নড়াইলে ভাতা কার্ডের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ!


নড়াইল জেলার মাউলি ইউনিয়নে বয়স্ক ও বিধবাসহ বিভিন্ন ভাতা কার্ডের তালিকা তৈরিতে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা সমাজসেবা এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ওই ইউনিয়নে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন, প্রতিবন্ধী, দলিত-হরিজন ও বেদে ভাতা কার্ডধারী রয়েছেন ১ হাজার ৪০৭টি। কিন্তু ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন, কয়েক মেম্বরসহ সংশ্লিষ্টরা মিলেমিশে অর্থের বিনিময়ে নির্ধারিত বয়স না হলেও বয়স্ক ভাতা, স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রীর বিধবা ভাতা, গর্ভবর্তী না হওয়া সত্ত্বেও মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী না হয়েও প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মাউলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মহাজন গ্রামের রঞ্জন বিশ্বাস জানান, তার এবং স্ত্রী যমুনা বিশ্বাসের বয়স্ক ভাতার কার্ড করতে মোট ৪২ হাজার টাকা নিয়েছে এ ওয়ার্ডেরই সাবেক মেম্বর জাহাঙ্গীর খাঁ।
মহাজন গ্রামের খোকন দাস (৩৭) (০১৭২৪-০৩৯৭৫৩) এ প্রতিনিধিকে বলেন, স্থানীয় এক ব্যক্তি তাকে এবং তার আপন ভাইরা মহাজন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী নৃপেন সাহা(৪৬)কে বয়স্ক ভাতা কার্ড করে দিয়েছে। বয়স্ক ভাতা কার্ড করতে গেলে ৬৫ বছর হতে হয় তা তিনি জানতেন না বলে জানান।
দক্ষিণ মহাজন বাজারের গুরুদাসী বিশ্বাস, স্বামী প্রভু বিশ্বাস বিধবা না হয়েও বিধবা ভাতার কার্ড করেছেন।
গুরুদাসীর ছেলে সজিব বিশ্বাস (০১৮৮৭-১৩০৭৯৩) বলেন, তার মা অশিক্ষিত বিধায় না বুঝেই এ কার্ড করেছেন। ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে এ কার্ড করেছেন বলে জানান।
উত্তর মহাজন গ্রামে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ভূমিহীন মমতাজ বেগম (০১৩০৮-৫০১৪২১) বলেন, তার স্বামী মুজিবর মোল্যার বেদে কোর্ডের জন্য স্থানীয় সুজল মেম্বরকে ৬ হাজার টাকা দিলেও কার্ড করে দেয়নি। বলেছে আরও ৪ হাজার টাকা লাগবে। কিন্ত টাকা ফেরত দেয়নি। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে মারতে গিয়েছে।
এ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নদী ভাঙ্গনে প্রায় নি:স্ব হওয়া ৭৩ বছরের হেমায়েত বিশ্বাস, ৯৮ বছরের নির্মলা বর্মন, বাদাম বিক্রেতা বিধবা শ্যামলি বিশ্বাস (৪০), বিছানায় শয্যাশায়ী পংগু নিরঞ্জন বর্মন (৬০) কোনো কার্ড পায়নি। এ ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৭৫ ব’ছরের বড়–বিবি সুজল মেম্বরকে ৪ হাজার টাকা দিতে চাইলেও টাকা কম হওয়ায় তাকে কার্ড দেয়নি।
৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মহাজন গ্রামের বাসিন্দা ৮৫ বছরের চারুবালা দাস, ৮০ বছরের ভানু সাহা, ভূমিহীন দীপ্ত বিশ্বাসের গর্ভবতী স্ত্রী অন্বেষা বিশ্বাস, ৯নং ওয়ার্ড ঘসিবাড়িয়া গ্রামের ভ্যান চালক তপন পালের স্ত্রী গর্ভবতী পুস্প পাল, একই ওয়ার্ডের কলাগাছি গ্রামের শাক সবজি বিক্রেতা বিধবা আরতি বিশ্বাস (৫০) কার্ড পানননি।
এদিকে ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বর সুজল ঠাকুরের স্ত্রী ইতিকা ঠাকুর ২০১৭-১৮ সালে গর্ভবতী না হলেও স্ত্রীর নামে মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড নেন।
এ বিষয়ে সুজল মেম্বর (০১৭৬৮-৬০৫২৫৩/ ০১৮৭৯-৭৮১৪১৮) বলেন, তার স্ত্রী সে সময় গর্ভবর্তী ছিল। এ কারণে সে কার্ড নিয়েছিল। এছাড়া তিনি তার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন।
নড়াগাতি থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি উত্তম কুমার সাহা (০১৭২৫-৯১৭৭৪৪) বলেন, এ ইউনিয়নে প্রায় ৪শ কার্ড বিতরণে নয়ছয় হয়েছে। এ চক্রটি ফেরী করে কার্ড বিক্রি করছে। যে বেশী টাকা দেয় তারাই কার্ড পায়। এ ধরনের অনিয়ম-দুর্ণীতির যা সঠিক তদন্ত করলেই সত্যতা বেরিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে মাউলি ইউপি চেয়ারম্যান এবং কার্ড-এর তালিকা প্রস্তুত কমিটির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই কার্ড করা হয়েছে। ভুল-ত্রুটি বা দু একটিতে সমস্যা হতে পারে। অনিয়ম-দুর্নীতির কথা যতটা বলছেন ততটা নয়। সুজলের ওয়ার্ডে এসব অভিযোগে বেশী শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
তবে কোনো উপকারভোগিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা ভিত্তিহীন দাবি করেন। ফোন রাখার মুহূর্তে বলেন, নড়াইলে গিয়ে আপনার সাথে দেখা করে সালাম দিয়ে আসব।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রতন হালদার এ প্রতিনিধিকে বলেন, মাউলী ইউনিয়নে কার্ড বিতরণে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর তদন্ত চলছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে বা যাবে তাদের কার্ড বাতিল করা হবে। এসব কার্ড বিতরণে একটি কমিটি থাকে। প্রত্যেক ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান এর সভাপতি থাকেন। কার্ড বিতরণে অনিয়মের সাথে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বররা দায়ী হলে তাদের দায়ি করার ক্ষমতা আমার নেই। গত এক মাস পূর্বে ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুনর রশিদকে বদলি করা হয়েছে। তবে তাকে প্রশাসনিক কারণে বদলি করা হয়েছে বলে জানান।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
