আশাশুনির প্রতাপনগরে রাকিব এখন পরিবারের বোঝা
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরে ঘরের গা ঘেঁষে টানা পল্লী বিদ্যুতের লাইনে বিদ্যতায়িত হয়ে অঙ্গহানির শিকার ও দীর্ঘদিন হাসপাতালে মরণাপন্ন হয়ে পড়ে থাকা শিশু রাকিবুজ্জামানের জীবন এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন।
সে নিজে চলতে পারেনা, অন্য কারো উপর ভর করে তাকে চলতে হয়। সে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে পড়েছে। এনিয়ে মাহামান্য হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। এতকিছু ঘটলেও বিদ্যুৎ বিভাগ দুর্ঘটনা কবলিত বাড়ির সামনে ও পিছনে ছাদের একেবারে গা ঘেষে স্থাপিত বিদ্যুতের পোল ও টানা তার সরিয়ে নিরাপদ স্থানে না নেওয়ায় এলাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতাপনগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ঢালীর বসতবাড়ির উপর দিয়ে নকশা বহির্ভৃতভাবে বিদ্যুতের লাইন গেছে। বিল্ডিং এর একেবারেই গা ঘেষে বিদ্যুতিক পোষ্ট বসানো হয়। লাইন পরিবর্তন ও তার দ্বিতল বাসবভনের ওপর দিয়ে ক্যাপ ও কভারবিহীন বিদ্যৎ লাইনে সংযোগ না দিতে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবর আবেদনও করেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু না কোন কাজ হয়নি। গত বছরের ৯ মে সেই পোষ্ট থেকে অন্য পোষ্টে নেওয়া ক্যাপ ও কভার বিহিন তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে তার (রাজ্জাক) বড় ওয়ানে পড়–য়া শিশু রাকিবৃজ্ঞামানের হাড়-মাংস ঝলসে যায়। মৃতপ্রায় অবস্থায় তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসাতপালে ভর্তির পর সংশ্নিষ্ট ডাক্তার তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করেন।
সেখানে চিকিংসাধীন অবস্থায় ১২ মে রাকিবুজ্জামানের ডান হাতের বোগল থেকে ও ডান পায়ের হাটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনার ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২৫ মে আব্দুর রাজ্জাক ঢালী সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ক্ষতিপূরণসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিবাদীরা ক্ষতিপূরণ দেননি এবং অন্য কোনো ব্যবস্থাও নেননি। বরং তার বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও বিপদাপন্ন পরিবারটিকে অন্ধকার ও সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত করা হয়। আব্দুর রাজ্জাক ঢালী মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেন। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনস্থাপন করা হয় এবং ঘরের পিছুনের তারে কভার দেওয়া ও সামান্য টেনে দূরে নেওয়া হয়। কিন্তু ঘরের একেবারেই মুখের উপরের খুঁটিও সরানো হয়নি। হয়তো এক সময় মামলার রায় হবে, পরিবারটি আর্থিক ক্ষতিপূরন পাবে। কিন্তু ফিরে পাবে কি? তাদের আদরের সন্তানের হাত-পা। ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আর ফিরে আসবে কি? ঐ নিষ্পাপ রাকিব। এখন রাকিবুজ্জামান প্রতাপনগর এবিএস ফাযিল মাদ্রাসার ২য় শ্রেণিতে পড়ছে। তার রোল নং- ১। কিন্তু না সে নিজে চলতে পারে, না সে ডান হাত ব্যবহার করতে পারে। তাই পরিবারের অন্য কাউকে তাকে মাদ্রাসায় নেওয়া থেকে শুরু করে, দৈনন্দিন তার সকল কাজে সহযোগি হিসাবে থাকতে হয়। শিশু রাকিবুজ্জামানের মনে অনেক কষ্ট, সে নিজেই যা হারিয়েছে তা বুঝতে পারে। অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও করতে পারেনা। তবে তার মনে অদম্য ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। বাম হাত দিয়ে সে সাবলিল ভাবে লিখতে শিখেছে। পড়তে, মুখস্ত করতে ও মনে রাখার অভ্যাস আস্তে আস্তে তার মধ্যে প্রখর হচ্ছে। তার পিতা-মাতা ও ভাইবোনেরা তাকে খুবই যতœ সহকারে দেকভাল করে থাকেন। তাদের কষ্ট, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা, বিদ্যুৎ বিভাগের গাভিলতি ও আবেদনের পরেও কর্ণপাত না করার কারনে আজকে তারা যে কতটাই ক্ষতিগ্রস্ত তার হিসাব করে ঠিক করতে পারছেনা তারা। পঙ্গু ছেলের ভবিষ্যতে কি হবে এর কোন কুলকিনারা করতে পারছেন না তারা। তারা এখন চেয়ে আছেন মহামান্য হাই কোর্টের রায় শোনার জন্য।
কারো জীবন প্রদীপ যেন এভাবে থমথমে পরিস্থিতির মুখে ঠেলে না দেওয়া হয়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যেন প্রাপ্য শাস্তি ঘোষিত হয়। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন রাকিবুজ্জামানের পরিবার ও এলাকার সাধারণ মানুষ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)