কলারোয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৩ দিনের বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় আম চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত


ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৩ দিনের বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আম চাষীরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দেনায় জর্জরিত অনেক স্তানীয় ব্যবসায়ী ও আম চাষীরা পাওনাদারের ভয়ে পালায়ে বেড়াচ্ছে।
জানা গেছে, প্রায় ৬ মাস তীব্র খরার পরে বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ জনিত কারণে গত মঙ্গলবার থেকে দমকা ঝড়ো হাওয়ার সংগে কখনো হালকা গুড়িগুড়ি, কখনো মাঝারী, কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সংগে বিরুপ আবাহওয়ার কারণে গাছের আম সংগ্রহ ও বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় দমকা ঝড়ো হাওয়ার সংগে বৃষ্টিপাতে হাজার হাজার মণ আম মাটিতে পড়ে ফেটে বিনষ্ট হয়ে যায়। তবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আম্পানের চেয়ে অনেক বেশী ভয়ঙ্কর গতির ঝড় ”যশ” ও ”ইয়াস” আঘাত হানার খবর প্রচারে। ঝড়ে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে থেকে ভয়ঙ্কর গতির ঘুর্ণী ঝড়ের খবর প্রচার হওয়ার পরে আবারো সম্পুর্ণ আম ক্ষতির ভয়ে ফড়িয়া ও চাষীরা ভোর থেকে সন্ধা অবধি গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে থাকে।
এতে সাতক্ষীরার সুমিষ্ট সুস্বাদু হিমসাগর আমের বাজার মূল্য আড়াই হাজার থেকে নেমে ৮’শ টাকায় বেচাকেনা চলতে থাকে। দাম এত নিম্নগামী হওয়ার পরেও বিগত বছরে আম্পানে সম্পুর্ণ বিনষ্ট হওয়ার ভয়ে ফড়িয়া ও চাষীরা দ্রুত গতিতে গাছের আম সংগ্রহ করে বাজারজাত অব্যাহত রাখে।
লাউডুবি গ্রামের আম ব্যবসায়ী রেজা জানায়, বিগত বছর ৮ লাখ টাকার বাগান ক্রয় করা ছিল। সেই বাগান থেকে ৩ লাখ টাকার আম বিক্রির পরে গত বছর ২০ মে আম্পানে বাগানে বাকী আম সব ঝড়ে পড়ে বিনষ্ট হয়ে যায়। ফলে তার নিজের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয় এবং চাষীদের পাওনা ২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে এবার খরচ না উঠলেও নামমাত্র মূল্যে চাষীদের গাছের আম নিয়ে বিক্রি করে ২ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হযেছে বলে জানায়।
অপর আম ব্যবসায়ী লালটু বিগত বছরে তার ও চাষীদের ক্ষতির কথা স্মরণ করে এবার ঝড়ের আগে নামমাত্র মূল্যে আম বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানায়। আর চাষীরা সম্পুর্ণ আম বিনষ্ট হওয়ার ভয়ে নামমাত্র মূল্যে তাদের আম বাগান স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
সোনাবাড়িয়ার মাহিদ রহমান, বলিয়ানপুরের খালেক, বামনখালীর মশিয়ার জানায়, বিগত বছরে আম্পানে তাদের বাগানের সম্পুর্ণ আম পড়ে বিনষ্ট ও বহু গাছ ডালপালা ভেঙ্গে ব্যপক ক্ষতি হয়। তাই এবার আরো ভয়ঙ্কর ঘূর্ণী ঝড়ের কথা শুনে নামমাত্র মূল্যে আমবাগান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
ফলে কলারোয়া ও যশোরের শার্শা উপজেলার সংযোগ স্থল বাগুড়ি-বেলতলায় রাত ১২ টা অবধি আম বেচাকেনা চলে। আর পাইকাররা সারা রাত সেই আম ট্রাক লোড় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। আমের দাম বেপরোয়া নি¤œগামী হওয়ার কারণে ফড়িয়া ছাড়াও বহু চাষীর উৎপাদন খরচ উঠেনি। ফলে স্থানীয় ফড়িয়া ও আম চাষীরা দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। টাকার অভাবে পাওনাদারের ভয়ে তাদের অনেকে গা ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছে।
এব্যাপারে সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম জানান, ঝড়ে ক্ষতির ভয়ে ব্যবসায়ী ও চাষীদের গাছের আম পাড়া এবং বাজারজাত করার ধুম পড়ে যায়। আর বাজারে অতিরিক্ত আম সরবরাহের কারণে আড়াই হাজার টাকা মণ দরের আম ৮’শ টাকায় নেমে আসে। এতে কওে স্থানীয় আম ব্যবসায়ী ও চাষীরা ব্যপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম আগাম আম পাড়ায় দমকা ঝড়ো হাওয়ায় আম বিনষ্ট হওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঝড়ের ভয়ে চাষী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীর একযোগে গাছের আম পড়ার ধুম পড়ে যায়। এতে বাজারে বেশী সরবরাহের কারণে আমের মূল্য হৃাস পায়। এতে চাষী ও স্থানীয় ফড়িয়ারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
