মণিরামপুরে ভারতীয় নাগরিকের দলিল রেজিস্ট্রি!
যশোরের মণিরামপুরের সাব-রেজিস্টার রিপন মুন্সির বিরুদ্ধে ঘুসে তুষ্ট হয়ে ভারতীয় নাগরিকের জমির দলিল রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় পাসপোর্টধারি ওই নাগরিক প্রায় ৩৫ বছর ধরে ভারতে বসবাস করছেন। কয়েক যুগ ভোটার তালিকায় নাম নেই, নেই জাতীয় পরিচয়পত্র, তারপরও শুধু মাত্র জন্মসনদ দিয়েই ওই ভারতীয় নাগরিক ৮০.৫০ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন। যার সমুদয় অর্থ অবৈধ পন্থায় ভারতে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ওই ভারতীয় নাগরিক আরো জমি বিক্রি করতে দলিল সম্পাদনে সাব-রেজিস্টার অফিসে দাখিল হলেও আগের জমির দলিল সম্পাদনের খবরে তোড়পাড় হওয়ায় সাব-রেজিস্টার দলিল সম্পাদন স্থগিত করেছেন বলে জানা গেছে। সাধারণত জমি বিক্রেতাদের সকল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি হওয়ায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা যায়- উপজেলার ৫২ নম্বর রঘুনাথপুর মৌজায় মৃত. হেমলতা মন্ডলের দুই ছেলে শৈলন্দ্রনাথ মন্ডল ও সুশীল মন্ডলের মধ্যে সুশীল মন্ডল বছর দুয়েক আগে মারা যান। বড় ভাই শৈলন্দ্রনাথ মন্ডল ৩৫ বছর আগেই ভারতে চলে যান। তিনি ভারতের মধ্যপ্রদেশে ডাক্তারি (কোয়াক) করেন। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে কালের ভদ্রে তিনি বাংলাদেশে আসেন। সেটাও পৈত্রিক জমি বিক্রির উদ্দেশ্যে।
জমি বিক্রির জন্য ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এসে খেদাপাড়া ইউনিয়ন থেকে তৎকালিন প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের সময় জন্ম সনদের জন্য আবেদন করেন। ওই সময় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মুনছুর রহমানের দিয়ে একটি জন্ম সনদ করিয়ে নেন। এরপর ওই জন্ম সনদ দিয়ে ২০২১ সালে পৈত্রিক জমি (ওয়ারেশ সূত্রে) নামপত্তনের জন্য খেদাপাড়া তহসীল অফিসে আবেদন করেন। ইউনিয়ন তহসীলদার আব্দুস সাত্তার নামপত্তন পাইয়ে দিতে কাগজপত্র তৈরী করে সহকারি কমিশনার (ভূমি)-এর কার্যালয়ে পাঠান। শুধুমাত্র জন্ম সনদ দিয়ে ভারতীয় নাগরিক শৈলন্দ্রনাথ মন্ডল ২০২১ সালের ১৪ মার্চ জমির নামপত্তন করান।
এরপর চলতি বছরের মে মাসে শৈলন্দ্রনাথ মন্ডল আবারো ভারতীয় পাসপোর্টে দেশে এসে জমি বিক্রির তোড়জোড় শুরু করেন। জন্ম সনদ দিয়ে ৫টি খতিয়ানভূক্ত পৃথক ৯টি দাগের ৮০.৫০ শতাংশ জমি একই উপজেলার ইত্যা গ্রামের রাশেদ, রঘুনাথপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম এবং একই গ্রামের নিরঞ্জন মন্ডল নামে তিন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। শুরুতে শুধু জন্ম সনদ দিয়ে দলিল সম্পাদন করতে বিগড়ে বসেন সাব-রেজিস্টার রিপন মুন্সি।
অভিযোগ রয়েছে সাব-রেজিস্টারকে মোটা অংকের ঘুস দিয়ে গত ৩১মে-২০২২ পৃথক তিনটি দলিল সম্পাদন করানো হয়। যার দলিল নম্বর হচ্ছে ৫২৭০, ৫২৭১ এবং ৫২৭২। এদিকে দলিল সম্পাদনে নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে বিদেশে অবস্থান করলে পাসপোর্ট (দেশীয়) এবং নানা কারণে এর একটিও না থাকলে জন্ম সনদ দিয়ে জমি বিক্রির কার্যাদি সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে (জমি দাতা) এদেশের নাগরিক হতে হবে।
কিন্তু শৈলন্দ্রনাথ মন্ডল ভারতীয় পাসপোর্টধারি এবং রঘুনাথপুর মৌজা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় তার (শৈলন্দ্রনাথ) নাম নেই। যেখানে জাতীয় পরিচয় পত্রসহ সব কিছু থাকার পরও জমি রেজিস্ট্রি করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেখানে শুধু জন্ম সনদ দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আদৌ শৈলন্দ্রনাথ মন্ডল দেশে এসেছেন তা নিয়ে রয়েছে ধুব্রজাল। এ প্রতিবেদক রঘুনাথপুর গ্রামে গেলে প্রতিবেশি কেউ শৈলন্দ্রনাথ মন্ডলকে দেখেছেন এমন কথা কেউ বলতে পারেননি। সবাই বলেছেন তারা শুনেছেন তিনি এসেছেন। রঘুনাথপুর গ্রামের নিরঞ্জন মন্ডল ও তার স্ত্রী বলেন- শৈলন্দ্রনাথ মন্ডল ৩৫ বছর ধরে ভারতে থাকেন। মাঝে মধ্যে জমি বিক্রির চেষ্টার জন্য আসেন। তারা শুনেছেন শৈলন্দ্রনাথ দেশে এসেছেন কিন্তু দেখেননি।
অভিযোগ উঠেছে শৈন্দ্রনাথ মন্ডল জমি বিক্রির সমুদয় অর্থ ইতোমধ্যে ভারতে পাচার করেছেন। আরো জমি বিক্রির জন্য আবুল বাশার নামে এক দলিল লেখকের দিয়ে দলিল লিখিয়ে সাব-রেজিস্টার অফিসে জমা দিযেছেন। কিন্তু এর আগের জমি বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোড়পাড় হওয়ায় দলিল সম্পাদন স্থগিত করেন সাব-রেজিস্টার রিপন মুন্সি।
আবুল বাশার বলেন- জমি ক্রেতারা তার কাছে দলিল লিখেয়েছেন। কিন্তু জমিদাতা শৈলন্দ্রনাথ আর আসেননি। এমনকি তিনি দেখেননি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- জমি ক্রেতারা শৈলন্দ্র মন্ডলের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে এনেছেন।
সাব-রেজিস্টার রিপন মুন্সি ঘুস নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন- তিনি ভারতীয় নাগরিক তা জানেন না। পরে আরো জমি রেজিস্ট্রি করতে এসেছিলেন, কিন্তু তা স্থগিত করা হয়েছে।
জেলা রেজিস্টার অফিসার শাহাজান সর্দার বলেন- দলিল সম্পাদনে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে শৈলন্দ্রনাথ মন্ডলের মোবাইল নম্বর কেউ (দলিল লেখক, সাব-রেজিস্ট্রার) দিতে না পারাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)