জুমার নামাজ একা আদায় করা যায় না যে কারণে


জুমার দিন জোহরের পরিবর্তে জুমা ওয়াজিব মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন (যিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন নন) মুকিম (যিনি মুসাফির নন) স্বাধীন (যিনি ক্রিতদাস নন) নগর বা লোকালয়ের অধিবাসী পুরুষদের ওপর; যার এমন কোনো গ্রহণযোগ্য অসুবিধা, অসুস্থতা বা বার্ধক্য নেই যে কারণে তিনি মসজিদে উপস্থিত হতে ও জুমা আদায় করতে অক্ষম। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জুমার নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জামাতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু তা চার প্রকার লোকের উপর ওয়াজিব নয়; ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি। (সুনান আবু দাউদ: ১০৬৭)
জুমা অর্থ সম্মিলন বা জমায়েত। জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো কিছু সংখ্যাক মানুষের জমায়েত। কিছু সংখ্যাক মানুষ একসাথে জামাতবদ্ধ হয়েই জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ একা আদায় করা গেলেও জুমার নামাজ একা আদায় করা যায় না।
জুমার দিন খুতবার আগেই মসজিদে চলে যাওয়া আবশ্যক। জুমার আজানের পর দুনিয়াবি কাজকর্ম করার ব্যাপারে কোরআনে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। দ্রুত মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমা: ৯)
অর্থাৎ জুমার দিন আজান হয়ে গেলে জামাতে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে চলে যাওয়া, সব দুনিয়াবি কাজ বন্ধ করে দেওয়া কুরআনের সরাসরি নির্দেশে ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য।
জুমার নামাজ একা আদায় করার সুযোগ কেন রাখা হয়নি এ ব্যাপারে আলেমরা বলেন, জুমার উদ্দেশ্য শুধু নামাজ আদায় করা নয়, বরং জুমার খুতবার মাধ্যমে ইসলামের বিশ্বাস, চেতনা ও বিধিবিধানের চর্চা, মানুষকে ইসলামে নিষিদ্ধ কাজগুলোর ব্যাপারে সতর্ক করা, জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া ও জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করাও জুমার উদ্দেশ্য। সপ্তাহে একবার জমায়েতের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে ঐক্য ও সামাজিক সম্প্রীতি সৃষ্টি করাও জুমার উদ্দেশ্য। এ কারণে জুমার আগে খুতবা দেওয়া জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। জামাতবদ্ধ হওয়াও জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত।
যে সব শর্ত পূরণ করলে জুমা শুদ্ধ হয়
১. জুমার সময় হওয়া
জুমার নামাজ আদায়ের নির্ধারিত সময় হলো জুমার দিনের জোহরের সময়। জুমার দিন জোহরের সময়ের মধ্যেই জুমা আদায় করতে হবে।
২. জুমার আগে খুতবা দেওয়া
নামাজের আগে খুতবা দেওয়া জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। খুতবা ছাড়া জুমা শুদ্ধ হয় না। জুমার খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা করা হয়, শরিয়তের বিধি বিধান বর্ণনা করা হয় এবং নবিজি (সা.), তার সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়।
৩. জামাতবদ্ধ হয়ে জুমা আদায় করা
এই শর্তটির কথা আগেই উল্লেখ করেছি। জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য জামাত অত্যাবশ্যক এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। তবে জামাত কত বড় হতে হবে এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম আবু হানিফার (রহ.) মতে ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি থাকলে জুমা শুদ্ধ হবে। ইমাম মালেকের (রহ.) মতে জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের সাথে কমপক্ষে বারোজন পুরুষ মুসল্লি থাকতে হবে। ইমাম শাফেঈ ও আহমদের (রহ,) মতে জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য কমপক্ষে চল্লিশজন মুসল্লি থাকতে হবে। চল্লিশজনের জামাত ছাড়া জুমা শুদ্ধ হবে না।
৪. জুমার জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া
জুমার জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। এ কারণে সবার জন্য উন্মুক্ত নয় এমন জায়গায় জুমা শুদ্ধ হয় না। যেমন জেলখানা মসজিদ, অফিসের নামাজ ঘর, কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য বিশেষায়িত মসজিদ ইত্যাদি।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
