সালমানের মা, ভাই ও মামার নামে সামিরার ১০ কোটি টাকার মামলা


ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর ২৪ বছর পরও ফুরায়নি তার আবেদন, কাটেনি তার প্রভাব। বেঁচে থাকতেই তরুণ প্রজন্মের কাছে ক্রেজে পরিণত হয়েছিলেন। তার স্টাইল, ফ্যাশন ছিলো ট্রেন্ড৷ আর অকালমৃত্যু তাকে দিয়েছে অমরত্ব। আজও তার জনপ্রিয়তায় সমক্ষক কেউ এই দেশের সিনেমাতে নেই।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই অভিনেতা মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুরহস্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে তদন্ত। বেশ কয়েকটি আইন রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত শেষে রায় দিয়েছে আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান। তবে তার পরিবারের সদস্য মা নিলুফার জামান চৌধুরী নীলা, ছোট ভাই চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরান ইভান ও মামা আলমগীর কুমকুম তা প্রত্যাহার করে এসেছেন বরাবরই।
তারা দাবি করে আসছেন সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আর সেই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক ও তার পরিবার। মৃত্যুর পর মুহূর্ত থেকেই তারা সালমানের মৃত্যুর জন্য সামিরাকে দায়ী করে আসছেন। কোনো কিছু প্রমাণ না হওয়া সত্বেও তাকে খুনি বলে বেড়াচ্ছেন, সালমান ভক্তদের উস্কানি দিচ্ছেন। এতে করে নিজের ও পরিবারের মানহানি হয়েছে দাবি করে মানহানি মামলা করেছেন সামিরা।
তিনি জানান, সালমান শাহের মা, ছোট ভাই ও মামা আলমগীর কুমকুমের নামে ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়েছে।
সামিরা বলেন, ‘ভালোবেসে নিজের পরিবার ছেড়ে ইমনের (সালমান শাহ) হাত ধরে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম আমি। ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবেসে আমৃত্যু। আমি কখনোই ওকে ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় হারাতে পারতাম না। বাচ্চা একটা মেয়ে ছিলাম আমি। অনেককিছুই বুঝতে পারতাম না। যার ফলে দাম্পত্য জীবনে বহুবার বহু কারণে কষ্ট পেয়েছি। অভিমান করেছি। কিন্তু ইমনের ভালোবাসা সব বুঝিয়ে দিয়েছে।
সেই মানুষটা মারা যেতে না যেতেই আমাকে তার খুনের দায়ে অভিযুক্ত করা হলো। মিথ্যে সব রুচিহীন, নোংরা, অশ্লীল গল্প সাজিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে দেশবাসীর কাছে হেয় করা হয়েছে। বারবার। বহুবার। আর কত সহ্য করা যায়। সেজন্যই আমি আমার ও পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে আইনের দ্বারস্থ হলাম।’
মামলাটি কবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস আগেই এই মামলাটি করা হয়েছে। এরপর থেকেই উনারা কিছুটা চুপ করে আছেন। বারবার তদন্ত করে প্রমাণ হয়েছে যে ইমন আত্মহত্যা করেছে। তারপরও তারা মনগড়া নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে, ইমনের মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা করা বজায় রাখকে এটাকে খুন বলে যাচ্ছে। আর কোনো প্রমাণ ছাড়া মনগড়া গল্প সাজিয়ে আমাকে ও আমার বাবার বাড়ি, শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সম্মান হানি করা হচ্ছে। কেন মেনে নেবো আমি? অনেক সুযোগ ও সম্মান তাদের দেখানো হয়েছে। এবার এসব থামা উচিত।’
সামিরা আরও বলেন, ‘তারা খুনের মামলা করেছেন। তারা কিন্তু বাদী। মামলায় জড়ালে আইনি জটিলতা থাকে যেখানে সেখানে মুখ খোলা নিয়ে। কিন্তু তারা সেসব কিছুই মানেননি। ২৪টা বছর ধরে একতরফা সব গল্প বলে বলে দেশের মানুষকে বিষিয়ে তুলেছেন আমার বিপক্ষে। কেউ কিছু না জেনে না বুঝে না ভেবে আমাকে খুনি ভেবে যাচ্ছে। গালি দিচ্ছে। আমার পরিবারকেও নোংরা ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে ২৪টা বছর। আমার বাবা, মা, বোনদেরও জড়ানো হয়েছে।
