তুরস্কের আঙ্কারায় বাংলাদেশ চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


তুরস্কের আঙ্কারায় বাংলাদেশ মিশনের চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রী এ ভবনের উদ্বোধন (ভার্চুয়ালি) করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এর আগে তুরস্কের আঙ্কারা মিশনের বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ভবন উদ্বোধন করেন।
২০১২ সালে বাংলাদেশ চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হয়। সেসময় এ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভবন নির্মাণ শেষ হয়।
উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু।
তুরস্কের আঙ্কারার বাংলাদেশ মিশন জানায়, আঙ্কারার বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ভবন নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ভবনটি নির্মাণে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা কম ব্যয় হয়েছে। ওই টাকা বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গত রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) তুরস্কে যান।
জানা গেছে, কমপ্লেক্সের মূল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে- চ্যান্সেরি ভবন, দূতাবাসের আবাস, ‘বিজয় ১৯৭১’ নামে ২২৯ আসনের হাই-টেক মিলনায়তন, স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক সিস্টেম, মসজিদ, জিমনেসিয়াম, বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শন কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধুর রেফারেন্স সমৃদ্ধ বই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সংক্রান্ত পাঠাগার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তি এবং শহীদ মিনারও রয়েছে কমপ্লেক্সে।
এবার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য তুরস্কের জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সব ধরনের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। আমি মনে করি, প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। আমি মনে করি, এই ইস্যুতে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তুরস্কের আঙ্কারা মিশনের বাংলাদেশ চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী। তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে। প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু হয়। আমাদের সম্পর্কের শুরু ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। তুর্কি জেনারেল ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়ের মধ্যে দিয়ে। পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাসে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে। তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব দেয়।’
তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া এই নীতিই আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলনীতি।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখেননি। তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য সংঘাতমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নও দেখেছেন। মানবকল্যাণে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে গেছেন তিনি।’
২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আমন্ত্রণে আঙ্কারা সফরের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের প্রশংসাও করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
চলমান করোনা মহামারি সংকটের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্ব এক কঠিন সময় পার করছে। এই মহামারি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়েছে। বাংলাদেশে আমরা সফলতার সঙ্গে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পেরেছি। একই সময়ে আমাদের সময়োপযোগী এবং সঠিক পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ নেয়ার মাধ্যমে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কিছুটা মোকাবিলা করতে পেরেছি।’
প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলায় সফলতার জন্য তুর্কি নেতৃত্বের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ভবন নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ভবনটি নির্মাণে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা কম ব্যয় হয়েছে। ওই টাকা বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দীকী।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
