দেবহাটায় সনাতন পদ্ধতির দাঁড়িপাল্লায় মাছ বিক্রি করে ঠকছেন চাষিরা
দেবহাটা প্রতিনিধি : দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার মাছ বিক্রির আড়ৎ বা সেডগুলোতে মাছ ক্রয়-বিক্রয় করা হয় পুরাতন পদ্ধতির হাত দাঁড়িপাল্লায়। আধুুনিক সময়ে সবক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও এই সেক্টরের দেবহাটার মৎস্য সেডগুলোতে আনা হয়নি পরিবর্তন। কারণ এই মাছ ক্রয়ে রয়েছে ব্যাপক প্রতারণা। মাছ চাষিদের ওজনে কম দিতে এই সনাতন পদ্ধতির হাত দাঁড়িপাল্লায় মাছ বিক্রিতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার অভিযোগ বহুদিনের। তাছাড়া ব্যবসায়ীদের বিশেষ কৌশলে মাছের ওজনে কম দিয়ে চাষিদের ঠকিয়ে মোটা অংকের টাকা আয় করাই প্রধান লক্ষ্য আড়ৎদারদের। সে কারণে কোন ভাবেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে আসতে চান না এসব ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা পারুলিয়া মৎস্য আড়তে গত কয়েকদিন ধরে ডিজিটাল মিটারে মাছ ক্রয়বিক্রয় করা শুরু হয়েছে।
অপরদিকে গাজীরজাট, টিকেট, সুবর্ণাবাদ, কুলিয়াসহ উপজেলার পাশ্ববর্তী বাবুরআবাদ, বদরতলা মৎস্য আড়তে চিংড়ি ও সাদা মাছ ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। বিভিন্ন এলাকার মৎস্য চাষিরা তাদের উৎপাদিত মাছ এসব মৎস্য আড়তে তোলেন নায্য দাম পাওয়ার আশায়। কিন্তু কিছু কিছু স্থানে ওজনে কম দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের ওপর রাগ ও ক্ষোভ জন্মায় বিক্রেতাদের। এলাকার মৎস্যচাষিরা প্রান্তিক হওয়ায় দাদন বা এককালিন টাকা নিয়ে মাছ চাষ করেন। এতে করে ওই ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন দাদন গ্রহনকরা চাষিরা। ওজনে কম দেওয়া নানা সমস্যা তাদের চোখের সামনে ঘটলেও কিছু করার থাকে না প্রান্তিক চাষিদের। তবে ওজনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার হলে এই কারসাজি কমে আসার পাশাপাশি সঠিক মাপে মাছ বিক্রির সুযোগ পাবেন চাষিরা।
বর্তমানে বাজারে আসছে বিভিন্ন ডিজিটাল ওয়েট মেশিন বা ওজন মাপার যন্ত্র। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সহজ ভাষায় যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওজন বন্ধু’। জেলার বেশকিছু আড়তের ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করলেও কিছু অস্বাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে দেবহাটায় আলোরমুখ দেখছে না আধুনিক এ পদ্ধতি। পুরাতন পদ্ধতিতে ফাঁকি দিয়ে বিক্রেতাকে ঠকিয়ে বেশি লাভ করা যায়, তাই সবকিছু জেনেও কোন উদ্যোগ নেন না ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে চোরপুলিশ খেলেন। নামমাত্র বছরে দুএকবার অভিযান পরিচালনা করেন। এতে খুব একটা সমস্যা হয় না ওজনে কম দেওয়া ব্যবসায়ীদের। তাছাড়া অভিযানের কথা শুনে অনেকে আগে থেকে গা ঢাকা দেন। এতে করে সনাতন এই পদ্ধতিতে চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কেবলমাত্র ডিজিটাল পদ্ধতি না থাকায় ওজনে কম দেখেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হটলাইনে অভিযোগ করার সুযোগ থাকে না মৎস্যচাষিদের।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, উপজেলার সবগুলো আড়ৎ মিলে প্রায় ৩শ’র কাছাকাছি মৎস্য অকশন সেন্টার আছে। এখানে সবগুলো ঘরে প্রতিদিন মাছ কেনাবেচা হয় হাতে মাপা দাঁড়িপাল্লায়। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ঘর থেকে ৩৫০ টাকা হারে উত্তোলন করে সার্টিফিকেট দিয়ে যান। আমরা এই পদ্ধতিতে চলে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। তবে প্রশাসন নির্দেশ দেন ডিজিটাল পদ্ধতি মেনে নিব।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ জানান, বর্তমান আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করছি। কিন্তু কেবলমাত্র দেবহাটার মৎস্য সেডগুলোতে এখনো পুরাতন পদ্ধতিতে মাছ কেনাবেঁচা হয়। যাতে সাধারণ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দেবহাটার সব আড়তগুলোতে ডিজিটাল ওজন মাপা যন্ত্র চালু করতে কয়েকবার উপজেলা সমন্বয় সভায় বলা হয়েছে। এমনিক রেজুলেশনে আনা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে দেবহাটা উপজেলার সর্বত্র এই ডিজিটাল ওজন মাপক যন্ত্র ব্যবহার নিশ্চিত করতে সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাছ কেনাবেচা হলে ওজনের কম দেওয়ার বিষয়টি থাকবে না। আর চাষিরা প্রকৃত ওজনে মাছ বিক্রি করে লাভবান হবে। আমরা জিডিটাল পদ্ধতিতে মাছ কেনাবেচার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেছি। কিন্তু বিষয়টি ভোক্তা অধিকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হওয়ায় আমাদের একার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)