মণিরামপুরে শিক্ষিকা বরখাস্ত! প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শ্লীলতাহানির শিকার যশোরের মণিরামপুরে সেই শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এক মতবিনিময় শেষে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট শেষে নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এক পর্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবীদাবার কথা লিখিতভাবে জানানোর কথা বলেন। নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাতের পূর্বে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
দেলুয়াবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষর্থী মেহেদী হাসান, মুরাদ হোসেন, সজীব হোসেন, তামিম, অনিক, আবু সাঈদ, অষ্টম শ্রেণীর আল-আমীন, শাহরুক জামান সোহান, মিম খাতুন, সপ্তম শ্রেণির ফারজানা খাতুন, মিমিয়া খাতুন, সাদিয়া খাতুন সহ শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানায়- ম্যাডামকে শ্লীলতাহানির অপরাধ করলেন প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়, আর শাস্তি দেওয়া হল শ্লীলতাহানীর শিকার শিক্ষিকাকে। আমরা এ অন্যায় বিচার মানিনা।
অপরাধী প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জনের বিরুদ্ধ ন্যায় বিচারের দাবী করে ওই শিক্ষার্থীরা আরও জানায়- তাদের ম্যাডামের সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। যে প্রধান শিক্ষকের নিকট স্কুলের ম্যাডামরা নিরাপদ নয়, সেখানে আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সন্ধিহান। এমন কৃচক্রী প্রধান শিক্ষককে যতদ্রুত সম্ভব বরখাস্ত করা হোক।
এদিকে- মঙ্গলবার ওই শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিদালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হতে চলেছে বলে অভিভাবক মহলের অনেকেই দাবী করেছেন।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানাযায়- মঙ্গলবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে আকষ্মিকভাবে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় তড়িঘড়ি করেই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ অন্যরা বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জনের সাথে কথা বলতে তার ব্যবহৃত মুঠোফেনে বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেননি।
তবে, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনিছুর রহমান তজু শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তের বিষয় এবং শিক্ষার্থীরা উপজেলা প্রশাসনের নিকট আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন- তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তার কিছু অনিয়মের জন্য। তবে, সম্প্রতি অনাকাংঙ্খিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় শিক্ষিকা মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন- প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায় তাকে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। যে বিষয়টি বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা সত্ত্বেও কোন প্রতিকার হয়নি। এক পর্যায় ওই প্রধান শিক্ষকের কু-দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে গত (১৪ নভেম্বর) মহা-পরিচালক, উপণ্ডপরিচালক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু অদ্যাবদি আমার অভিযোগের বিষয়টি কেউ খতিয়ে দেখেনি।
এক পর্যায় (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়ের কক্ষে আমাকে একা পেয়ে গায়ের ওড়না ধরে টানাটানি করে। যে ঘটনাকে সামাল দিতেই আমি তাকে জুতা পেটা করি। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলেও প্রধান শিক্ষকের হীন এ কর্মকান্ডের বিচার না করে আমার বিরুদ্ধে খোঁড়া অভিযোগ তুলে ১৩ ডিসেম্বর আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যেটা পক্ষপাতিত্ব ছাড়া কিছুই না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে বলেন- মৌখিকভাবে বিষয়টি শুনেছি। তবে, আমার দপ্তরে কোন কাগজ-পত্র আসেনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবির হোসেন সাংবাদিকদের জানান- শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যহারের বিষয়টি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের এখতিয়ারের মধ্যে। আমি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছি বিদ্যলয়ের শিক্ষার পরিবেশে কোনো সমস্যা হলে তা লিখিত আকারে জানালে সেটা দেখা হবে।
উল্লেখ্য- মণিরামপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়কে গত ১১ ডিসেম্বর তার অফিস কক্ষে সহকারী এক শিক্ষিকা জুতাপেটা করে। অভিযোগ করা হয় ওই শিক্ষিকা ঘটনার সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গেলে নীহার রঞ্জন রায় শিক্ষিকার গায়ের ওড়না ধরে টানাটানি করে। এ ঘটনার পর বিদ্যালয়সহ ওই এলাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)