কারাবাস, কলহ আর মামলার ফাঁদে নিঃস্ব হাফিজুর: সন্তান ফিরে পাওয়ার আকুতি


মো: আবু বক্কর সিদ্দিক, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা): একসময় ছিল স্বপ্নের সংসার, স্ত্রী ও দুই ফুটফুটে সন্তানকে ঘিরে সুখেই কেটেছিল হাফিজুর রহমানের দিনগুলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই গল্প এখন রূপ নিয়েছে এক করুণ অধ্যায়ে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের হামজার আলী বিশ্বাসের ছেলে হাফিজুর রহমান আজ নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ আর সন্তানদের জন্য বুকভরা হাহাকার নিয়ে দিন পার করছেন।
২০০৯ সালে একই গ্রামের মো. সিদ্দিকুল ইসলামের মেয়ে মৌসুমী আক্তার ময়নার সঙ্গে বিয়ে হয় হাফিজুরের। এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তানের জন্মে তাদের সংসার পূর্ণতা পায়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত সংসার ছিলো মোটামুটি সুখেই। কিন্তু ২০১৭ সালে পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়।
অভিযোগ অনুযায়ী, হাফিজুরের চাচা শ্বশুর ইলিয়াস এক নারী শেফালীর (ছদ্মনাম) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেই ঘটনায় দায়ের হওয়া অপহরণ মামলায় জড়িয়ে পড়েন হাফিজুরও এবং সাড়ে সাত মাস কারাভোগ করতে হয় তাকে।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আর আগের মতো স্বাভাবিক হয়নি সংসার। স্ত্রীর আচরণে আসে পরিবর্তন। হাফিজুরের অভিযোগ, ময়না প্রতিবেশী দুই বন্ধুর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বহু চেষ্টা করেও স্ত্রীকে ফেরাতে পারেননী স্ত্রীকে, ২০১৯ সালে উল্টো ময়না তার বিরুদ্ধেই যৌতুক মামলা করেন।
মামলার মধ্যেই কিছুদিনের জন্য ময়না আবারও সংসারে ফিরলেও পুরনো অভ্যাস থেকে যায়। একদিন ঝগড়ার মধ্যে স্ত্রীকে থাপ্পড় মারলে ময়না বাবার বাড়ি চলে গিয়ে অভিযোগ করেন। এরপর ময়নার স্বজনরা হাফিজুরকে মারধর করে, লুট করে নিয়ে যায় ৪০ হাজার টাকা। পাল্টাপাল্টি মামলায় জড়িয়ে পড়ে উভয় পরিবার।
শেষ পর্যন্ত ময়না একই গ্রামের আব্দুল মজিদ কারিগরের ছেলে আইয়ুব আলীর সঙ্গে নতুন সংসার শুরু করেছেন। কিন্তু দুই সন্তানকে নিজের বাবার বাড়িতে রেখেই সেই সন্তানদের ‘মানসিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ হাফিজুরের।
চাচা শ্বশুর ইলিয়াস জানান, হাফিজুরের সন্দেহ থেকেই মূলত কলহ শুরু হলেও ময়নার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্কের কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই। অভিযুক্ত দুই প্রতিবেশীও অভিযোগ অস্বীকার করেন। ময়নার নতুন স্বামী আইয়ুব আলী বলেন, “৪–৫ মাস ধরে আমাদের সংসার চলছে।”
অন্যদিকে, ভগ্ন হৃদয়ের হাফিজুর বলেন, “আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার দুই সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে চাই। হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচারের আশায় দাঁড়িয়ে আছি।”
ময়নার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “হাফিজুরের সাথে আদালতে মামলা বিচারাধীন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলব না।”
স্থানীয় বাসিন্দা হাসান মোড়ল, ইসা শেখ ও জাহিদ ফকির বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে হাফিজুর নির্যাতিত, আর ময়না অন্যত্র বিয়ে করে এখনো তাকে হয়রানিতে রেখেছে। দেশে এখন পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
স্থানীয়দের মতে, সমাজ ও প্রশাসনের মানবিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এই ট্র্যাজেডি আরও জটিল আকার নিতে পারে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

কালিগঞ্জে যুবদলের ৬ নেতা-কর্মীর জামায়াতে যোগদান
আবু বক্কর সিদ্দিক, কালিগঞ্জ : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীবিস্তারিত পড়ুন

কালিগঞ্জে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন
আবু বক্কর সিদ্দিক, কালিগঞ্জ : “অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি”বিস্তারিত পড়ুন

কালিগঞ্জে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা
মো: আবু বক্কর সিদ্দিক, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাবতার ভগবান শ্রী শ্রীকৃষ্ণেরবিস্তারিত পড়ুন