ইউরোপে যাচ্ছে কলারোয়ার আম, বেড়েছে উৎপাদন, কমেনি দাম


আমের স্বাদ ও মান ভালো হওয়ায় উৎপাদনের সাথে রপ্তানি বাড়ছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার আমের। দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কলারোয়া অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে আম চাষ।
গত কয়েক বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু আম গাছের বাগান তৈরি করা হয়েছে। ফসলি মাঠ, সবজি ক্ষেত, বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত জমিসহ বিভিন্ন স্থানে আম গাছ রোপণ করা হয়েছে। আবার তুলনামূলক কমদামী অন্য গাছ কেটেও সেখানে আম বাগান তৈরি করা হচ্ছে। ফলে বাড়ছে আমের উৎপাদন। তবে কমেনি দাম।
মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় অন্যান্য স্থানের তুলনায় আগেই বাজারজাত করা যায় সাতক্ষীরার কলারোয়ার আম -এমনটাই মনে করছেন আমচাষিরা।
তারা বলছেন, এখানকার আমের স্বাদও বেশ ভালো।
জানা গেছে, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপে যাচ্ছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার আম। করোনা পরিস্থিতির কারণে এক বছর বন্ধ থাকার পর আবারও বিদেশে আম পাঠাতে পেরে বেশ খুশি স্থানীয় আমচাষিরা।
দুই বছর আগের চেয়ে দ্বিগুণ আম এবার বিদেশের বাজারে যাবে বলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানকার আমের মান ভালো হওয়ার কারণে ২০১৪ সাল থেকে রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও পর্তুগালে।
ইতোমধ্যে কলারোয়ায় আম বেচাকেনার জন্য সৃষ্টি হয়েছে পাইকারি হাটবাজার ও আড়ত। আমের মৌসুমে উপজেলার বাগুড়ি-বেলতলা মোড়ের ওই আম বাজারের আড়তে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আমগাছের আম বেচাকেনা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকররা এখানে এসে ট্রাক ট্রাক আম কিনে নিয়ে যান। আবার স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার আম ব্যবসায়ী অনেকে কয়েক মাস আগে থেকেই এখানে এসে গাছ দেখে অগ্রিম ‘হতেযাওয়া’ গাছশুদ্ধো আম কিনে নেন। অনেকে এখন একেকটি আম গাছ কয়েক বছরের জন্য কিনে নেন, যা ফলন হবে সেটার জন্য।
ওইসকল আম গাছের পরিচর্যা, দেখভাল, ভাঙা, বাজারজাতকরণ, বেচাকেনাসহ সার্বিক এই আমকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেকের কর্মসংস্থান।
ফারুক হোসেন, আতিকুর রহমানসহ স্থানীয় আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা জানান, ‘বর্তমানে গোবিন্দোভোগ আম ভাঙা শুরু হয়েছে। বাজারে এই আমের প্রতি মণ যাচ্ছে-১৮০০শ থেকে ২০০০ হাজার টাকায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই হাটে চাষীরা নিয্য মূল্যে আম বিক্রয় করছেন।’
কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাইরে থেকে যারা আম কিনতে আসবেন, তাদেরকে কমপক্ষে তিন দিন কোয়ারিন্টিনে থাকতে হবে। এছাড়া আম চাষিদের সুবিধার্থে ২১মে হিমসাগর, ২৭মে ল্যাংড়া, ৪জুন আম্রপালি ভাঙার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, ‘আমের মৌসুমের শুরু থকে মাঝামাঝি পর্যন্ত কলারোয়ায় ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। তবে তাপদাহে আম কিছুদিন আগে থেকে পরিপক্ক হয়েছে। তাই ভাঙার দিন ও তারিখও এগিয়ে আনা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ সহায়তায় অতিসম্প্রতি ৫০০ কেজি গোবিন্দোভোগ আম বিদেশে রপ্তানির জন্য সাতক্ষীরা থেকে পাঠানো হয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কলারোয়ার পাশাপাশি জেলাজুড়ে ৫০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সলিডারিডাড। নিরাপদ আম বিদেশে পাঠাতেই তাঁদের এই প্রচেষ্টা। এ বছরই গোবিন্দোভোগ আম প্রথম বিদেশে যাচ্ছে। আমের বিদেশের বাজারকে সুসংহত করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ’পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম জানান, এবার ৫০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে। জেলায় এবার ৫ হাজারের বেশি বাগানে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। ৫০০ হেক্টর জমিতে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম চাষ করা হয়েছে। এবার আম জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিদেশের বাজারে যাচ্ছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
