামীর দেয়া পেট্রোল-আগুনে ঘুমন্ত অবস্থায় মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হন ওই গ্রামের আহাদ আলীর পুত্র আব্দুল কাদের (৩০), কাদেরের স্ত্রী শারমিন খাতুন (২৫) ও শিশু কন্যা ফাতেমা (৭)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান ডালিম হোসেন জানান, ‘স্বামী আব্দুল কাদেরের মতোই শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হেরে যেয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন স্ত্রী শারমিন খাতুনও। কাদের, তার স্ত্রী ও কন্যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কাদের ও তার স্ত্রী মারা গেলেন। এখন তাদের একমাত্র শিশু কন্যা চিকিৎসাধীন আছেন। তার অবস্থাও গুরুতর। এই জঘন্য অপরাধকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রতিবেশীরা জানান, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ছোট বোনের স্বামী যশোরের শার্শা উপজেলার নারায়নপুর পোড়াবাড়ি এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে সবুজ হোসেন গভীর রাতে আব্দুল কাদেরের টিনশেডের ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা ওই ৩ ব্যক্তির উপর পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মারাত্মকভাবে ঝলসে যায় তিনজনই। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানেই ১জুন বৃহষ্পতিবার মারা যান আব্দুল কাদের। আর ১৪ জুন মারা গেলেন কাদেরের স্ত্রী শারমিন খাতুনও।
এ ঘটনায় ওই দিনই অভিযুক্ত সবুজের সহযোগি বন্ধু পার্শ্ববর্তী কাঁদপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান বিহারীর পুত্র সোহাগ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘আব্দুল কাদেরের বোন সুফিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সোহাগকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মূল অভিযুক্ত সবুজকে আটকের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে, কাদেরের বোন সুফিয়া খাতুন জানান, ‘তার স্বামী সবুজ তাকে নির্যাতন করতো। এজন্য সে স্বামীর ঘর করতে চান না। কিন্তু সবুজ তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতো। এসব নিয়ে তাদের ঝামেলা চলছিলো। বড়ভাই কাদের আমার পক্ষে থাকায় তাকে হুমকিধামকি দিয়েছিলো সবুজ।’
স্থানীয়রা জানান, ‘স্ত্রী সুফিয়া খাতুন স্বামীর বাড়িতে যেতে না চাওয়ায় এবং স্ত্রীর বড় ভাই কাদের ফোনে বোনকে আর শ্বশুর বাড়িতে পাঠাবে না বলায় গভীর রাতে ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়েছে স্বামী সবুজ হোসেন (৩২) নামের ওই যুবক। ওই ঘটনায় সবুজ হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের বড় ভাই কাদের, তার স্ত্রী শারমিন ও তাদের ৭ বছর বয়সী মেয়ে ফাতেমা খাতুনের শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী দুজন মারা গেলো। অভিযুক্ত ভগ্নিপতি সবুজ হোসেন পেশায় শার্শার আফিল জুট মিলের শ্রমিক।’
প্রতিবেশী ওহাব ফারুক সেন্টুর স্ত্রী খাদিজা খাতুন বলেন, ‘সবুজ হোসান ও তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের প্রায় দেড় বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্তান হওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত তাদের ভিতরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ হতো। সবুজ হোসেন তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাতো। একপর্যায়ে সবুজের সাথে সংসার করতে না চাওয়ায় সবুজ হোসেন এমন জঘন্য কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এমন নৃশংস অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। ৩ জন মানুষ রাতে টিন ও কাঠ দিয়ে বানানো ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো। সেই ঘরে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সবুজ হোসেন। ঘরের ঘরের মধ্যে তাদের শরীরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। বাচ্চাসহ তারা রাত সাড়ে ৩টার দিকে চিৎকার করছিলো, তখন এলাকার মানুষজন ছুটে গিয়ে তালা ভাঙতে পারছিলো না। অনেক চেষ্টার পর তাদেরকে উদ্ধার করে শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হওয়ায় ঢাকা হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ৩ জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ছিলো। তাদের হাত পায়ের চামড়া খুলে খুলে পড়তে দেখা যায় ঘটনাস্থলে। ১জুন খবর পেলাম সেখানে চিকিৎসারত কাদের মারা গেছেন। আর ১৪ জুন কাদেরের স্ত্রীও মারা গেলো।’
স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)