সফল জীবন কাকে বলে?
তারিক ইসলাম : বাবাকে এক ছেলের জিজ্ঞাসা সফল জীবন কাকে বলে?
বাবা : আমার সাথে চল, আজ ঘুড়ি উড়াবো।
বাবা ঘুড়ি ওড়ানো শুরু করলেন। ছেলে মনোযোগ দিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।
ঘুড়ি বেশ কিছুটা উপরে উঠার পর বাবা বললেন : ঐ দেখ ঘুড়িটা অতো উচুঁতেও কেমন বাতাসে ভেসে আছে। তোমার কি মনে হয় না এই সুতার টানের কারনেই ঘুড়িটি আরো উপরে যেতে পারছে না?
ছেলেটি একটু ভেবে বলল, তা ঠিক সুতা না থাকলে ওটা আরো উপরে যেতে পারতো।
বাবা কিছু না বলে মুচকি হাসলেন আর আলগোছে সুতোটা কেটে দিলেন। ঘুড়িটা সূতার টান মুক্ত হয়েই প্রথমে কিছুটা উপরে গেলো।কিন্তু একটু পরেই নিচের দিকে নামতে শুরু করলো এবং এক পর্যায়ে মাটিতে পতিত হল।
এবার বাবা ছেলেকে জীবনের দর্শন শুনাচ্ছেন…
শোন জীবনে আমরা যে উচ্চতায় আছি বা থাকি সেখান থেকে প্রায়ই মনে হয় ঘুড়ির সুতার মত কিছু বন্ধন আমাদের আরও উপরে যেতে বাধা দেয়। যেমন – পরিবার, সমাজ, অনুশাসন, সন্তান, মা – বাবা।
আর আমরাও সেই সব বাঁধন থেকে মুক্ত হতে চাই কখনো কখনো। বাস্তবে এই বন্ধন গুলোই আমাদেরে উচুঁতে টিকিয়ে রাখে; স্থির রাখে, নিচে পড়ে যেতে দেয় না। এই বন্ধন না থাকলে আমরা হয়তো ক্ষণিকের জন্য কিছুটা উপরে যেতে পারি তার পর আমাদের পরিণতি হবে ঐ সুতোকাটা ঘুড়ির ন্যায়।
জীবনে তুমি যদি উচুঁতে টিকে থাকতে চাও তবে কখনেই এই বন্ধন গুলো ছিন্ন করবে না। সুতা আর ঘুড়ির মিলিত বন্ধন ও আমাদের কে জীবনের উচ্চতায় টিকে থাকার ভারসাম্য দেয়। আর এটাই হল প্রকৃত জীবন।
ভালোবাসাই জীবনের সব নয়, তবে কিছু ভালোবাসার মানুষ ছাড়া জীবনটা শূন্য মনে হতে পারে। ভালোবাসা ছাড়াও আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন, কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া জীবনের একটা অংশ খালি মনে হবে।
আপনার জীবনে কিছু মানুষ থাকা দরকার যারা, আপনাকে ভালোবাসে – বন্ধুবান্ধব, পরিবার, পিতা – মাতা, স্বামী – স্ত্রী, পুত্র – কন্যা ও আপনার নিকট জন। যারা আপনাকে নিরঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসবে।
জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুলি কেউ আপনাকে কাগজে লিখে দিতে পারবে না, আপনাকে অবশ্যই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই কিভাবে ভালোমানুষ হতে হয় তা পড়ানো হয় না। সেটা আপনাকে নিজে নিজে শিখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আমি প্রায় সবকিছু জেনে গেছি এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবকিছু এ বইয়ে লেখা আছে; এমনটি ভাববেন না।সত্যটা হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ জিনিস গুলো একটি বইয়ে কাগজেয় পাতায় লিখে ফেলা প্রায় অসম্ভব। প্রকৃতি থেকেই তা জানতে হবে।
পিঁপড়ের কাছ থেকে শৃঙ্খলা শিখুন। একই টার্গেটের দিকে লক্ষ্য রেখে এক সঙ্গে সারিদিয়ে চলে। বাধাকে কিভাবে অতিক্রম করতে হয় তাদের কাছে শিখুন। পিঁপড়ের সারির সামনে একটি কাঠের টুকরো রাখুন। তারা হয় তার উপরে উঠে সেটা অতিক্রম করে যাবে, না হয় সেটা নিচ দিয়ে অতিক্রম করবে। তারা বাধা দেখে কখনোই পালিয়ে যাবে না।ভেড়ার পালদের দেখে শিখুন নেতাকে কিভাবে অনুসরণ করতে হয়। প্রথম ভেড়াটি যেদিকে যাবে সবাই তাকে অনুসরণ করবে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় শিক্ষক হচ্ছে মানুষের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞাতা। “পৃথিবী হল আমার শ্রেণি কক্ষ, প্রত্যেক দিন হল একটি নতুন অধ্যায় এবং প্রত্যেক ব্যাক্তি যাদের সাথে আমার দেখা হয়, তারা আমার শিক্ষক ” এমন মনোভাব নিয়ে জীবন যাপন করলে আপনার শিক্ষাগুলোও সমৃদ্ধ জ্ঞানে পরিণত হবে। এবং আপনার বেঁচে থাকার আনন্দও বেড়ে যাবে।
বইতো আমরা প্রতিদিনই পড়ি কিন্তু কি ধরনের বই পড়ি? আমাদের এখনকার সময়ে বেশিরভাগ মানুষ একাডেমিক বই নিয়ে পড়ে থাকি। কিন্তু পৃথিবীতে যে জ্ঞানের আরও বৃহৎ ভান্ডার আছে, সেটা আমরা উপলব্ধি করিনা। একাডেমিক বই আসলে মানুষকে জ্ঞানী করতে পারে না। পড়তে শেখায় মাত্র। জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদের কে একাডেমি বই এর বাহিরেও আরো বেশি বেশি বই অধ্যায়ন করতে হবে।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে?
