মনিরামপুরের রাজগঞ্জে গরুর প্রধান খাদ্য বিচালীর তীব্র সংকট


গরুর প্রধান খাদ্য বিচালীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ অঞ্চলে। উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে বিচালী। বিচালীর দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় পানির দামে বিক্রি হচ্ছে গরু। এ জন্য মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ অঞ্চলের গরুর খামারীরা মহাবিপাকে আছেন।
এবার কোরবানীর ঈদে বহু গরু অবিক্রিত থেকে যাওয়ায় অধিকাংশ খামারীরা এই সংকটে পড়েছেন। তাছাড়া বিচালীর অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য এবং বৃষ্টিপাতের মৌসুমে অতিমাত্রার বৃষ্টিপাতের কারণে বহুখামারীর লাগানো ক্ষেতের ঘাস পঁচে মারা যাওয়ায় সম্প্রতি গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এক কাওন (১৬ পোন) বিচালী ৮/৯ হাজার টাকায় বেচাবিক্রি হচ্ছে। যা ৫/৬ টি গরুর এক সপ্তাহের খাবার। ফলে খামারজাত গরুর মুখে খাবার তুলে দিতে খামারীরা খাদ্য সংকটে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। তারা এই মুহুর্তে পারছেন না গরু বিক্রি করতে, পরছেন না অধিক মূল্যের এই উচ্চমূল্যের বিচালী কিনে খাওয়াতে।
এ দিকে, খামারীদের গরুর দুধ অধিকাংশ দিন অবিক্রিত থেকে যাওয়ায় দুধ বিক্রি নিয়ে ও অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। এসব খামারীরা দুধ বিক্রি করতে না পেরে আর্থিক সংকটে পড়ে গরুর খাবার কিনতে যেয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে অতিমাত্রার বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ চাষীরা ধানের বিচালী প্রস্তুত করতে না পারায় চলতি বছরে গরুর প্রধান খাদ্য বিচালীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে মুনাফালোভীরা চড়া দামে বিচালী বিক্রি করছে। সীমাহীন মূল্যদিয়ে বিচালী কিনে গরুর মুখে খাবার তুলে দিতে তাই অধিকাংশ গরুর মালিক ও খামারীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। উপজেলার রাজগঞ্জের হানুয়ার গ্রামের ইউনুস গাজী বলেন, বিচালী সংকটের কারণে ৫০ হাজার টাকার গরু মাত্র ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
বাড়ীতে আরও ২/৩টা গাভীও বাচুর গরু রয়েছে। এখন বাড়ীতে কোন বিচালী না থাকায় তিনি বেশ বে-কায়দায় পড়েছেন। ৮/৯ হাজার টাকা দিয়ে বিচালীর কাওন কেনা আসলেই কষ্টকর ব্যাপার। তারপরেও টাকা দিয়েও বিচালী সচরাচার মিলানো যাচ্ছে না। কয়েকজন কৃষক জানান, অতিমাত্রার বৃষ্টিতে তার ক্ষেতের নেপিয়ার ঘাস পচে মরে যাওয়ায় গোখাদ্যের এহেন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মণিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের শিক্ষক আকরাম হোসেন জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনা’র প্রভাবে তার গরুর খামার নিয়ে তিনি বেশ সংকটে পড়েছেন। বর্তমানে তার খামারে দুইটি বড় এঁড়ে গরু, তিনটি গাভী ও একটি বাচুর রয়েছে। তার খামারের বড় গরুটির ওজন ২৮-৩০ মন হবে। অন্য এঁড়ে গরুটিও প্রায় ১৮-২০ মন ওজন হবে। গ্রামীন ষাঁড় নামের বড় গরুটি গত কোরবানির ঈদে ৫ লাখ টাকা দর হয়। কিন্তু উপযুক্ত মূল্য না হওয়ায় গরুটি বিক্রি হয়নি। অন্যটিও উপযুক্ত দাম না পেয়ে তা অবিক্রি রয়ে গেছে। এ ছাড়া তার খামারে তিনটি দুধের গাভী রয়েছে। তিনটি গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় এক মন দুধ হয়। যা বিক্রি করে খামারে গরুর খাবার যোগাড় করতে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। সম্প্রতি মাঝে মধ্যে দুধ অবিক্রি থেকে যাওয়ায় এবং দুধের দাম কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে এখন লোকসান দিতে হচ্ছে। প্রতি কেজি ৩৫/৪০ টাকার স্থলে এখন সেই দুধ ২৫/২৬ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সফল খামারী শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, গরুর খাদ্যের জন্য দেড় বিঘা জমিতে ঘাস লাগানো রয়েছে। ঘাসের সাথে বিচালী মিশিয়ে এতোদিনে গরুকে খাওয়াতাম কিন্তু এখন বিচালী পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও পাওয়া যাচ্ছে তার মূল্য বেশ চড়া। উপজেলার সুন্দ্রা গ্রামের আবুল কাসেম বাবলু জানান, তার বাড়ীতে ৪টি গরুর খামার রয়েছে। বিচালী না থাকায় গো-খাদ্য নিয়ে তিনি বেশ সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান। গো-খাদ্যের যোগান দিতে তিনি সম্প্রতি দেড় বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস লাগিয়েছেন। বর্তমানে গো-খাদ্যের সংকট সারা উপজেলাব্যাপি তীব্র আকার ধারন করেছে। যাদের গোয়ালে গরু আছে এমন সব কৃষক পরিবার তাদের গরুর খাদ্য যোগাড় করতে মহাসংকটে রয়েছে বলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকাবাসীদের কাছ থেকে জানা গেছে।
গোখাদ্যের এ সংকট মোকাবিলা করতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের ভূমিকা কী ? জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. আবুজার সিদ্দিকী বলেন, বিচালীর বিকল্প হিসেবে সকল খামারী ও কৃষকদের ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘাস খাওয়ালে গরুর পুষ্টির কোন ঘাটতি হবে না বলে তিনি জানান। বর্ষাকালে নেপিয়ার জাতের ঘাস অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি পাকচং জাতের ঘাস লাগানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। করোনাকালীন সময়ে শহরের হোটেল-রেস্তোরায় দুধের চাহিদা কমে গেছে, তাছাড়া করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা কমে যাওয়ায় দুধ বিক্রি নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে ক্রেতারা দামও কম দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খামারীরা দুধ থেকে মাখন ও ঘি তৈরি করে বিক্রি করলে লাভবান হবেন বলে তিনি জানান।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
