যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ১৬ লাখ ভোটেই তৃতীয় জর্গেনসেন


সবার চোখ ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর দিকে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া লিবার্টারিয়ান পার্টির নারী প্রার্থীও বেশ কয়েকটি রাজ্যে তাক লাগানো ভোট পেয়েছেন।
এখন পর্যন্ত হওয়া গণনায় জো জর্গেনসেনের বাক্সে ১৬ লাখের সামান্য বেশি ভোট পড়েছে বলে তার প্রচার শিবিরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সিএনবিসি।
ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন ও রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের পর এটাই এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পাওয়া সবচেয়ে বেশি ভোট। প্রধান দুই প্রার্থীর একেক জনের ভোট ৭ কোটির বেশি।
ভোটের হিসাবে জর্গেনসেনের পরে আছে গ্রিন পার্টির হাউই হকিন্স; তার প্রাপ্ত ভোট ৩ লাখ ৩৯ হাজারের চেয়ে একটু বেশি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেবল এই ক’জনই ছিলেন না।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করা ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার ২০০ এর বেশি।
সিএনবিসি জানিয়েছে, দোদুল্যমান যে কয়েকটি রাজ্যের ভোটের ফলের উপর এখনও ডনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের ভাগ্য নির্ভর করছে তার কয়েকটিতে লিবার্টারিয়ান পার্টি দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর ভোট কেটেছে বলেও ভাষ্য অনেক বিশ্লেষকের।
যদিও জর্গেনসেনের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে থাকা দলগুলোর প্রার্থীরা প্রধান দুই দলের ভোটবাক্সে হাত দেয় না।
“আমি একে ভোট কাটা বলি না, কেননা এই ভোটগুলো মার্কিন ভোটারদেরই,” সিএনবিসিকে এমনটাই বলেছেন এ লিবার্টারিয়ান প্রার্থী।
দুই সন্তানের মা, ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক (যিনি গবেষণা করেন না, কেবল ক্লাস নেন) ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজিতে পিএইচডি ডিগ্রিধারী জর্গেনসেন লিবার্টারিয়ান পার্টির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া প্রথম নারী।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সময় বিকাল পর্যন্ত তার প্রাপ্ত ভোট ১৬ লাখ ২১ হাজার ২৭৩টি ভোট বলে জানিয়েছে এনবিসি।
অন্য দলগুলো ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির ভোট কাটে না বলে জর্গেনসন দাবি করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘থার্ট পার্টি’গুলো যে ভোট পায় তা ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত জর্জিয়াতে জর্গেনসেনের প্রাপ্ত ভোট ৬১ হাজার ৩৯১টি। অন্যদিকে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে ব্যবধান ১৬শ’র কম। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান খুবই সামান্য হওয়ায় রাজ্যটিতে এখন ভোট পুনর্গননা হবে।
কেবল এবারই নয়, ২০১৬ সালেও গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন এবং লিবার্টারিয়ান পার্টির গ্রে জনসন গুরুত্বপূর্ণ ‘সুইং স্টেট’গুলোতে ব্যাপক সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন।
এ দুই প্রার্থী সেবার মিশিগানে একত্রে ২ লাখ ২২ হাজার ৪০০র বেশি ভোট পেয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হতে হলে সেবার মিশিগান জিততেই হতো হিলারি ক্লিনটনকে। কিন্তু রাজ্যটিতে তিনি ট্রাম্পের কাছে ১০ হাজার ৭০৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।
একই অবস্থা হয়েছিল ফ্লোরিডাতেও। ‘থার্ড পার্টির’ প্রার্থীরা সেখানে পেয়েছিলেন ২ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি ভোট; হিলারি হারেন এক লাখ ১৯ হাজার ৭৭০ ভোটের ব্যবধানে।
গত শতকের ৮০-র দশক থেকে লিবার্টারিয়ান পার্টির সঙ্গে যুক্ত জর্গেনসেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলের হয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছিলেন।
১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত লিবার্টারিয়ান পার্টির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, দলটি মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে সব ধরনের সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধী। দলটি নাগরিকের উপর নির্ধারিত বিভিন্ন ধরনের কর হ্রাস ও বিলুপ্ত করতেও আগ্রহী।
“যদি সরকারের কোনো দায়িত্ব থাকে, সেটিও হবে জনগণকে বলপ্রয়োগ ও জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষা করা,” বলা হয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে।
এই একই কারণে জর্গেনসেন এই কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নির্দেশনা দেওয়ার বিরোধী।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প বা বাইডেন যে-ই শেষ পর্যন্ত জিতুক, তাতে কিছুই যাবে আসবে না।
“আমাদের চেয়ে তারা একে অপরকে বেশিই পছন্দ করে,” বলেছেন এ লিবার্টারিয়ান।
জর্গেনসেনের মতে, যত দিন যাবে লিবার্টারিয়ান পার্টির ভোট বাড়তেই থাকবে।
“ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টি যদি আমাদের লিবার্টারিয়ানদের নীতি গ্রহণ করে তাহলেই একমাত্র যে উপায়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যেতে পারে,” বলেছেন তিনি।
কানিয়ে ওয়েস্টের বাক্সে ৬০ হাজার ভোট
কানিয়ে ওয়েস্ট। এবারের নির্বাচনে পড়া প্রায় ১৬ কোটি ভোটের মধ্যে নিজের দল ‘বার্থডে পার্টি’ মাত্র ৬০ হাজার ভোট পাওয়ার পর এরই মধ্যে ৪৩ বছর বয়সী এই র্যাপ গায়ক পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন।
তবে কানিয়ের রাজনৈতিক অভিলাষ সম্ভবত এখনি শেষ হয়ে যায়নি; চলতি সপ্তাহে এক টুইটে ‘কানিয়ে ২০২৪’ লিখে তিনি চার বছর পরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামারও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বেশিরভাগ রাজ্যে ব্যালটে নাম তোলার শেষ তারিখ পেরিয়ে যাওয়ায় প্রথমবার হোয়াইট হাউসের দৌড়ে নামা কানিয়ে ওয়েস্ট মোট ১২টি রাজ্যের ব্যালটে নিজের নাম রাখতে পেরেছিলেন।
তিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন টেনেসিতে, ১০ হাজার ১৮৮টি। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্যটি সাধারণত রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষেই থাকে।
জুলাইয়ে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণার সময় কেনি জানান, তার প্ল্যাটফর্মটি বানানো হয়েছে ব্ল্যাক প্যান্থার চলচ্চিত্রে দেখানো কাল্পনিক রাজ্য ওয়াকান্ডার মতো করে।
ফোর্বসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ র্যাপ গায়ক নির্বাচিত হলে পুলিশি নির্যাতন বন্ধ, টুথপেস্ট-ডিওডরেন্টের মতো মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য থেকে সব রাসায়নিক দূর এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এর ‘অসাধারণ সামরিক বাহিনীর’ মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।
দলের এমন ‘অদ্ভূত’ নাম রাখারও যুক্তি দিয়েছিলেন তিনি।
“কেননা, যখন আমরা জিতবো, তখনই সবার জন্মদিনের অনুষ্ঠান হবে,” বলেছিলেন তিনি।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
