রাজগঞ্জ ও নেহালপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ফার্মাসিস্টরাই ভরসা রোগীদের
যশোরের মণিরামপুরের রাজগঞ্জ ও নেহালপুরের দুটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র বেহাল। এ দুই কেন্দ্রের কোনো স্থাপনা নেই। নেই কোনো চিকিৎসক কিংবা নার্স। নামসর্বস্ব এই দুই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখেন দুজন ফার্মাসিস্ট। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং উপায় না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ভরসা করতে হচ্ছে ফার্মাসিস্টদের ওপর। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বলছে- রাজগঞ্জে কোনো স্থাপনা নেই। নেহালপুরের ভবন পরিত্যক্ত। এই দুটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন করে ফার্মাসিস্ট আছেন। বাকি পদগুলো শূন্য। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে- প্রতিটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসক, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো), একজন নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন অফিস সহায়ক থাকার নিয়ম রয়েছে। যাঁরা সার্বক্ষণিক সেখানে অবস্থান করবেন।
সরেজমিন উপজেলার রাজগঞ্জ উপস্বাস্থকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে- একটি কক্ষে বসে রোগী দেখছেন এক ব্যক্তি। বাইরে দুটি বেঞ্চে কয়েকজন রোগী বসে আছেন। ভেতরে ঢুকে জানা গেল তিনি চিকিৎসক নন, ফার্মাসিস্ট। তাঁর নাম হীরাশীষ মজুমদার।
চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে জানতে চাইলে হীরাশীষ মজুমদার বলেন- এখানে সুমন গুপ্ত নামের একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা ছিলেন। ৭-৮ মাস আগে তিনি বদলি হয়ে গেছেন। আর কেউ আসেননি। আবু তৌহিদ নামে একজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (সেকমো) এখানে আছেন। তবে তিনিও বহুদিন ধরে সাময়িক বহিস্কার হয়ে আছেন। একজন সেবিকার পদায়ন এখানে আছে। উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় তিনি মণিরামপুর হাসপাতালে সেবা দেন। অফিস সহায়কের পদটি ৫-৬ বছর ধরে খালি আছে।
হীরাশীষ মজুমদার আরও বলেন- আমাদের এখানে কোনো স্থাপনা নেই। এক সময় ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আমাদের কার্যক্রম চলতো। ১৯৯০ সাল থেকে ঝাঁপা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটা কক্ষ নিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়। আজও সেভাবে চলছে। এখানে কেউ না থাকায় আমি রোগী দেখে ওষুধ দিই। তাও ঠিকমতো বসতে পারি না। এখন সপ্তাহে দুদিন পরীক্ষার কেন্দ্রে ডিউটি দিতে হচ্ছে। এখানে ২৭ রকমের ওষুধ আছে। সেগুলো রোগীরা পায়। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিই। নিয়মিত ৬০ থেকে ৭০ জন এখানে সেবা নেন। জটিল কিছু হলে তাঁদের হাসপাতালে রেফার করি।
রাজগঞ্জের হানুয়ার গ্রাম থেকে সেবা নিতে আসা মোনেনা বেগম বলেন- দু-দিন এখানে আইছি। আগের দিন আইসে কাউরে পাইনি। আজ ডাক্তার আছে।
নেহালপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে- এ কেন্দ্রের ভবনটি পরিত্যক্ত পড়ে আছে। সেখানে বাজারের ব্যবসায়ীরা আসবাবপত্র তৈরির সরঞ্জাম রেখেছেন। খোঁজ নিতে জানা গেলো, একই চত্বরে পাশের নেহালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চলছে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম। সেখানেও একটি কক্ষে আগত রোগীদের সেবা দেন ফার্মাসিস্ট সমরেন্দ্র তরফদার।
এ নিয়ে সমরেন্দ্র তরফদার বলেন- প্রায় ২০ থেকে ২২ বছর ধরে আমাদের এই ভবন পরিত্যক্ত। আমরা কোনো রকমে নেহালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটি কক্ষ নিয়ে কাজ চালাচ্ছি। এখানে সর্বশেষ চিকিৎসা কর্মকর্তা ছিলেন ডা. মঞ্জুরুল মুর্শিদ। দু-বছর আগে তিনি বদলি হন। এরপর আর কেউ আসেননি। আমি একা রোগী দেখার কাজ করি। প্রতিদিন ৪০-৫০ জন রোগী দেখা লাগে।
নেহালপুর এলাকার বাসিন্দা রিপন হোসেন বলেন- আমাদের এটা নামে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানে একজন ছাড়া কোনো ডাক্তার, নার্স নেই। যিনি আছেন, দুপুর ১টার পর তাঁকে পাওয়া যায় না।
এ নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন- আমাদের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র দুটিতে একজন করে ফার্মাসিস্ট আছেন। বাকি পদগুলো শূন্য। ফার্মাসিস্টদের কাগজে কলমে রোগী দেখার সুযোগ নেই। কেন্দ্র পরিচালনার স্বার্থে কিছু মৌলিক ওষুধ তাঁদের দেওয়া হয়েছে যেন আগত রোগীদের তাঁরা সেগুলো দেন। এ ছাড়া রাজগঞ্জে আমাদের কোনো স্থাপনা নেই। নেহালপুরের ভবন পরিত্যক্ত। বিষয়টি অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)