প্রজ্ঞা মানে প্রকৃষ্ট জ্ঞান, যে জ্ঞান কর্ষিত চর্চিত হয়েছে, কর্মে প্রতিফলিত হয়েছে, যার দ্বারা মঙ্গল সাধিত হয়েছে।
চোরের জ্ঞান আছে যে সমাজে চুরিকে অপরাধ হিসাবে ধরা হয়, আর ধরা পড়লে মার খেতে হয়, জেল-জরিমানা দিতে হয়; কিন্তু জেনেও সে চুরি করে। এই লোকের জ্ঞান আছে, প্রজ্ঞা নাই।
প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি কর্মে সাধু, চিন্তায় সৎ; কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তি ভন্ড বাটপার হতেও পারেন। কি করে লোক ঠকাতে হয় তিনি জানেন, এবং তিনি ঠগবাজঃ তিনি জ্ঞানী বাটপার।
সাফল্য আর সার্থকতার মধ্যে পার্থক্য আছে ।সাফল্য একটা স্থূল বিষয়।চোর – বাটপার আর ফালতু নগণ্য মানুষও সফল হয়।আমাদের জীবনের লক্ষ হওয়া উচিত সাফল্য নয় , সার্থকতা।
“আসল প্রশ্ন হইল …..
যে ভিতর থেকে তুমি কেমন ?
যদি ভিতর খারাপ থাকে ,
তুমি যাহা করিবে সেইটা
খারাপ ফলিত হইবে ।
যদি ভিতর সঠিক থাকে
তাহলে তুমি যাহা করিবে
সেটাই সঠিক ফলিত হইবে ।”
বাজ পাখি পারলে আমরা কেন পারবো না?
বাজ পাখি প্রায় ৭০ বছর জীবিত থাকে । অথচ ৪০ আসতেই ওকে একটা গুরুত্ব পূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় । ওই সময় তাঁর শরীরের তিনটি প্রধান অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে।
১। থাবা (পায়ের নখ) লম্বা ও নরম হয়ে যায় । শিকার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
২। ঠোঁট টা সামনের দিকে মুড়ে যায় ।ফলে খাবার খুটে বা ছিরে খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
৩। ডানা ভারী হয়ে যায় । এবং বুকের কাছে আটকে যাওয়ার দরুন উড়ান সীমিত হয়ে যায় । ফলস্বরূপ শিকার খোঁজা , ধরা ও খাওয়া তিনটেই ধীরে ধীরে মুশকিল হয়ে পড়ে ।ওর কাছে তিনটি পথ খোলা থাকে।
ক। আত্মহত্যা
খ।শকুনের মতো মৃতদেহ খাওয়া
গ। নিজেকে পুনঃস্থাপিত করা।
ও তখন একটা উঁচু পাহাড়ে আশ্রয় নেয় । সেখানে বাসা বাঁধে । আর শুরু করে নতুন প্রচেষ্টা । সে প্রথমে তাঁর ঠোটটা পাথরে মেরে মেরে ভেঙ্গে ফেলে । এর থেকে যন্ত্রণা আর হয়না ।একই রকমভাবে নখগুলো ভেঙ্গে ফেলে । আর অপেক্ষা করে নতুন নখ আর ঠোঁট গজানোর।
নখ ও ঠোট গজালে ও এর ডানার সমস্ত পালক গুলো ছিড়ে ফেলে।কষ্ট সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে নতুন পালকের।১৫০ দিনে যন্ত্রণা ও প্রতীক্ষার পর সে সব নতুন করে ফিরে পায়।আবার সেই লম্বা উড়ান আর ক্ষিপ্রতা। এরপর সে আরো ৩০বছর জীবিত থাকে আগের মত শক্তি ও গরিমা নিয়ে। ইচ্ছা, সক্রিয়তা ও কল্পনার কারনে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি ৪০ আসতেই।অর্ধজীবনেই আমাদের উৎসাহ,আকাঙ্খা,শক্তি কমে যায়।আমাদেরও উচিত আলস্য উৎপন্নকারী মানসিকতা ত্যাগ করে অতীতের ভারাক্রান্ত মনকে সরিয়ে ও জীবনের বিবশতাকে কাটিয়ে ফেলতে হবে বাজের ঠোট,ডানা আর থাবার মত।
১৫০দিন না হলেও ১ মাসও যদি আমরা চেষ্টা করি তাহলে আবার আমরা পাবো নতুন উদ্যম,অভিজ্ঞতা ও অন্তহীন শক্তি।নিজেকে কখনই হারাতে দেবনা আর হারও মানবেন না।
তারিক ইসলাম
তরুণ কবি ও লেখক
শিক্ষার্থী অনার্স ২য় বর্ষ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ,সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)