আমি একটা মেয়ে মানুষ। অল্প বয়সে বিধবা হয়েছিলাম। আমার শাশুড়ি তো আমার পাশে ছিলেন না। আমার শ্বশুর চেয়েছিলেন, কিন্তু উনার স্ত্রীর জন্য পারেননি। মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে ছেলের খুনে জড়িয়েছিলেন৷ তারা যদি আমাকে আশ্রয় দিতেন আজকের অবস্থান আমার অন্যরকম হতে পারতো। কিন্তু ২০-২২ বছরে একটা বিধবা মেয়ের কষ্ট তারা বুঝলেন না।
আমাকে খুনি বানাতে নেই এমন কিছু বাকি রাখেননি তারা। আমি হতাশাগ্রস্ত ছিলাম। প্রায়ই আত্মহত্যা করবো ভবতাম। সাহস হতো না। অবশেষে পরিবারের চাওয়াতে আমাকে বিয়ে করতে হয়েছে জীবনটা নতুন করে শুরু করার জন্য। আবেগে অনেক কিছু বলা যায়। কিন্তু এই সমাজে একটা যুবতী বিধবা মেয়ের কি অবস্থা হয় একমাত্র যে বা যারা ভুক্তভোগী সে বা তারাই জানে।
আজ আমার একটা সংসার হয়েছে। ছেলেমেয়ে হয়েছে। তারা বড় হচ্ছে। তাদের জড়িয়েও যা তা বলা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তারা কিন্তু কখনোই চুপ থাকেনি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমি চুপ ছিলাম। এখন সময় হয়েছে সবকিছু নিয়ে কথা বলার। যেটা সত্য সেটা চিরকাল সত্যই। আমি নিজের চোখে যা দেখেছি তাই বলবো। সেই ’৯৬ সালেও বলেছি ইমন আত্মহত্যা করেছে এখনো তাই বলছি। যদি সেটা মিথ্যে হতো বারবার তদন্তের কোনো না কোনোবার সেটা প্রমাণ হতো।
আসছে অক্টোবর মাসে চূড়ান্ত রায় দেবে পিবিআই। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। আমি এখনো আত্মবিশ্বাসী নিজের জানা ও দেখা সত্যের সম্পর্কে। আইন কখনো কারা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। আবেগ আক্রান্তও হয় না। সে সত্যের অনুসন্ধান করে সত্যকেই জয়ী বলে ঘোষণা দেবে। সেটা আমি মেনে নেবো। তবে প্রমাণ ছাড়া যদি কেউ আমাকে বা আমার পরিবারকে মিথ্যে দায়ে অভিযুক্ত করে, কোনোরকম মানহানির চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন ইমন। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তবে সেখানে কিন্তু কাউকে আসামি করা হয়নি। অনেককেই সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ কিন্তু আসামি নয়। অথচ নীলা চৌধুরীরা বারবার বলে বেড়াচ্ছেন অমুক আসামি, তমুক আসামি। মিথ্যে বলে বলে এটাই প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। কারণ তাদের বিপক্ষ থেকে কেউ এসব নিয়ে কথা বলেনি এতদিন। এখন আমি কথা বলছি। অনেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারছে। তারা নিজেদের বিবেক দিয়ে এটাও বুঝতে পারছে ইমনের পরিবার থেকে যা বলা হয়েছে এতদিন সবই ভিত্তিহীন, প্রমাণহীন, বানোয়াট গল্প মাত্র।’
তিনি আরও জানান, সালমান শাহের স্ত্রী হিসেবে তার পাওনা বুঝে নেবেন তিনি। সামিরা বলেন, ‘গুলশানে আমার নামে ফ্ল্যাট কিনেছিলো ইমন। ফেরারী ব্রান্ডের একটা গাড়ি দিয়েছিলো। ওটার রেজিস্ট্রেশন আমার নামে এখনো।
এগুলো একেবারেই আমার সম্পত্তি। এছাড়া কক্সবাজারে ২০ বিঘা জমি কিনেছিলো ইমন। আরও অন্যান্য যা সম্পত্তি ছিলো ইসলামি বিধানমতে এখানে আমার ২৫ শতাংশ ভাগ রয়েছে। যেহেতু আমাদের কোনো সন্তান নেই। তাই বিধবা হিসেবে ২৫ ভাগ পাবো আমি। সেগুলো কোথায়? সব আমি বুঝে নেবো আইনিভাবেই। এরইমধ্যে উকিলের সাথে কথা বলেছি আমি।
সম্পত্তি হাতে এলে সব নিলামে তুলে ইমনের নামে মাদ্রাসা করবো ওর ভক্তদের সাথে নিয়ে। সম্ভব হলে ওর ভক্তদের মাঝে বিতরণ করে দেবো কিছু অর্থ৷ আমি আর ছাড় দেবো না।’
সালমান শাহের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতেই তার উপর স্বামী খুনের দায় চাপানো হয়েছে বলে মনে করেন সামিরা।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
