কাগজে-কলমেই ‘মহান পেশা’!
সাতক্ষীরার ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা আজো পাননি বিশেষ অনুদান, দাবি এমপিওভূক্তির
ঈদুল ফিতরের আগে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ দেওয়া বিশেষ অনুদানের টাকা আজো পাননি সাতক্ষীরার ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিষয়টি জানিয়েছেন জেলার বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী।
তারা জানান, ‘অদৃশ্য কারণে আজো প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ অনুদানের টাকা তারা পাননি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু বলতেও পারছেন না। আদৌ কবে পাওয়া যাবে সেটাও নিশ্চিত নয়।’
সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি, শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈধ নিয়োগ, পাঠদান, শিক্ষা কার্যক্রমসহ সকল বিষয়াদী প্রতিপালন করেও বেতন-ভাতা পান না ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। অনেক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়ে মহান এই পেশাকে আকড়ে ধরে থাকলেও বছরের পর বছর এমপিওভূক্ত না হওয়ায় চরম হতাশা আর বিড়ম্বনায় রয়েছে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা না পারছেন বাঁচতে, না পারছেন মরতে। কাগজে-কলমে ‘মহান পেশা’ আজ তাদের জন্য ‘মহা কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মাঝে ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ অনুদানের টাকাও মাস পেরিয়ে গেলেও আজো পান নি। কবে পাবেন তাও নিশ্চিত নন। তবে তারা অনুদান চান না, তারা চান বেতন-ভাতা তথা এমপিওভূক্তি।
ননএমপিও শিক্ষকদের প্রতিনিধি কলারোয়ার বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক শেখ মো.আলকামুন বাবলু বলেন, ‘জানতে পেরেছি এনআইডি’র সাথে মোবাইল ফোন নং এর বিকাশ একাউন্ট সঠিক না থাকায় নাকি সাতক্ষীরা জেলায় টাকা আসছে না। এটা সংশ্লষ্টদের একটা খোড়া অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ সকলের তো একই সমস্যা নয়। যাদের সঠিক আছে তাদের টাকা তো বিকাশে আসতে পারতো। অথবা গত বছরের মতো চেকের মাধ্যমেও দিতে পারতো। এগুলো নেহাতই অকারণে দীর্ঘায়িত করা।’
আরেক ননএমপিও কর্মচারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে শুনলাম ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী আমাদের টাকা দিচ্ছেন। অথচ শিক্ষা দপ্তরের স্যারদের কারণে সেই টাকা কোন ঈদে পাবো, সেটা জানি না।’
একটি ননএমপিও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে লালফিতার দৌরাত্ম আর সহজ কাজ দীর্ঘায়িত করে কঠিন করে ফেলা বছরের পর বছর চলে আসছে। তা না হলে বাংলাদেশে ননএমপিও বলে কোন শব্দ থাকতো না। এমপিও যোগ্যতা অর্জন করেও যখন বেতন-ভাতা পাই না, তখন অনুদানের টাকা কবে আসবে সেটাও ভাবি না।’
জানা গেছে, গেলো ঈদুল ফিতরের আগে ১২মে করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে পড়া সারা দেশের ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদান প্রদানের লক্ষ্যে বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের ৫ হাজার ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়।
সেসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিলো। সেখানে জানানো হয়- ‘সারা দেশের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ পাঁচ হাজার ৭৮৫ জন, কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা ও সতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষক কর্মচারীকে এ অনুদান দেয়া হচ্ছে।
এসব শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনুদান দেয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগকে প্রায় ৭৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়- ‘প্রত্যেক নন-এমপিও শিক্ষক এককালীন অনুদান পাবেন ৫ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কর্মচারী পাবেন ২ হাজার ৫০০ টাকা করে।’
‘প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য ৪৬ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ৬১ হাজার ৪৪০ নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য ২৮ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।’
নিজেদের ন্যায্য বেতন-ভাতা তথা এমপিওভূক্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বিশেষ অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন চির ভুক্তভোগি ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হামিদ বলেন, ‘পাইনি তবে পাবে। আশা করছি আগামি মাসে পেতে পারে।’
উল্লেখ্য, গত বছর অনুরূপ কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসের তত্ববধায়নে চেকের মাধ্যমে বিশেষ অনুদানের ৫হাজার ও আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছিলো জেলার ননএমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীরা। সেটাই ছিলো তাদের সর্বপ্রথম সরকারের দেয়া কোন টাকা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)