শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর প্রতি সহিংসতা: সাতক্ষীরার উপকূলে বাড়ছে দ্বৈত সংকট

গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল সাতক্ষীরা। সুন্দরবনের সন্নিকটে এই অঞ্চলটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ঝুঁকির জন্যও পরিচিত। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা- প্রতিনিয়ত একের পর এক আঘাতে এখানে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হচ্ছে। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে নারী ও শিশুদের ওপর।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং বাল্যবিবাহের হার বাড়ছে। শুধু তাই নয়, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের সংকট থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান হ্রাস- সবকিছুই নারীদের জীবনে বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

এই বাস্তবতা সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও নারীর সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক বার্ষিক সংলাপ।

আয়োজন করে লিডার্স, সহযোগিতায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এবং এম্ব্যাসি অব সুইডেন। এই আয়োজন ছিল কমিউনিটি ভিত্তিক জলবায়ু সহনশীলতা ও নারী ক্ষমতায়ন কর্মসূচি (সিআরইএ)-এর অংশ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজমুন নাহার, গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম, বুড়ীগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, জেলা এডভোকেসি ফোরামের সদস্য এবং শ্যামনগরের জেন্ডার সমতা জলবায়ু জোটের সদস্যবৃন্দ।

ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, আম্পান কিংবা ইয়াস- প্রতিটি দুর্যোগের পর উপকূলের নারী-শিশুরা কেবল ঘরবাড়ি হারান না, হারান নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্মানও। দুর্যোগের পর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীরা শারীরিক হয়রানি ও যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন- এ তথ্য দিয়েছে স্থানীয় এনজিওগুলো।

গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা রওশন আরা বেগম (৪০) বলেন- আইলার পর আমাদের পরিবার তিন মাস আশ্রয়কেন্দ্রে ছিল। রাতে ঘুমাতেই ভয় পেতাম, মেয়েদের নিয়ে আরও চিন্তায় থাকতাম। নিরাপত্তা ছিল না। আলাদা টয়লেট বা আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা ছিল না।

অন্যদিকে নদীভাঙন ও লবণাক্ততার কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এর প্রভাবে নারীদের কাজের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়ছে। স্থানীয় নারী শ্রমিকরা জানান, ধান চাষ কমে যাওয়ায় মৌসুমি কাজ প্রায় নেই বললেই চলে। এর ফলে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে- সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার ৭০ শতাংশ পরিবার দুর্যোগের পর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবার কন্যাসন্তানকে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্তি খুঁজে নেয়। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বাল্যবিবাহের হার বেড়ে যায় গড়ে ৩০-৪০ শতাংশ।

সংলাপে গাবুরা ও বুড়ীগোয়ালিনী ইউনিয়নের উপকারভোগীরা সরাসরি মাঠপর্যায়ের সমস্যার চিত্র তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে- আশ্রয়কেন্দ্রে নারীবান্ধব অবকাঠামোর অভাব (আলাদা টয়লেট, গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা নেই), পানি ও স্যানিটেশনের মারাত্মক সংকট, বিশেষত নারীদের জন্য নিরাপদ টয়লেটের অভাব। জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পে নারীর মতামত উপেক্ষা করা। বিকল্প কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা, ফলে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা বাড়ছে। সহিংসতা প্রতিরোধে স্থানীয় পর্যায়ে কোনো শক্তিশালী ব্যবস্থা না থাকা।

প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন- ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি রোধে সরকারের পাশাপাশি এনজিও ও স্থানীয় জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিষ্ণুপদ পাল বলেন- ‘দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো নারীবান্ধব করতে আমরা পদক্ষেপ নেব। এছাড়া নারী নেতৃত্বে কমিউনিটি গ্রুপ গঠনের কাজও এগিয়ে নিতে হবে।’

সংলাপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে- আশ্রয়কেন্দ্রে নারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা (আলাদা টয়লেট, আলাদা কক্ষ, পর্যাপ্ত আলো)। জলবায়ু অভিযোজন ও ত্রাণ বিতরণে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা। নারীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান (হস্তশিল্প, হাঁস-মুরগি পালন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উদ্যোগ) নিশ্চিত করা। স্থানীয় পর্যায়ে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটি সক্রিয় করা। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অধিক জোরদার করা।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল (IPCC) বলছে- ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৩০ লাখে। এর বড় অংশ উপকূলীয় এলাকা থেকে। এর মধ্যে নারীরা হবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী নির্যাতন ও সহিংসতার ঝুঁকি ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশের সংকট নয়, এটি সামাজিক সংকটও। সাতক্ষীরার উপকূলে বসবাসকারী নারীরা এখন দ্বিগুণ ঝুঁকিতে- একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়, অন্যদিকে সামাজিক সহিংসতার হুমকি।

বার্ষিক এই সংলাপ দেখিয়ে দিল, জলবায়ু অভিযোজন কৌশল নারীকেন্দ্রিক না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

একই রকম সংবাদ সমূহ

সাতক্ষীরার বাইপাসে ট্রাক-আলমসাধু সংঘ*র্ষে মারাত্মক আহ*ত-২

গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার বাইপাস সড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন মারাত্মকবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরায় পুরোহিত ও সেবাইতদের প্রশিক্ষণের সমাপনী ও সনদপত্র বিতরণ

নিজস্ব প্রতিনিধি: ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ কার্যক্রমবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরায় ট্রাকের ধাক্কায় ইঞ্জিনভ্যান চালক ও আরোহী আহ*ত

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস সড়কের জামতলা এলাকায় দ্রুতগামী একটি ট্রাকের ধাক্কায়বিস্তারিত পড়ুন

  • সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিলের বোনের মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জেলা সাংবাদিক ফোরামের শোক
  • সাংবাদিক এড. এ কে এম শহীদউল্যাহ’র ছেলের মত্যুতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শোক
  • সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিলের বোনের মত্যুতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শোক
  • সাতক্ষীরায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ
  • সাতক্ষীরায় ২ নারীসহ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ২৮ জন চুড়ান্ত
  • সাতক্ষীরায় কোচিং সেন্টার বন্ধে জেলা প্রশাসকের কঠোর নির্দেশণা
  • সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলারের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ
  • সাতক্ষীরায় ৯-১৫ বছর বয়সী ৫লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেয়া হবে
  • সাতক্ষীরায় ঘেরের আইলে সবজি চাষে নতুন সম্ভাবনা
  • সাতক্ষীরায় ভেজাল সার তৈরির অভিযোগে ১ ব্যক্তিকে জরিমানা
  • সাতক্ষীরায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তির সাঁজা
  • সাতক্ষীরার মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে র‍্যালি, সভা, বৃক্ষরোপন