লিটনের সেঞ্চুরির পরও ইনিংস ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ
২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিটন দাসের শৈল্পিক ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়ে ইয়ান বিশপ বলেছিলেন, ‘সে আজ ব্যাট দিয়ে মোনালিসা আঁকছে।’
লিটনের ব্যাটিং-সৌন্দর্য এভাবে মুগ্ধ করে অনেককেই। শুধু ধারাবাহিকতার অভাব ও ইনিংসগুলোকে পূর্ণতা দিতে না পারার কারণে বেশিক্ষণ মোহবিষ্ট হয়ে থাকার সুযোগ হয় না। তবে বাংলাদেশের ডানহাতি ব্যাটার ক্রাইস্টচার্চে আজ যেন ধ্রুপদি ব্যাটিংয়ের নতুন সংজ্ঞা লিখলেন।
কাট, আপার কাট, কাভার ড্রাইভ, ফ্রন্টফুট পুল-ধ্রুপদি ব্যাটিংয়ের ‘উৎকৃষ্ট উদাহরণ’ দিতে যা যা করতে হয়, সব করলেন লিটন দাস। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নিল ওয়াগনার-কাইল জেমিসনের খুনে বাউন্সারগুলোর জবাব দিলেন শক্ত হাতে। দু চোখে প্রশান্তির পরশ জাগিয়ে তুলে নিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
লিটন তিন অঙ্ক স্পর্শ করলেন অনেকটা ওয়ানডে মেজাজেই, ১০৬ বলে। সেঞ্চুরি করার একটু পরই অবশ্য আউট হয়ে গেছেন লিটন। কাইল জেমিসনের ভেতরে ঢোকা বলে ১০২ রানে থামেন তিনি। ১১৪ বলের ইনিংসে ডানহাতি ব্যাটার মেরেছেন দৃষ্টিননন্দন ১৪ চার ও ১ ছক্কা। লিটন আউট হওয়ার পর আর ১১ রান যোগ করতেই শেষ বাংলাদেশও।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফলো-অনে পড়া বাংলাদেশের কাঁধে ছিল বিশাল রানের বোঝা। এ অবস্থায় ১০৫ রানে ৩ উইকেট পড়লে ক্রিজে এসেছিলেন লিটন। তিনি থিতু হওয়ার আগেই আরও দুবার সঙ্গী বদল। এরপর নুরুল হাসান সোহানকে এক পাশে রেখে গড়েন শতরানের জুটি। নান্দনিক ব্যাটিংয়ে স্ট্রোকের পসরা মেলে ধরেন তিনি। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে চলে তাঁর শৈল্পিক পথচলা। এক পাশে সঙ্গী হারিয়ে চললেও লিটন ঠিকই পেয়ে যান দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা।
২৭ বছর বয়সী লিটন সাদা পোশাকে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন আগের সিরিজেই, চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে আশা জাগিয়েও ফিরেছিলেন ৮৬ রানে। তবে আজ আর ভুল করেননি।
লিটন আজ শুরুতে ছিলেন সতর্ক, ছুটছিলেন ধীরলয়ে। পরে মেলে ধরেন ডানা। তাঁর ইনিংসকে ভাগ করা যায় দুই ভাগে। প্রথম ১৫ রান করেন ৪৭ বলে। পরের ৮৫ রান এসেছে মাত্র ৬০ বলে! দ্রুত রান তুলতেও খেলেননি ‘অক্রিকেটীয়’ শট, কোনো শটেই ছিল না বাড়তি ঝুঁকি। কম্পাস টেনে দেওয়ার মতো স্ট্রেট ড্রাইভ, চাবুকের মতো পুল, নিখুঁত স্কয়ার কাট আর মোহনীয় কাভার ড্রাইভে রাঙান নিজের ইনিংস।
দলীয় ২৬৯ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে আউট হন লিটন। তাঁর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের হারও সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর ১১ রান যোগ করতেই শেষ মুমিনুল হকের দল। হারের ব্যবধানটা ইনিংস ও ১১৭ রানে। ইবাদত হোসেনকে আউট করে বিদায়ী টেস্ট স্মরণীয় করে রাখেন রস টেলর।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক জয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চে ড্র করতে পারলেই নিউজিল্যান্ড থেকে প্রথমবার ইতিহাস গড়ে ফেরার সুযোগ ছিল রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের সামনে। কিন্তু কিউইরা দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিন দিনেই জিতে নিল ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আওতাধীন সিরিজটি তাই শেষ হলো ১-১ সমতায়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)