ইউনিলিভারে সাত দিনে নেই ১১২১ কোটি টাকা


নাম বদলের পর বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডের শেয়ার দামে বড় উত্থান হলেও শেষ সাত কার্যদিবসে বড় পতনের সম্মুখীন হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম। মাত্র সাত কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে ১১২১ কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে।
শেয়ারের এই দাম কমার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ৪০ কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। বিদেশিরা হারিয়েছেন ৪ কোটি ৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ৬২ কোটি ১৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। আর উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা হারিয়েছেন ১০১৫ কোটি ২০ লাখ ৮ হাজার টাকা।
হরলিকস, মালটোভা, গ্ল্যাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইনের মতো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিউটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করলেও লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালে ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বহুজাতিক কোম্পানিটি।
এরপরেই ইউনিলিভারের কাছে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসে। এ সংক্রান্ত প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর। সেসময় ইউনিলিভার ও জিএসকের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারত, বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্য ২০টি দেশের বাজারে জিএসকের চলমান কনজিউমার হেলথ ড্রিংকস ব্যবসা কিনে নিচ্ছে অ্যাংলো-ডাচ জায়ান্ট ইউনিলিভার।
প্রথমে সেটফার্স্টের কাছে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের সব শেয়ার ইউনিলিভারের মূল কোম্পানি ইউনিলিভার এনভির কাছে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ২২ মার্চ এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউনিলিভারের মূল কোম্পানির পরিবর্তে এর সাবসিডিয়ারি ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে সেটফার্স্টের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর অংশ হিসেবে গত ২৮ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে জিএসকের শেয়ার কিনে নেয় ইউনিলিভার। ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ারের প্রতিটি কেনা হয় ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। শেয়ার কিনে নেয়ায় দুদিনের মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সেই সঙ্গে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন’ বা ‘জিএসকে’ নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার’।
নাম বদল হলেও ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আগের নামেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল। তবে ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন নামে লেনদেন শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্যাটেগরিও বদলে যায় কোম্পানিটির। ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে কোম্পানিটি খাদ্য খাতের আওতাভুক্ত হয়।
নতুন নামে ও নতুন ক্যাটেগরিতে লেনদেন শুরু হতেই ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ২৬ নভেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে। ফলে ১৩ কার্যদিবসে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ হাজার ৮১১ টাকা ৯০ পয়সা বেড়ে যায়। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ২১৮২ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার ৯৪৩ টাকা।
শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ডিসেম্বর বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ওই সতর্কবার্তায় ডিএসই জানায়, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
ডিএসইর সতর্কবার্তার পরেও কোম্পানিটির শেয়ারের দামবৃদ্ধির প্রবণতা চলতে থাকে। তবে ১৫ ডিসেম্বর থেকে পতনের মধ্যে পড়ে উড়তে থাকা ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ারের শেয়ার দাম। আর গত সপ্তাহে প্রতিটি কার্যদিবসেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমেছে। এতে মাত্র ছয় কার্যদিবসেই প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৯৩১ টাকা ১০ পয়সা। আর সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১১২১ কোটি ৬৪ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬৩ টাকা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৯ টাকা। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। আর বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক ৩৬ শতাংশ।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
