বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় সাগরে ভাসছেন জাহাজের দুই লাখ কর্মী
জাহাজে কাজ করেন ভারতের তেজস্বী দুজেসা। বাড়ি ফেরার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জলসীমা বন্ধ। ফলে তেজস্বীর মতো বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই লাখ মানুষ, যাঁরা জাহাজে কাজ করেন, তাঁরা সমুদ্রে আটকা পড়েছেন।
তেজস্বীদের এই দলে কার্গো জাহাজের প্রকৌশলী থেকে বিলাসবহুল প্রমোদতরির কর্মীরাও রয়েছেন। জাহাজে কাজ করেন, এমন বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্বজুড়ে জাহাজের কর্মীদের আটকে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, জাহাজগুলো সমুদ্রে আটকে পড়ায় সেখানে মানবিক সংকট দিন দিন বাড়ছে।
করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করার আগে এই কর্মীরা জাহাজে চেপে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন দেশ তাদের স্থল, জল ও আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অনেক জাহাজকর্মীর যাত্রা শেষ হলেও তাঁরা আর দেশে ঢুকতে পারছেন না। এই পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে কথা বলেছেন তেজস্বী। একটি বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজেকে ধরে রেখেছি। কারণ, আমার আসলে কিছু করার নেই।’ তিনি ভারতের একটি কার্গো জাহাজে কাজ করেন। তেজস্বীর মতো প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় কর্মী এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মহামারির কয়েক মাস আগেই তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছিলেন।
তেজস্বী বলেন, ‘সর্বশেষ ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাহাজ থেকে মাটিতে পা রেখেছিলাম গত ফেব্রুয়ারি মাসে।’ জাহাজের কর্মীরা সাধারণত ছয় থেকে আট মাস টানা কাজ করে থাকেন। এরপর আরেক দল কর্মীর কাছে জাহাজ বুঝিয়ে দিয়ে জাহাজ থেকে নামতে পারেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এবার সেটা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের বাড়ি ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যে একটি আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি।
প্রমোদতরিতে কারিগরি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ফিলিপাইনের চেরোকি সাপাজো। গত জানুয়ারির শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে কার্নিভ্যাল এক্সট্যাসি নামের প্রমোদতরিতে ওঠেন তিনি। এই সময় করোনা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না ৩১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি। এরপর সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া আরেক প্রমোদতরি ডায়মন্ড প্রিন্সেসে করোনা হানা দেয়। মার্চে কার্নিভ্যাল এক্সট্যাসি আবার ফ্লোরিডায় ফিরে আসে এবং যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। কিন্তু এবার আর কর্মীদের নামতে দেওয়া হয় না। পরবর্তী সাত সপ্তাহ তাঁদের ওই তরিতেই থাকতে হয়। সাপাজোকে চার মাস ধরে এই জাহাজেই থাকতে হয়েছে। এরপর গত ২ মে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের বন্দরে জাহাজ পৌঁছালে তাঁর মতো প্রায় ১ হাজার ২০০ কর্মীকে আরেকটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয় ফিলিপাইনে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এরপর ২৯ জুন তাঁরা ফিলিপাইনে পৌঁছান। কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি এই যাত্রা। এরপর তাঁকে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আপনি ভয় পাবেন। কারণ, আপনি জানেন না আপনি আদৌ বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না, কত দিন আপনাকে জাহাজে থাকতে হবে। এটি কঠিন। সত্যি, বেদনাদায়ক।’
সারা বিশ্বে যে পরিমাণ জাহাজকর্মী রয়েছেন, তার এক-চতুর্থাংশ ফিলিপাইনের নাগরিক। জানা গেছে, দেশটির প্রায় ৮০ হাজার জাহাজকর্মী এখনো সমুদ্রে আটকা পড়ে আছেন। এমন অনিশ্চয়তার কারণে সমুদ্রে আটকা পড়ে থাকা বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। ফ্লোরিডার পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে ফিলিপাইনের এক নাগরিক আত্মহত্যা করেছেন। এসব ঘটনার পর জাহাজ পরিচালনা করেন, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এমন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি।
সূত্র প্রথম আলো
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)